আলোর বিভ্রাটে দিশেহারা কচ্ছপের দল, গভীর সংকটে উপকূল!

যুক্তরাষ্ট্রে, বিশেষ করে জর্জিয়া রাজ্যের উপকূলীয় অঞ্চলে, আলো দূষণের কারণে সমুদ্রের কচ্ছপদের জীবন এখন চরম হুমকির মুখে। মহাসড়কের তীব্র আলোয় দিশেহারা হয়ে কচ্ছপের বাচ্চাগুলো সমুদ্রের বদলে স্থলভাগের দিকে চলে যাচ্ছে, যা তাদের জীবনকে আরও ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলছে।

পরিবেশবিদরা বলছেন, এই সমস্যা সমাধানে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া না হলে, উপকূলের বাস্তুতন্ত্রে মারাত্মক প্রভাব পড়বে।

জর্জিয়ার উপকূল বরাবর, বিশেষ করে লিটল সেন্ট সিমন্স দ্বীপ এবং সাপেলা দ্বীপের কাছাকাছি এলাকাগুলোতে এই সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে।

সম্প্রতি, ব্যস্ততম আন্তঃরাজ্য মহাসড়ক আই-৯৫ এর পাশে একটি সুবিশাল ‘বি-ইজ’ (Buc-ee’s) নামে একটি বিশাল আকারের ভ্রমণ কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এই কেন্দ্রের আলো এবং সড়কের উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন বাতিগুলো রাতের বেলা তীব্র আলো ছড়াচ্ছে, যা কচ্ছপের ডিম ফুটে বাচ্চা বের হওয়ার পর তাদের দিক নির্দেশনার স্বাভাবিক প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করছে।

সাধারণত, সমুদ্রের কাছাকাছি বালুকাময় সৈকতে ডিম পাড়ে কচ্ছপেরা। ডিম ফুটে বাচ্চা বের হওয়ার পর, তারা চাঁদের আলো অনুসরণ করে সমুদ্রের দিকে যায়। কিন্তু কৃত্রিম আলোর কারণে, বিশেষ করে রাস্তার বাতিগুলোর আলো তাদের বিভ্রান্ত করে এবং তারা স্থলভাগের দিকে চলে আসে।

এর ফলে, বাচ্চা কচ্ছপগুলো হয় খাদ্যের অভাবে মারা যায়, নয়তো শিকারীদের কবলে পরে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই ধরনের ঘটনা কচ্ছপ প্রজাতি, বিশেষ করে লগারহেড কচ্ছপের (Loggerhead sea turtle) টিকে থাকার জন্য মারাত্মক হুমকি স্বরূপ।

স্থানীয় পরিবেশবিদ ক্যাথরিন রিডলি জানিয়েছেন, “আলোর তীব্রতা এত বেশি যে, তা সমুদ্র সৈকতে পর্যন্ত দেখা যায়। এর ফলে কচ্ছপের বাচ্চারা দিক হারিয়ে ফেলে এবং বিপদগ্রস্ত হয়।” জর্জিয়া রাজ্যের প্রাকৃতিক সম্পদ বিভাগ জানিয়েছে, চলতি বছর প্রায় ১১ শতাংশ কচ্ছপের বাসা থেকে ১০টির বেশি বাচ্চা ভুল দিকে গিয়েছিল।

সাধারণত, একটি লগারহেড কচ্ছপের একটি বাসায় প্রায় ১২০টি বাচ্চা থাকে।

শুধু বাচ্চা কচ্ছপ নয়, এই আলো নারীদেরও প্রভাবিত করে। আলোর কারণে অনেক সময় স্ত্রী কচ্ছপেরা ডিম পাড়ার জন্য নিরাপদ স্থান খুঁজে পায় না।

এমন পরিস্থিতিতে কচ্ছপের প্রজনন প্রক্রিয়াও ব্যাহত হয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যদি দ্রুত ব্যবস্থা না নেওয়া হয়, তাহলে এই অঞ্চলের কচ্ছপ প্রজাতি বিলুপ্ত হওয়ার ঝুঁকিতে পড়বে।

বর্তমানে, স্থানীয় প্রশাসন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করছে। তারা আলোর তীব্রতা কমানোর জন্য ব্যবস্থা গ্রহণের কথা ভাবছে।

তবে, এখনই কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। পরিবেশকর্মীরা দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য আবেদন জানিয়েছেন, যাতে কচ্ছপের বাচাঁনো যায়।

এই ঘটনা আমাদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা বহন করে। বাংলাদেশেও সমুদ্র উপকূলীয় অঞ্চলে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ চলছে। সেই উন্নয়নের ফলে যাতে পরিবেশের ক্ষতি না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখা জরুরি।

কচ্ছপসহ অন্যান্য বন্যপ্রাণীর আবাসস্থল রক্ষা করা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। সুন্দরবন অঞ্চলের বাঘ কিংবা অন্যান্য বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে আমরা যেমন সচেতন, তেমনি উপকূলীয় অঞ্চলের পরিবেশ সুরক্ষায় আমাদের আরও বেশি মনোযোগী হতে হবে।

তথ্যসূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *