নির্বাচন ইতিহাস বদলের চেষ্টা, তোলপাড় তুলসি গাড্ডার!

**মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ২০১৬ সালের নির্বাচন: ট্রাম্প ও গ্যাবার্ডের বিতর্কিত ইতিহাসের পুনর্লিখনের চেষ্টা**

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ২০১৬ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রাশিয়ার হস্তক্ষেপ নিয়ে নতুন করে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও রিপাবলিকান দলের সদস্য তুলসী গ্যাবার্ড এই নির্বাচনের ইতিহাস নতুন করে লেখার চেষ্টা করছেন।

তাদের অভিযোগ, তৎকালীন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ডোনাল্ড ট্রাম্পকে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য একটি চক্রান্তের অংশ হিসেবে মিথ্যা গোয়েন্দা তথ্য তৈরি করেছিলেন। তবে, এই অভিযোগের স্বপক্ষে কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।

বরং, বিভিন্ন তদন্তে রাশিয়ার হস্তক্ষেপের প্রমাণ পাওয়া গেছে, যা ট্রাম্প ও গ্যাবার্ডের দাবির বিপরীত।

গ্যাবার্ড ও ট্রাম্পের ভাষ্য অনুযায়ী, ২০১৬ সালের নির্বাচনে রাশিয়ার হস্তক্ষেপ এবং ট্রাম্পের প্রতি তাদের সমর্থন—এ সবই ছিল ওবামার সাজানো একটি ষড়যন্ত্র। তাদের মতে, ওবামা শুরু থেকেই ট্রাম্পকে দুর্বল করতে চেয়েছিলেন।

এমনকি, তারা ওবামার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগও এনেছেন, যদিও এর কোনো প্রমাণ তারা হাজির করতে পারেননি।

অন্যদিকে, ওবামা এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন এবং গ্যাবার্ডের দাবিকে ভিত্তিহীন বলে উল্লেখ করেছেন।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো এবং বিভিন্ন তদন্তকারী দলের অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০১৬ সালের নির্বাচনে রাশিয়া হস্তক্ষেপ করেছিল। তারা ডেমোক্রেটদের ই-মেইল হ্যাক করে এবং উইকিলিকসের মাধ্যমে তা প্রকাশ করে।

এছাড়া, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও তারা অপপ্রচার চালিয়েছিল, যার মূল উদ্দেশ্য ছিল হিলারি ক্লিনটনের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করা এবং নির্বাচনে ট্রাম্পকে জয়ী হতে সহায়তা করা।

তবে, গ্যাবার্ডের দাবি কতটা সঠিক? তার দাবির সঙ্গে বাস্তবতার অনেক ফারাক রয়েছে। তিনি কিছু গোপন নথি প্রকাশ করেছেন, যার মাধ্যমে প্রমাণ করতে চেয়েছেন যে নির্বাচনের ফলাফলে রাশিয়ার হস্তক্ষেপ হয়নি।

কিন্তু, গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর মূল্যায়নে এমনটা বলা হয়নি। বরং, তারা বলেছে, রাশিয়া ভোটারদের প্রভাবিত করার চেষ্টা করেছে।

গ্যাবার্ড আরও দাবি করেন যে, ২০১৬ সালের ৮ই ডিসেম্বরের একটি দৈনিক প্রতিবেদনে উল্লেখ ছিল, রাশিয়ার কর্মীরা নির্বাচনের ফলাফলে প্রভাব ফেলেনি। এর পরের দিনই ওবামা প্রশাসন নতুন করে মূল্যায়নের জন্য উদ্যোগ নেয়, যাতে নির্বাচনের ফলকে ‘হ্যাক’ করার অভিযোগ আনা যায়।

কিন্তু, সিনেট ইন্টেলিজেন্স কমিটির তথ্য অনুযায়ী, ওবামা ৬ই ডিসেম্বর তৎকালীন জাতীয় গোয়েন্দা পরিচালক জেমস ক্ল্যাপারকে রাশিয়ার হস্তক্ষেপ নিয়ে একটি প্রতিবেদন তৈরির নির্দেশ দেন।

যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন তদন্তে ২০১৬ সালের নির্বাচনে রাশিয়ার হস্তক্ষেপের বিষয়টি উঠে এসেছে। সিনেট ইন্টেলিজেন্স কমিটি তাদের তদন্তে রাশিয়ার হস্তক্ষেপের বিষয়টি সমর্থন করে।

এছাড়াও, বিশেষ কৌঁসুলি রবার্ট মুলার এবং জন ডুরহামও তাদের তদন্তে রাশিয়ার ভূমিকার প্রমাণ পেয়েছেন।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্প ও তার মিত্ররা ২০১৬ সালের নির্বাচনের সঙ্গে রাশিয়ার যোগসূত্রকে অস্বীকার করার চেষ্টা করছেন। তারা বিভিন্ন তদন্তের ভুলত্রুটি তুলে ধরছেন এবং বিষয়টিকে ‘মিথ্যা’ প্রমাণ করার চেষ্টা করছেন।

কিন্তু, বিভিন্ন তদন্তে রাশিয়ার হস্তক্ষেপের বিষয়টি প্রমাণিত হয়েছে।

মোটকথা, ট্রাম্প ও গ্যাবার্ডের ইতিহাস পুনর্লিখনের চেষ্টা সত্ত্বেও, ২০১৬ সালের নির্বাচনে রাশিয়ার হস্তক্ষেপের বিষয়টি বিভিন্ন প্রমাণ দ্বারা সমর্থিত।

তথ্য সূত্র: CNN

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *