নিউ ইয়র্কে শোকের মাতম: বাংলাদেশী হিরোকে হারালো কমিউনিটি!

নিউ ইয়র্কে কর্তব্যরত অবস্থায় নিহত বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত পুলিশ অফিসার, কমিউনিটিতে শোকের ছায়া।

নিউ ইয়র্ক পুলিশ ডিপার্টমেন্টের (NYPD) অফিসার দিদারুল ইসলামের মৃত্যুতে শোকের আবহ তৈরি হয়েছে। সোমবার ম্যানহাটনের মিডটাউনে এক বন্দুক হামলায় নিহত হন ৩৬ বছর বয়সী এই পুলিশ কর্মকর্তা। খবরটি ছড়িয়ে পড়তেই ব্রঙ্কসের পার্কচেস্টারে বসবাসকারী বাংলাদেশিসহ পুরো কমিউনিটিতে নেমে আসে শোকের ছায়া।

দিদারুল ইসলাম ছিলেন নিউ ইয়র্ক সিটির একজন গর্বিত সদস্য। মেয়র এরিক অ্যাডামস তাকে ‘সত্যিকারের নিউ ইয়র্কার’ হিসেবে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেন, দিদারুল ছিলেন এই শহরের প্রতিচ্ছবি। জানা যায়, নিহত দিদারুল ইসলাম ছিলেন প্রথম বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত পুলিশ অফিসার যিনি কর্তব্যরত অবস্থায় নিহত হয়েছেন।

পার্কচেস্টারের বাংলাদেশি অধ্যুষিত এলাকা, যা ‘বাংলা বাজার’ নামেও পরিচিত, সেখানে শোকের মাতম চলছে। স্থানীয় কমিউনিটির মানুষজন তাদের প্রিয় মানুষটিকে হারিয়ে দিশেহারা। এই এলাকার একজন বাসিন্দা ও কমিউনিটি লিডার ফয়সল আহমেদ জানান, দিদারুলের মৃত্যু তাদের কমিউনিটির জন্য একটি বিশাল ধাক্কা। তিনি বলেন, দিদারুল ছিলেন খুবই ভালো একজন মানুষ এবং একজন সৎ অফিসার।

দিদারুলের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে তার সহকর্মী পুলিশ অফিসার রাকিব হাসান বলেন, “এই কমিউনিটি থেকে পুলিশের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিভাগে প্রতিনিধিত্ব করাটা আমাদের জন্য গর্বের।” তিনি আরও বলেন, দিদারুল ছিলেন খুবই মিশুক, বন্ধুভাবাপন্ন এবং সবার কাছে সহজে গ্রহণযোগ্য একজন মানুষ।

স্থানীয় সময় মঙ্গলবার সন্ধ্যায় পার্কচেস্টার জামে মসজিদে আনা হয় দিদারুলের মরদেহ। মসজিদের ভাইস প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ আহিয়া জানান, দিদারুল নিয়মিত তার পরিবার নিয়ে মসজিদে আসতেন এবং তিনি ছিলেন খুবই ভালো ও ভদ্র একজন মানুষ। ব্রঙ্কস ইসলামিক কালচারাল সেন্টারের ইমাম মুহাম্মদ মইনুল ইসলাম বলেন, “আমাদের বাংলাদেশ কমিউনিটির মধ্যে গভীর ভালোবাসা ও বন্ধুত্বের সম্পর্ক বিদ্যমান।”

দিদারুলের পরিবারে শোকের মাতম চলছে। জানা গেছে, তিনি স্ত্রী ও দুই পুত্র সন্তান রেখে গেছেন। দিদারুলের বাবা খবরটি শুনে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তার পরিবারের সদস্যরা এখনো এই শোক কাটিয়ে উঠতে পারেনি।

সোমবারের ওই ঘটনার পর নিউ ইয়র্ক সিটির মেয়র এরিক অ্যাডামস নিহত অফিসার দিদারুলের প্রতি সম্মান জানিয়ে শহরের পতাকা অর্ধনমিত রাখার নির্দেশ দেন। নিউ ইয়র্ক রাজ্যের গভর্নর ক্যাথি হুকুলও একই নির্দেশ দেন।

দিদারুলের মরদেহ কফিনবন্দী করে যখন মসজিদের দিকে নিয়ে যাওয়া হয়, তখন রাস্তার দুই পাশে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে ছিলেন সহস্রাধিক পুলিশ সদস্য। তাদের চোখে ছিল অশ্রু, আর সবাই নীরবে তাদের সহকর্মীকে শেষ শ্রদ্ধা জানাচ্ছিলেন।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *