মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এক দম্পতি, ক্যালেব রোজলার এবং জাস্টিন রোজলার, ফিনল্যান্ডে অনুষ্ঠিত হওয়া ‘ওয়াইফ-ক্যারিং’ বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে জয়লাভ করে ইতিহাস গড়েছেন। এই প্রতিযোগিতায়, যা আগে কখনো কোনো আমেরিকান দল জিততে পারেনি, রোজলার দম্পতি তাদের অসাধারণ দক্ষতার প্রমাণ দিয়েছেন।
ক্যালেব ও জাস্টিনের এই সাফল্যের গল্পটা বেশ চমকপ্রদ। খেলাটির নিয়ম অনুযায়ী, পুরুষ তার স্ত্রীকে কাঁধে তুলে নির্দিষ্ট পথ অতিক্রম করে। এই পথ জলের মধ্যে দিয়ে এবং কিছু বাধা পেরিয়ে ২৫০ মিটার দৌড়াতে হয়।
যারা দ্রুত সময়ে এই পথ অতিক্রম করতে পারে, তারাই বিজয়ী হয়। রোজলার দম্পতি ১ মিনিট ১ সেকেন্ড সময় নিয়ে রেকর্ড গড়েছেন। শুধু তাই নয়, বিজয়ী হিসেবে তারা জাস্টিনের ওজনের সমান বিয়ারও জিতেছেন, যা এই প্রতিযোগিতার একটি ঐতিহ্য।
তবে, এই খেলাটি অনেকের কাছেই বেশ অপরিচিত। এমনকি, রোজলার দম্পতি যখন তাদের বন্ধু-বান্ধবদের এই প্রতিযোগিতার কথা বলতেন, তখন অনেকেই বেশ কৌতূহল নিয়ে তাদের দিকে তাকাতেন। কেউ কেউ খেলাটি বেশ উপভোগ্য মনে করতেন, আবার কারো কাছে বিষয়টি ছিল বেশ অদ্ভুত।
এই খেলাটির উদ্ভব হয়েছে ফিনল্যান্ডে, যেখানে উনিশ শতকে হার্কো রসভো-রোনকাইнен নামক এক ডাকাত তার সঙ্গীদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য ভারী বস্তা বহন করতে বলতেন। ধারণা করা হয়, তিনি এবং তার দল গ্রামের নারীদের ধরে এনে তাদের ক্যাম্পে নিয়ে যেতেন।
সেই থেকেই এই খেলার প্রচলন। বর্তমানে, এই খেলাটি অনেক বেশি অন্তর্ভুক্তিমূলক। এখানে স্বামী-স্ত্রী ছাড়াও যে কেউ যে কাউকে কাঁধে তুলে নিতে পারে।
এমনকি, নারী ও চল্লিশোর্ধদের জন্যও রয়েছে আলাদা বিভাগ। রোজলার দম্পতির এই খেলার শুরুটা হয় তাদের নিজ শহর উইসকনসিনের ওকলাহোমায়। ক্যালেব একবার ইএসপিএনে এই খেলাটি দেখেন এবং তার ভালো লাগে।
এরপর তারা নিয়মিতভাবে এর প্রশিক্ষণ শুরু করেন। প্রশিক্ষণের সময় তাদের বেশ কিছু মজার অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হতে হয়েছে। যেমন, স্থানীয় পার্কে স্ত্রীর কাঁধে চড়ে দৌড়ানোর সময় পথচারীরা তাদের দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকতেন।
ক্যালেব বলেন, “আমরা সবসময় চেষ্টা করতাম, যেন কেউ আমাদের দেখতে না পায়। কিন্তু হঠাৎই কেউ না কেউ আমাদের পাশ দিয়ে হেঁটে যেত। তখন আমরা তাদের কাছে গিয়ে বলতাম, ‘আমরা দুঃখিত, আপনারা যা দেখেছেন তা হয়তো খুব অদ্ভুত ছিল। আসলে, আমরা ‘ওয়াইফ-ক্যারিং’ নামক একটি প্রতিযোগিতার জন্য প্রশিক্ষণ নিচ্ছি।”
এই খেলার জন্য প্রস্তুতি নেওয়াটা সহজ ছিল না। ক্যালেব ও জাস্টিন দু’জনেই কঠোর পরিশ্রম করেছেন। জাস্টিন বলেন, “পুরুষটিকে শক্তিশালী, দ্রুত এবং কিছুটা চটপটে হতে হয়। আর নারীকে অবশ্যই শক্ত হয়ে ধরে থাকতে হয়।”
তারা ‘এস্তোনিয়ান ক্যারি’ পদ্ধতি ব্যবহার করেন, যেখানে জাস্টিনকে উল্টো করে ক্যালেবের কাঁধে তুলে নেওয়া হয়। বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে অংশগ্রহণের জন্য রোজলার দম্পতি ফিনল্যান্ডে উড়াল দেন। ফাইনালের দিন তাদের উপর অনেক চাপ ছিল।
ক্যালেব বলেন, “আমি আমার পরিবার এবং বন্ধুদের হতাশ করতে চাইনি।” প্রতিযোগিতার দিন তাদের জন্য সবচেয়ে কঠিন ছিল জলের মধ্যে ঝাঁপ দেওয়া। ক্যালেব বলেন, “আমি ভেবেছিলাম, আমি যথেষ্ট লম্বা। কিন্তু আমি একদম পানির নিচে চলে যাই।
এরপর আমি নিজেকে সামলে নেওয়ার চেষ্টা করি এবং দৌড়াতে শুরু করি।” জাস্টিনের মতে, জলের মধ্যে ঝাঁপ দেওয়ার দৃশ্যটা দেখা বেশ কঠিন ছিল। রোজলার দম্পতির এই জয় শুধু তাদের জন্য নয়, বরং যুক্তরাষ্ট্রের জন্যও একটি বড় অর্জন।
কারণ, এর আগে ফিনল্যান্ড, এস্তোনিয়া, রাশিয়া এবং লিথুয়ানিয়ার প্রতিযোগীরাই এই খেতাব জিতেছিল। এই জয় প্রমাণ করে, কঠোর পরিশ্রম এবং একাগ্রতা থাকলে যেকোনো অসাধ্য সাধন করা সম্ভব।
ভবিষ্যতে হয়তো আমরা আরও অনেক আমেরিকানকে এই খেলায় দেখতে পাবো। তথ্য সূত্র: সিএনএন