মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গরুর মাংসের দাম বাড়ছে, যা উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সম্প্রতি ডিমের দাম বাড়ার পর, এবার খাদ্য বাজারে এই নতুন ধাক্কা লেগেছে।
বাজারে গরুর মাংসের দাম বাড়ছে প্রায় ৯ শতাংশ, যা ভোক্তাদের জন্য বেশ চিন্তার বিষয়। চলুন, বিস্তারিতভাবে জেনে নেওয়া যাক এই পরিস্থিতির কারণ এবং এর সম্ভাব্য প্রভাব সম্পর্কে।
যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, চলতি বছরের জানুয়ারি মাস থেকে গরুর মাংসের দাম প্রায় ৯ শতাংশ বেড়েছে। বর্তমানে প্রতি পাউন্ড গরুর মাংসের দাম ৯.২৬ ডলারে (বাংলাদেশি মুদ্রায় হিসাব করলে, যা প্রায় ১০০০ টাকার বেশি, যেখানে ১ ডলার = ১১০ টাকা ধরা হয়েছে)।
শুধু তাই নয়, গত এক বছরে গরুর মাংস ও স্টেক-এর দাম যথাক্রমে ১২.৪% এবং ১০.৩% বৃদ্ধি পেয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গরুর মাংসের দাম কমানো ডিমের দাম কমানোর চেয়ে অনেক কঠিন। ওয়েলস ফার্গোর প্রধান কৃষি অর্থনীতিবিদ মাইকেল সোয়ানসন বলেছেন, “গরুর মাংসের বাজার এখনো ‘বন্য পশ্চিমের’ মতো, যেখানে ডিমের বাজার সরবরাহ ও চাহিদার ব্যবস্থাপনার সঙ্গে জড়িত।
দাম বাড়ার পেছনে বেশ কয়েকটি কারণ রয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম প্রধান কারণ হলো গবাদি পশুর সংখ্যা কমে যাওয়া।
আমেরিকান ফার্ম ব্যুরো ফেডারেশন (AFBF) এর তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে গবাদি পশুর সংখ্যা গত ৭৪ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে রয়েছে। খরা পরিস্থিতি এবং গবাদি পশুর খাদ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় অনেক কৃষক এই পেশা থেকে আগ্রহ হারাচ্ছেন।
এছাড়া, গরুর মাংসের চাহিদা একই রকম থাকলেও, সরবরাহ কমে যাওয়ায় দাম বাড়ছে। খাদ্য সরবরাহ খরচ বেড়ে যাওয়ায় অনেক কৃষক লোকসানের শিকার হচ্ছেন।
এর ফলে তাদের মুনাফার পরিমাণও কমে যাচ্ছে।
এই পরিস্থিতিতে ভোক্তাদের কাছে বিকল্প হিসেবে আমদানি করা মাংসের চাহিদা বাড়ছে। আর্জেন্টিনা, অস্ট্রেলিয়া এবং ব্রাজিলের মতো দেশ থেকে আসা গরুর মাংস এখন যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে প্রায় ৮% পর্যন্ত জায়গা করে নিয়েছে।
একই সময়ে গরুর মাংসের রপ্তানি কমেছে, যা গত বছরের তুলনায় মে মাসে ২২% হ্রাস পেয়েছে।
তবে, ভোক্তাদের মধ্যে গরুর মাংসের চাহিদা এখনো বেশ ভালো রয়েছে। ওয়ালমার্ট তাদের নিজস্ব গরুর মাংস প্রক্রিয়াকরণ কেন্দ্র চালু করেছে, যা সরাসরি সরবরাহকারীদের সঙ্গে কাজ করে খরচ কমাতে সহায়তা করবে।
ওয়ালমার্টের খাদ্য বিষয়ক নির্বাহী ভাইস প্রেসিডেন্ট জন ল্যানি জানিয়েছেন, এই পদক্ষেপ তাদের গ্রাহকদের জন্য আরও বেশি গুণমান এবং স্বচ্ছতা নিশ্চিত করবে।
তাহলে, গরুর মাংসের দাম কবে কমতে পারে? এ বিষয়ে এএফবিএফ-এর অর্থনীতিবিদ বার্ন্ট নেলসন জানিয়েছেন, ভোক্তাদের চাহিদার উপর অনেক কিছু নির্ভর করে।
যদি ভোক্তাদের আর্থিক অবস্থার উন্নতি হয়, তাহলে মাংসের চাহিদা বাড়বে এবং দামও স্থিতিশীল হতে পারে। কিন্তু যদি মানুষের আর্থিক অবস্থা খারাপ হতে থাকে, তাহলে গরুর মাংসের চাহিদা কমে যেতে পারে, যা দামের উপর প্রভাব ফেলতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এই মুহূর্তে দাম বৃদ্ধির সর্বোচ্চ সীমা ছুঁয়ে ফেলেছে। এখন দেখার বিষয়, বাজারের এই পরিস্থিতি কিভাবে পরিবর্তন হয় এবং ভোক্তারা কিভাবে এর সঙ্গে নিজেদের মানিয়ে নেয়।
এই মুহূর্তে, যুক্তরাষ্ট্রের গরুর মাংসের দাম বৃদ্ধির ফলে বাংলাদেশের বাজারে সরাসরি কোনো প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা নেই। তবে, আন্তর্জাতিক বাজারে খাদ্যপণ্যের দামের পরিবর্তন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, যা বিভিন্ন দেশের বাজারের উপর প্রভাব ফেলতে পারে।
**অস্বীকৃতি:** এই নিবন্ধটি শুধুমাত্র তথ্য প্রদানের উদ্দেশ্যে লেখা হয়েছে এবং এর বিষয়বস্তু কোনোভাবেই বাংলাদেশে গরুর মাংসের দামের পরিবর্তনকে নির্দেশ করে না।
তথ্য সূত্র: CNN