ট্রাম্পের স্কটল্যান্ড যাত্রা: ব্যবসার নামে খেলা?

ডোনাল্ড ট্রাম্পের স্কটল্যান্ড সফর: প্রেসিডেন্টের ব্যবসার সাথে সরকারি দায়িত্বের মিশ্রণ নিয়ে বিতর্ক।

যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বর্তমানে স্কটল্যান্ড সফরে রয়েছেন। এই সফরে তিনি তার মালিকানাধীন দুটি গলফ কোর্স, ট্রাম্প টার্নবেরি এবং অ্যাবারডিনশায়ারের ট্রাম্প ইন্টারন্যাশনাল স্কটল্যান্ড পরিদর্শন করবেন। এছাড়াও, সেখানে দ্বিতীয় একটি ১৮-হোল গলফ কোর্সের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানেও তার যোগ দেওয়ার কথা রয়েছে।

হোয়াইট হাউস এটিকে ‘কাজের সফর’ হিসেবে বর্ণনা করলেও, এই সফর নিয়ে বিতর্ক দানা বেঁধেছে। কারণ, অভিযোগ উঠেছে, প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালনের সময় ট্রাম্প তার ব্যক্তিগত ব্যবসার প্রসার ঘটাচ্ছেন। তার এই সফরে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রধান উরসুলা ভন ডের লিয়েনের সঙ্গে বৈঠকেরও সম্ভাবনা রয়েছে।

ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে নিজের ব্যবসার সুযোগ তৈরি করেছেন। এর আগে তার ওয়াশিংটন ডিসির হোটেল বিদেশি প্রতিনিধিদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল, যেখানে তারা অর্থ খরচ করতেন। এমনকি, ২০১৯ সালে তিনি ফ্লোরিডার ডোর‍্যালে জি-৭ সম্মেলন করার পরিকল্পনা বাতিল করতে বাধ্য হয়েছিলেন।

তবে দ্বিতীয় মেয়াদে ট্রাম্প বিদেশি সরকার ও ব্যক্তি বিশেষের কাছ থেকে পাওয়া উপহার গ্রহণে আরও বেশি আগ্রহী হয়েছেন বলে শোনা যায়। সমালোচকদের মতে, কাতার সরকারের দেওয়া একটি বিলাসবহুল ৭৪৭ বিমান উপহার হিসেবে গ্রহণ ছিল এর অন্যতম উদাহরণ। এই বিমানটি তার প্রেসিডেন্সিয়াল লাইব্রেরির অংশ হওয়ার কথা রয়েছে। যদিও, কাতার সরকারের কাছ থেকে উপহার নেওয়ার বিষয়টি নিয়ে অনেক সমালোচনা হয়েছে। কারণ, সমালোচকদের ধারণা ছিল, এর মাধ্যমে কাতার ট্রাম্পের কাছ থেকে সুবিধা আদায়ের চেষ্টা করছে। এমনকি, যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের ‘ফরেন এমোলিউমেন্টস ক্লজ’-এরও সম্ভাব্য লঙ্ঘন হতে পারে এটি। এই ধারায় ফেডারেল কর্মকর্তাদের বিদেশি সরকার থেকে কোনো উপহার নেওয়ার ক্ষেত্রে কংগ্রেসের অনুমোদন নেওয়ার কথা বলা হয়েছে।

ট্রাম্পের বিভিন্ন ব্যবসায়িক উদ্যোগে প্রেসিডেন্টের পদকে কাজে লাগানোর অভিযোগ উঠেছে। তার ব্যবসাগুলোর মধ্যে রয়েছে ক্রিপ্টোকারেন্সি, রিয়েল এস্টেট এবং বিভিন্ন ব্র্যান্ডের পণ্য বিক্রি। সম্প্রতি প্রকাশিত নথিপত্র অনুযায়ী, তিনি ‘লি গ্রিনউডের ‘গড ব্লেস দ্য ইউএসএ’ বাইবেল’ বিক্রি করে ১৩ লাখ ডলার, ট্রাম্পের স্নিকার ও সুগন্ধি থেকে ২৫ লাখ ডলার, ‘ট্রাম্প ওয়াচ’ বিক্রি করে ২৮ লাখ ডলার এবং ‘৪৫’ গিটার বিক্রি করে ১০ লাখ ডলারের বেশি আয় করেছেন।

এছাড়াও, তার মালিকানাধীন ‘ট্রাম্প মোবাইল’ নামে একটি ওয়্যারলেস সার্ভিসও রয়েছে, যেখানে মাসিক ভিত্তিতে বিভিন্ন প্ল্যান পাওয়া যায় এবং ৪৯৯ ডলারে একটি স্মার্টফোনও রয়েছে।

মধ্যপ্রাচ্যেও ট্রাম্প পরিবারের ব্যবসা বাড়ছে, যা নিয়ে ইতোমধ্যে অনেক আলোচনা হয়েছে। ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদের তুলনায় দ্বিতীয় মেয়াদে এই অঞ্চলে তাদের ব্যবসা বেড়েছে কয়েকগুণ। সম্প্রতি কাতারভিত্তিক একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ট্রাম্পের গলফ কোর্স নির্মাণের চুক্তি হয়েছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে ব্যবসার প্রসার আগের চেয়ে অনেক বেশি হয়েছে। তারা বলছেন, তিনি হোয়াইট হাউসের ক্ষমতা ব্যবহার করে নিজের এবং পরিবারের সুবিধা করছেন।

তবে হোয়াইট হাউস বরাবরই ট্রাম্পের ব্যবসায়িক স্বার্থ এবং প্রেসিডেন্ট পদের মধ্যে কোনো সংঘাতের অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *