ফর্মুলা ওয়ান (Formula One) রেসিং-এর জগতে, গাড়ির গতি আর জীবনের ঝুঁকি সবসময়ই যেন হাত ধরাধরি করে চলে। তেমনই এক মর্মান্তিক ঘটনার সাক্ষী ছিলেন ব্রিটিশ রেসিং ড্রাইভার মার্টিন ডনেলি।
১৯৯০ সালের স্প্যানিশ গ্রাঁ প্রি-তে (Spanish Grand Prix) এক ভয়াবহ দুর্ঘটনার শিকার হন তিনি। সম্প্রতি মুক্তিপ্রাপ্ত সিনেমা ‘এফ ওয়ান দ্য মুভি’ (F1 the Movie)- তে সেই দুর্ঘটনার দৃশ্য পুনরায় তৈরি করা হয়েছে, যা ডনলিকে ফিরিয়ে নিয়ে গেছে তাঁর জীবনের সবচেয়ে কঠিন সময়ে।
মার্টিন ডনেলি একসময় ছিলেন উজ্জ্বল ভবিষ্যতের অধিকারী একজন রেসিং ড্রাইভার। লোটাস ফর্মুলা ওয়ান টিমের হয়ে তিনি রেস করতেন।
কিন্তু স্প্যানিশ গ্রাঁ প্রি–এর এক প্রশিক্ষণ পর্বে গাড়ির নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেন তিনি। ঘণ্টায় প্রায় ১৬০ মাইল বেগে ছুটে আসা তাঁর গাড়িটি আঘাত হানে ব্যারিয়ারে।
মারাত্মক এই দুর্ঘটনায় তাঁর জীবন সংকটাপন্ন হয়ে ওঠে।
দুর্ঘটনার স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে ডনেলি জানান, তাঁর কিছুই মনে নেই।
তাঁর ভাষায়, “আমার গাড়িটা যেন একটা ববস্লেজে (bobsled) পরিণত হয়েছিল, যার কোনো স্টিয়ারিং বা ব্রেকিং কন্ট্রোল ছিল না।
কার্বন ফাইবারের কাঠামো ভেঙে যায় এবং তিনি ছিটকে পড়েন প্রায় ৬০ মিটার দূরে।
মারাত্মক আহত অবস্থায় ট্র্যাকের ওপরই তিনি ছিলেন।
চিকিৎসকেরা এসে তাঁকে মৃতপ্রায় অবস্থায় পান।
সৌভাগ্যবশত, ডনেলি প্রাণে বেঁচে যান, যদিও তাঁর ক্যারিয়ারে এর গভীর প্রভাব পড়ে।
মারাত্মক আঘাতের কারণে তিনি দীর্ঘদিন ফর্মুলা ওয়ানে ফিরতে পারেননি। তবে, তাঁর সেই দুর্ঘটনার দৃশ্য সিনেমার জন্য নতুন করে তৈরি করা হয়।
সিনেমাটি তৈরির সময়, নির্মাতারা ডনলির দুর্ঘটনার ফুটেজ ব্যবহার করেন।
সিনেমার অভিনেতা ব্র্যাড পিট-কে (Brad Pitt) তিনি পরামর্শ দিয়েছিলেন কীভাবে গাড়িতে ওঠা এবং নামা যায়।
ডনলি জানান, ব্র্যাড পিট-এর সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা তাঁর কাছে ছিল “অবাস্তব”।
ডনলি সবসময়ই রেসিংয়ের বিপদ সম্পর্কে সচেতন ছিলেন।
তিনি মনে করেন, “যদি আপনার মনে দুর্ঘটনার ভয় থাকে, তবে আপনি ১০০ শতাংশ মনোযোগ দিতে পারবেন না।”
এই সিনেমায় তাঁর জীবনের ঘটনা তুলে ধরা হয়েছে, যা তাঁকে একদিকে সম্মানিত করেছে, অন্যদিকে অতীতের সেই কঠিন দিনগুলোর কথা মনে করিয়ে দিয়েছে।
তাঁর মতে, এই সিনেমা তাঁকে বুঝিয়ে দিয়েছে, “আমি সম্ভবত একজন বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হতে পারতাম, কিন্তু বাস্তবে আমি এখনো সবার সাথে কথা বলছি।
আমার বন্ধু সেন্না (Ayrton Senna) মারা গেছে।”
ডনলির জীবন যুদ্ধের গল্প, বেঁচে থাকার অদম্য ইচ্ছাশক্তি এবং জীবনের প্রতি তাঁর গভীর উপলব্ধির কথাই যেন মনে করিয়ে দেয়।
তথ্য সূত্র: CNN