আতঙ্কের স্মৃতি! আলঝাইমার্স রোগীদের জন্য নতুন আশা, গবেষণায় চমক!

শিরোনাম: জীবনযাত্রার পরিবর্তনে আলঝাইমার্স রোগীদের জন্য নতুন আশা, গবেষণায় মিলল ইতিবাচক ফল

সাম্প্রতিক এক গবেষণায় জানা গেছে, জীবনযাত্রায় কিছু পরিবর্তনের মাধ্যমে আলঝাইমার্স (Alzheimer’s) রোগের প্রাথমিক পর্যায়ে আক্রান্ত রোগীদের স্মৃতিশক্তি ও মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটানো সম্ভব। গবেষণাটি পরিচালনা করেছেন ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. ডিন অর্নিশ।

তাঁর তত্ত্বাবধানে পরিচালিত এই গবেষণায় খাদ্যাভ্যাস, ব্যায়াম, মানসিক চাপ কমানো এবং সামাজিক সম্পর্ক—এই বিষয়গুলোর ওপর জোর দেওয়া হয়েছে।

গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক রোগীর স্মৃতিশক্তি, বিচারবুদ্ধি এবং সমস্যা সমাধানের ক্ষমতার উন্নতি হয়েছে। এমনকি, তাঁদের দৈনন্দিন কাজকর্ম, শখের প্রতি মনোযোগ এবং ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যবিধির ক্ষেত্রেও ইতিবাচক পরিবর্তন দেখা গেছে।

গবেষণায় অংশগ্রহণকারী রোগীদের মধ্যে প্রায় ৮৩ শতাংশ তাঁদের মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি করেছেন অথবা তাঁদের স্মৃতিশক্তির অবনতি রোধ করতে সক্ষম হয়েছেন।

এই গবেষণার মূল বিষয় ছিল, রোগীদের খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনা। তাঁদের প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় সবজি, ফল, শস্য এবং স্বাস্থ্যকর বীজ অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল।

চিনি, অ্যালকোহল এবং প্রক্রিয়াজাত খাবার সম্পূর্ণরূপে বাদ দেওয়া হয়। খাবারের পাশাপাশি, রোগীদের নিয়মিত শরীরচর্চা, মানসিক চাপ কমানোর কৌশল এবং সামাজিক সমর্থন বাড়ানোর জন্য উৎসাহিত করা হয়েছে।

গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে কেউ কেউ কঠোর নিরামিষ খাদ্য গ্রহণ করেছেন, প্রতিদিন নিয়মিত শরীরচর্চা করেছেন, মানসিক চাপ কমানোর বিভিন্ন পদ্ধতি অনুশীলন করেছেন এবং অনলাইন সাপোর্ট গ্রুপে অংশ নিয়েছেন।

তাঁদের জন্য দৈনিক মাল্টিভিটামিন, ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, ভিটামিন সি ও বি১২, ম্যাগনেসিয়াম এবং প্রোবায়োটিক সাপ্লিমেন্ট সরবরাহ করা হয়েছিল।

ড. অর্নিশ এই গবেষণার ফল নিয়ে বলেন, “আলঝাইমার্স রোগীদের চিকিৎসার ক্ষেত্রে জীবনযাত্রার পরিবর্তন একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হতে পারে। আমাদের গবেষণায় দেখা গেছে, জীবনযাত্রার পরিবর্তনের মাধ্যমে রোগের অগ্রগতি ধীর করা বা এমনকি কিছু ক্ষেত্রে রোগীদের অবস্থার উন্নতি করাও সম্ভব।”

গবেষণায় অংশগ্রহণকারী একজন রোগী, যিনি আলঝাইমার্স রোগের কারণে স্মৃতিশক্তি হারাতে শুরু করেছিলেন, তিনি জানান, এই পরিবর্তনের ফলে তিনি ধীরে ধীরে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে শুরু করেছেন। তিনি বই পড়তে এবং হিসাব মেলাতে পুনরায় সক্ষম হয়েছেন।

তবে, এই গবেষণা এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা সীমিত হওয়ায়, গবেষকরা বলছেন, বৃহত্তর জনগোষ্ঠীকে অন্তর্ভুক্ত করে আরও বিস্তারিত গবেষণা প্রয়োজন।

তা সত্ত্বেও, এই গবেষণা আলঝাইমার্স রোগীদের জন্য নতুন আশা জাগিয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, আলঝাইমার্স রোগীদের জন্য ওষুধ এবং চিকিৎসার পাশাপাশি জীবনযাত্রার পরিবর্তন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন, নিয়মিত শরীরচর্চা, মানসিক চাপ কমানো এবং সামাজিক সমর্থন—এগুলো সবই মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সহায়ক।

বাংলাদেশেও বয়স্ক মানুষের সংখ্যা বাড়ছে এবং এর সঙ্গে আলঝাইমার্স রোগীর সংখ্যাও ধীরে ধীরে বাড়ছে। আমাদের দেশের মানুষের খাদ্যাভ্যাস এবং জীবনযাত্রার ধরনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে এই ধরনের গবেষণা পরিচালনা করা হলে তা নিঃসন্দেহে গুরুত্বপূর্ণ হবে।

এই বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং রোগীদের জন্য প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদানের জন্য সরকার ও স্বাস্থ্য সংস্থাগুলোর আরও বেশি উদ্যোগ নেওয়া উচিত।

তথ্যসূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *