সোশ্যাল মিডিয়ায় আজকাল স্বাস্থ্য এবং সুস্থতা বিষয়ক নানা ধরনের ট্রেন্ড প্রায়ই চোখে পড়ে। বিশেষ করে, TikTok এবং Instagram-এর দৌলতে ‘কর্টিসল ককটেল’ নামে একটি পানীয় বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে, যা নিয়ে চলছে জোর আলোচনা।
এই পানীয় প্রস্তুতকারকদের দাবি, এটি নাকি মানসিক চাপ কমাতে, শরীরে শক্তি যোগাতে এবং অ্যাড্রেনাল গ্রন্থির কার্যকারিতা স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে। স্বাস্থ্য সচেতন মানুষের মধ্যে এই ককটেল নিয়ে আগ্রহ বাড়ছে, তাই এর সত্যতা যাচাই করা দরকার।
কর্টিসল ককটেল আসলে কী? সাধারণত, এই পানীয় তৈরিতে নারিকেল জল, সাইট্রাস ফল (যেমন কমলালেবু) এবং কিছু লবণ ব্যবহার করা হয়। অনেক সময় স্বাদ বাড়ানোর জন্য স্পার্কলিং ওয়াটার মেশানো হয়।
প্রস্তুত প্রণালীভেদে উপাদানগুলো ভিন্ন হতে পারে, তবে এর মূল ধারণা হলো, উপাদানগুলো একত্রিত হয়ে শরীরের অ্যাড্রেনাল গ্রন্থির স্বাস্থ্য ভালো রাখতে এবং মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে।
কিন্তু, সত্যিই কি এই পানীয়ের দাবি অনুযায়ী ফল পাওয়া যায়? বিশেষজ্ঞদের মতে, এই বিষয়ে কোনো বৈজ্ঞানিক প্রমাণ নেই। সিএনএন-এর স্বাস্থ্য বিষয়ক বিশেষজ্ঞ এবং জর্জ ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ড. লিনা ওয়েন এই বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য দিয়েছেন।
তিনি জানাচ্ছেন, করটিসল হলো অ্যাড্রেনাল গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত একটি স্টেরয়েড হরমোন, যা আমাদের শরীরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কাজ নিয়ন্ত্রণ করে, যেমন – বিপাক, রক্তে শর্করার পরিমাণ, রক্তচাপ, ঘুম এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা।
কর্টিসলকে অনেক সময় ‘স্ট্রেস হরমোন’ও বলা হয়, কারণ কোনো চাপপূর্ণ পরিস্থিতিতে এর মাত্রা বাড়ে। স্বল্প সময়ের জন্য এটি শরীরের জন্য উপকারী, তবে দীর্ঘদিন ধরে করটিসল এর মাত্রা বেড়ে গেলে স্বাস্থ্য সমস্যা হতে পারে।
অতিরিক্ত করটিসল এর কারণে ঘুমের সমস্যা, উদ্বেগ, উচ্চ রক্তচাপ এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যেতে পারে।
ডা. ওয়েন আরও জানান, যদিও ককটেলের উপাদানগুলো (যেমন পটাশিয়াম, ভিটামিন সি, এবং ম্যাগনেসিয়াম) অ্যাড্রেনাল গ্রন্থির জন্য প্রয়োজনীয়, তবে সুষম খাদ্য গ্রহণের মাধ্যমে এগুলো সহজেই পাওয়া যায়। উদাহরণস্বরূপ, কলা, কমলালেবু, স্ট্রবেরি, এবং সবুজ শাকসবজিতে এই উপাদানগুলো বিদ্যমান।
সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেকে ‘অ্যাড্রেনাল ক্লান্তি’ (adrenal fatigue) নামে একটি অবস্থার কথা উল্লেখ করেন। তাদের মতে, অতিরিক্ত মানসিক চাপের কারণে অ্যাড্রেনাল গ্রন্থি দুর্বল হয়ে যায় এবং শরীর ক্লান্ত ও দুর্বল লাগে।
তবে, চিকিৎসা বিজ্ঞান এই ধরনের কোনো রোগকে স্বীকৃতি দেয় না। ক্লান্তি বা দুর্বলতার অন্য অনেক কারণ থাকতে পারে, যেমন – ঘুমের অভাব, মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা, অথবা রক্তস্বল্পতা, থাইরয়েডের সমস্যা বা ডায়াবেটিসের মতো রোগ।
তাই, এই ধরনের কোনো সমস্যা হলে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া জরুরি, কোনো ককটেলের ওপর নির্ভর করা উচিত নয়।
ড. ওয়েন সতর্ক করে বলেন, কিডনি, হৃদরোগ অথবা ডায়াবেটিসের মতো কোনো শারীরিক সমস্যা থাকলে এই ককটেল পান করার আগে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। কারণ, এর কিছু উপাদান এইসব রোগীদের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
সবশেষে, মনে রাখতে হবে, সোশ্যাল মিডিয়ার তথ্যের ওপর নির্ভর না করে, স্বাস্থ্য বিষয়ক যে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া সবচেয়ে জরুরি।
তথ্য সূত্র: সিএনএন