গাজায় ইসরায়েলের ‘সাময়িক বিরতি’, ক্ষুধার্তদের জন্য কতটা আশা?

গাজায় মানবিক সহায়তা বাড়ানোর উদ্দেশ্যে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী সেখানকার তিনটি জনবহুল এলাকায় দৈনিক ১০ ঘণ্টার জন্য যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করেছে। রবিবার থেকে এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়েছে।

গাজা সিটি, দেইর আল-বালাহ এবং মুওয়াসি—এই তিনটি এলাকায় প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত এই ‘কৌশলগত বিরতি’ চলবে, যা পরবর্তীতেও বহাল থাকতে পারে। খবরটি জানিয়েছে আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা এপি।

ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, তারা গাজায় ত্রাণ বিতরণের জন্য নিরাপদ পথ তৈরি করবে এবং এরই মধ্যে আটা, চিনি ও টিনজাত খাবারসহ ত্রাণ সামগ্রী সরবরাহ করা হয়েছে। তবে, জাতিসংঘের খাদ্য বিষয়ক সংস্থা এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানালেও গাজায় সকলের কাছে ত্রাণ পৌঁছানোর জন্য একটি বৃহত্তর যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছে।

গাজায় খাদ্য সংকটের আশঙ্কার মধ্যে ইসরায়েলের এই পদক্ষেপের কারণ হিসেবে আন্তর্জাতিক মহলের চাপকে অনেকে দায়ী করছেন। গত ২১ মাস ধরে চলা এই যুদ্ধে ইসরায়েলের কার্যক্রম নিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ইতোমধ্যে অনেক সমালোচনা হয়েছে। গাজায় অপুষ্টিতে ভোগা শিশুদের ছবি বিশ্বজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে, যা ইসরায়েলের ঘনিষ্ঠ মিত্রদেরও উদ্বেগে ফেলেছে।

অন্যদিকে, হামাস এই মানবিক বিরতিকে সন্দেহের চোখে দেখছে। সংগঠনটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ইসরায়েলের এই পদক্ষেপ জীবন বাঁচানোর পরিবর্তে আন্তর্জাতিক সমর্থন আদায়ের চেষ্টা। হামাসের এক শীর্ষ নেতা মাহমুদ মারদাউয়ি একে ফিলিস্তিনিদের ক্ষুধার্ত অবস্থার স্বীকৃতি হিসেবে বর্ণনা করেছেন।

সংবাদ সংস্থা এপির তথ্য অনুযায়ী, যুদ্ধবিরতির আগে গাজায় পৃথক হামলায় অন্তত ২৭ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। গাজার স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, নিহতদের মধ্যে নারী ও শিশুও রয়েছে।

উল্লেখ্য, গত বছরের অক্টোবর মাসে হামাসের হামলার পর ইসরায়েল গাজায় প্রতিশোধমূলক অভিযান শুরু করে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, ইসরায়েলি হামলায় এখন পর্যন্ত প্রায় ৫৯,৭০০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। নিহতদের মধ্যে অর্ধেকের বেশি নারী ও শিশু।

তবে, এই হিসাবের সত্যতা যাচাই করা কঠিন। অন্যদিকে, ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের দাবি, হামাসের হামলায় নিহত হয়েছে ১,২০০ জন, যাদের অধিকাংশই বেসামরিক নাগরিক।

এখনও হামাসের হাতে প্রায় ৫০ জন জিম্মি রয়েছে। যুদ্ধ শুরুর পর থেকে ইসরায়েল গাজায় ত্রাণ সরবরাহে নানাভাবে বিধিনিষেধ আরোপ করেছে।

জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, গাজায় প্রতিদিন গড়ে ৫০০ থেকে ৬০০ ট্রাক ত্রাণ প্রয়োজন, কিন্তু বর্তমানে সেখানে প্রতিদিন ৬৯টির বেশি ত্রাণবাহী ট্রাক প্রবেশ করতে পারছে না। জাতিসংঘের অভিযোগ, ক্ষুধার্ত মানুষের কারণে অনেক ত্রাণ বিতরণ করা সম্ভব হচ্ছে না।

জাতিসংঘের এই অভিযোগের বিপরীতে ইসরায়েল ‘গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন’-এর মাধ্যমে ত্রাণ বিতরণের ব্যবস্থা করেছে। তবে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক অফিসের তথ্য অনুযায়ী, মে মাস থেকে ইসরায়েলি বাহিনীর গুলিতে এই ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রগুলোর কাছে খাদ্য সংগ্রহের জন্য আসা ১,০০০ জনের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে।

যুদ্ধবিরতির আলোচনা ভেস্তে যাওয়ার জন্য ইসরায়েল ও হামাস উভয় পক্ষই একে অপরের ওপর দোষ চাপিয়েছে। ইসরায়েল জানিয়েছে, হামাস আত্মসমর্পণ না করলে, অস্ত্র সমর্পণ ও নির্বাসনে যেতে রাজি না হলে তারা যুদ্ধ বন্ধ করবে না।

তথ্য সূত্র: এপি

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *