১লা আগস্টের শুল্ক: ব্যবসায়ীদের ভবিষ্যৎ কী?

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আসন্ন শুল্ক বৃদ্ধি নিয়ে অনিশ্চয়তায় ভুগছে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো, যার প্রভাব পড়ছে বিশ্ব বাণিজ্যেও। আগামী ১লা আগস্ট থেকে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্তের ফলে ব্যবসায়ীদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। এই পরিস্থিতিতে কিভাবে টিকে থাকতে হবে, তা নিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন অনেক ব্যবসায়ী।

যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, পণ্য আমদানি করে এমন ৯৭ শতাংশ ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানই ছোট আকারের। এমন পরিস্থিতিতে তাদের জন্য ব্যবসা চালিয়ে যাওয়া বেশ কঠিন হয়ে পড়েছে। বিভিন্ন দেশের সঙ্গে শুল্ক চুক্তির অনিশ্চয়তা তাদের উদ্বেগের কারণ।

বিশেষ করে, চীন বাদে অন্যান্য দেশ থেকে পণ্য আমদানিতে বর্তমানে ১০ শতাংশ শুল্ক দিতে হয়। তবে, আগস্টের শুরুতে এই শুল্কের হার বাড়তে পারে। উদাহরণস্বরূপ, কম্বোডিয়া থেকে পণ্য আমদানিতে শুল্ক ৩৬ শতাংশ, মিয়ানমারে ৪০ শতাংশ এবং ব্রাজিলে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত হতে পারে।

এই পরিস্থিতিতে অনেক ব্যবসায়ী তাদের ব্যবসার ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কিত। উদাহরণস্বরূপ, সারা ওয়েলস ব্যাগস নামক একটি কোম্পানির প্রধান সারা ওয়েলস জানান, তিনি চীনের পরিবর্তে কম্বোডিয়া থেকে ব্যাগ তৈরির পরিকল্পনা করেছিলেন। কিন্তু সেখানেও শুল্কের হার বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কায় তিনি পড়েছেন। তার মতে, একদিকে যেমন ব্যবসার খরচ বাড়ছে, তেমনিভাবে কর্মীদের বেতন দেওয়াও কঠিন হয়ে পড়েছে।

শুধু ছোট ব্যবসায়ীরাই নন, বড় কোম্পানিগুলোও এই শুল্ক নীতির কারণে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। সম্প্রতি, বৈশ্বিক হিসাবরক্ষণ সংস্থা কেপিএমজি’র এক জরিপে দেখা গেছে, শুল্কের অনিশ্চয়তার কারণে ব্যবসায়ীরা তাদের বিনিয়োগ এক বছর পর্যন্ত স্থগিত রেখেছেন। এর কারণ হিসেবে তারা বলছেন, সরবরাহ শৃঙ্খলে পরিবর্তন আনতে সময় লাগে। প্রায় অর্ধেক ব্যবসায়ী জানিয়েছেন, সরবরাহ শৃঙ্খলে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আনতে ৭ থেকে ১২ মাস পর্যন্ত সময় লাগতে পারে।

মেক্সিকোতে অবস্থিত আমেরিকান চেম্বার অফ কমার্সের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা পেদ্রো কাসাস আলাট্রিস্ত জানান, অনেক কোম্পানি তাদের ভবিষ্যৎ পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য পরিস্থিতির উন্নতি চাইছে। এমনকি, ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাণিজ্য চুক্তি ঘোষণার পরও ব্যবসায়ীদের মধ্যে অনিশ্চয়তা কাটছে না।

ওয়াইনারি (winery) ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ম্যাক্স রন জানান, ইউরোপ থেকে ওয়াইন আমদানিতে শুল্ক বেড়ে যাওয়ায় তাদের ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তিনি বলেন, তারা আপাতত দাম না বাড়িয়ে পরিস্থিতি মোকাবিলার চেষ্টা করছেন।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই পরিস্থিতিতে ব্যবসায়ীদের জন্য সঠিক পরিকল্পনা করা কঠিন হয়ে পড়েছে। কারণ, শুল্কের হার পরিবর্তন হওয়ার কারণে তাদের উৎপাদন খরচ বাড়ছে এবং মুনাফা কমে যাচ্ছে। অনেক ব্যবসায়ী কর্মী ছাঁটাইয়ের মতো কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হচ্ছেন।

এসব কারণে বিশ্ব বাণিজ্য এখন এক কঠিন সময় পার করছে। ভবিষ্যতে শুল্কনীতিতে স্থিতিশীলতা না আসলে, ব্যবসায়ীদের টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়বে।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *