শিরোনাম: বিশ্বজুড়ে বাড়ছে পোষ্যদের ত্যাগ, কঠিন অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে মানুষ
বৈশ্বিক অর্থনীতির অস্থিরতা আজ একটি উদ্বেগের বিষয়। একদিকে জীবনযাত্রার ব্যয়বৃদ্ধি, অন্যদিকে অনেকেরই আয় কমে যাওয়া—সব মিলিয়ে সংকট তৈরি হয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে, মানুষজন তাদের প্রয়োজনীয় চাহিদা মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে। আর এর প্রভাব পড়ছে সমাজের প্রতিটি স্তরে।
সম্প্রতি, বিশ্বজুড়ে একটি হৃদয়বিদারক চিত্র দেখা যাচ্ছে, যেখানে মানুষজন তাদের পোষা প্রাণী, বিশেষ করে কুকুর ও বিড়ালদের ত্যাগ করতে বাধ্য হচ্ছে।
পশ্চিমা বিশ্বে, পোষ্য প্রাণীর প্রতি মানুষের ভালোবাসার একটি বিশেষ দিক রয়েছে। অনেক পরিবারে, তারা পরিবারের সদস্যের মতোই স্থান পায়।
কিন্তু অর্থনৈতিক চাপ যখন বাড়ে, তখন এই সম্পর্কগুলোতেও ফাটল ধরে। সম্প্রতি, বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে পোষা প্রাণী ত্যাগ করার ঘটনা উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে।
এর কারণ হিসেবে উঠে আসছে বিভিন্ন কারণ।
যুক্তরাষ্ট্রের একটি ঘটনা দেখা যাক। সেখানকার একটি প্রাণী আশ্রয়কেন্দ্রের মুখপাত্র জানান, গত বছরের তুলনায় এ বছর মালিকরা তাদের পোষা প্রাণী ত্যাগ করার হার প্রায় ৪৩ শতাংশ বেড়েছে।
এর মূল কারণ হিসেবে তারা চিহ্নিত করেছেন, জীবনযাত্রার ক্রমবর্ধমান ব্যয়। পোষা প্রাণীর খাদ্য, স্বাস্থ্যসেবা, বাসস্থান—সবকিছুই এখন বেশ ব্যয়বহুল।
অনেক ক্ষেত্রে, মালিকরা তাদের পোষা প্রাণীর প্রয়োজনীয় খরচ বহন করতে পারছেন না।
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ হলো, আবাসনের অভাব। অনেক শহরে, বিশেষ করে যেখানে ভাড়ার খরচ বেশি, সেখানে পোষা প্রাণী রাখার মতো উপযুক্ত বাসস্থান খুঁজে পাওয়া কঠিন।
এমন পরিস্থিতিতে, অনেক মালিক বাধ্য হয়ে তাদের প্রিয় পোষ্যকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হচ্ছেন।
মিনেসোটার একটি আশ্রয়কেন্দ্রের কর্মীরা জানিয়েছেন, তারা প্রতিদিন এমন অনেক আবেদন পান যেখানে মানুষজন তাদের পোষা প্রাণী ত্যাগ করতে চান।
কারণ হিসেবে তারা বলছেন, হয়তো তাদের অন্য কোথাও চলে যেতে হচ্ছে, যেখানে পোষা প্রাণী রাখার অনুমতি নেই।
এই পরিস্থিতি তাদের জন্য খুবই কষ্টের।
এছাড়াও, পশুচিকিৎসকদের অভাব এবং চিকিৎসা খরচ বৃদ্ধিও একটি বড় সমস্যা। অনেক সময়, পোষা প্রাণীর অসুস্থতা হলে চিকিৎসা করানোর সামর্থ্য থাকে না অনেকের।
ফলে, তাদের ত্যাগ করা ছাড়া আর কোনো উপায় থাকে না।
যদিও বাংলাদেশে পোষা প্রাণী রাখার সংস্কৃতি পশ্চিমা বিশ্বের মতো ব্যাপক নয়, তবে এখানেও কিছু মানুষজন কুকুর, বিড়াল এবং অন্যান্য প্রাণী পালন করে থাকেন।
যদিও বাংলাদেশে এই ধরনের ঘটনা এখনো ততটা সাধারণ নয়, তবে বিশ্ব অর্থনীতির এই খারাপ পরিস্থিতিতে, আমাদের দেশেও এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে।
মানুষের অর্থনৈতিক চাপ বাড়লে, তারাও হয়তো তাদের পোষা প্রাণীদের ত্যাগ করতে বাধ্য হতে পারেন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই পরিস্থিতিতে পশুপ্রেমী এবং সমাজের অন্যান্য মানুষের এগিয়ে আসা উচিত।
আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে সহায়তা করা, পোষা প্রাণীদের খাদ্য ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করা, এবং মানুষকে সচেতন করা—এগুলো সবই গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
আমাদের মনে রাখতে হবে, একটি প্রাণী ত্যাগ করা খুবই কষ্টের এবং মানবিক সম্পর্ক রক্ষার জন্য এটি একটি কঠিন সিদ্ধান্ত।
বর্তমান পরিস্থিতিতে, অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখা এবং সমাজের দুর্বল শ্রেণির পাশে দাঁড়ানো অত্যন্ত জরুরি।
একইসাথে, পশুদের প্রতি সহানুভূতি এবং তাদের কল্যাণে কাজ করা আমাদের সকলের দায়িত্ব।
তথ্য সূত্র: সিএনএন