গাজায় খাবার আনতে গিয়ে মায়ের জীবন: শিশুদের আর্তনাদ, মৃত্যুভয়!

গাজায় খাদ্য সংকটে শিশুদের বাঁচাতে জীবন বাজি রাখছেন মায়েরা।

গাজায় খাদ্য সংকটের ভয়াবহ চিত্র ফুটে উঠেছে, যেখানে খাবার সংগ্রহের জন্য মায়েরা নিজেদের জীবন বিপন্ন করতেও দ্বিধা করছেন না।

জাতিসংঘের তথ্যমতে, গাজায় দুর্ভিক্ষের কাছাকাছি পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে এবং সেখানকার শিশুদের মধ্যে তীব্র অপুষ্টি দেখা যাচ্ছে।

আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম সিএনএন-এর একটি প্রতিবেদনে সেখানকার কয়েকজন নারীর দুর্দশার কথা তুলে ধরা হয়েছে।

গাজার খান ইউনুস এলাকার বাসিন্দা উম খাদের। তিনি জানান, খাবার সংগ্রহের জন্য তাকে প্রায়ই দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে হয়।

পথে ইসরায়েলি সৈন্যদের হামলা ও সশস্ত্র ব্যক্তিদের আক্রমণের ঝুঁকি তো আছেই, এছাড়া ত্রাণবাহী গাড়ির জন্য অপেক্ষা করাটাও এক কঠিন চ্যালেঞ্জ।

উম খাদের বলেন, “আমাদের চারপাশে জীবন সবসময়ই ঝুঁকির মধ্যে। সশস্ত্র সন্ত্রাসী, ইসরায়েলি সেনা, এমনকি আকাশ থেকে বোমা—সবকিছুই আমাদের জন্য বিপদ ডেকে আনে।”

উম খাদেরের বন্ধু ওয়ালা জানান, কিভাবে তিনি ১০ ঘণ্টা অপেক্ষার পর এক বস্তা আটা পেয়েছিলেন।

তিনি আরও জানান, কিভাবে এক যুবক ছুরি ধরে তার কাছ থেকে সেই আটা ছিনিয়ে নিয়েছিল।

এমনকি মা ও শিশুদের খাবার সংগ্রহের এই কঠিন পথে হেঁটে যেতে গিয়ে শরীর ক্লান্ত হয়ে যাওয়ায় অনেক সময় বিশ্রাম নিতে হয়।

সিএনএন-এর প্রতিবেদনে আরও জানা যায়, মা ও শিশুদের এই কঠিন পরিস্থিতিতে সাহায্য করার মতো পর্যাপ্ত ত্রাণ সরবরাহ নেই।

জাতিসংঘের খাদ্য নিরাপত্তা বিষয়ক একটি উদ্যোগের তথ্য অনুযায়ী, গাজা শহরে অপুষ্টির হার বাড়ছে।

জুলাই মাসেই starvation-এর কারণে ৬৩ জন মারা গেছেন, যাদের মধ্যে ২৫ জন শিশু।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) জানিয়েছে, জুন ও জুলাই মাসে অপুষ্টির শিকার হয়ে ১১,৫০০ এর বেশি শিশু হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে।

এর মধ্যে প্রায় ২০ শতাংশ শিশুর অবস্থা ছিল খুবই গুরুতর।

ইসরায়েল সম্প্রতি কিছু এলাকায় যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করে মানবিক ত্রাণ সরবরাহের জন্য করিডোর তৈরির কথা বলেছে।

তবে গাজার প্রায় ২২ লাখ মানুষের জন্য এই ত্রাণ খুবই সামান্য।

যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও জার্মানির মতে, এই সংকট ‘মানব সৃষ্ট’ এবং এটি এড়ানো সম্ভব।

মার্চ মাস থেকে ইসরায়েল গাজায় ১১ সপ্তাহের অবরোধ আরোপ করে, যা মে মাসের শেষের দিকে কিছুটা শিথিল করা হয়।

এরপর যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তায় গাজা মানবিক ফাউন্ডেশন (GHF) -এর মাধ্যমে ত্রাণ বিতরণ শুরু হয়।

আগে যেখানে জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে ৪০০টি স্থানে ত্রাণ বিতরণ করা হতো, সেখানে এখন মাত্র চারটি স্থানে তা সীমাবদ্ধ।

এছাড়া স্থানীয় বাজারে লুট করা আটা বিক্রি হচ্ছে আকাশছোঁয়া দামে, যা গরিব মানুষের পক্ষে কেনা সম্ভব নয়।

উম খাদের জানান, তিনি যখন খাবার সংগ্রহের জন্য বাইরে যান, তখন তার সন্তানেরা তাকে যেতে নিষেধ করে।

তারা জানায়, “মা, তুমি যেও না। আমরা তোমাকে হারাতে চাই না।”

উম খাদেরের স্বামী ইসরায়েলি হামলায় নিহত হয়েছেন।

বর্তমানে তিনি একাই তার পরিবারের দেখাশোনা করেন।

তার সন্তানদের জন্য একটি দাতব্য সংস্থা থেকে সামান্য যে স্যুপ পাওয়া যায়, তা তাদের জন্য যথেষ্ট নয়।

উম খাদের এবং উম বিলালের মতো মায়েরা জানিয়েছেন, তারা প্রায়ই দিনের পর দিন না খেয়ে থাকেন, যাতে তাদের সন্তানেরা অন্তত কিছু খেতে পারে।

কিন্তু শিশুদের ক্ষুধার্ত অবস্থায় ঘুমাতে যাওয়াটা তাদের জন্য খুবই কষ্টের।

জাতিসংঘ এবং ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, মে মাস থেকে এ পর্যন্ত ত্রাণ বিতরণের সময় ১,১০০ জনের বেশি নিহত হয়েছে।

ইসরায়েল অবশ্য এসব মৃত্যুর দায় অস্বীকার করেছে।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *