ঐতিহাসিক জাদুঘরে ট্রাম্পের অপসারণ: বিতর্কের ঝড়!

শিরোনাম: ট্রাম্পের অভিশংসন: জাদুঘর থেকে তথ্য অপসারণ, ইতিহাসকে নতুন মোড় দেওয়ার চেষ্টা?

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অভিশংসন বিষয়ক একটি তথ্য জাদুঘর থেকে সরিয়ে নেওয়ার পর নতুন করে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। এই ঘটনা ইতিহাসের সত্যতা তুলে ধরার ক্ষেত্রে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা এবং ক্ষমতাসীনদের দ্বারা ইতিহাসকে প্রভাবিত করার প্রবণতা নিয়ে প্রশ্ন তৈরি করেছে।

ঐতিহাসিক ঘটনার সাক্ষ্য বহনকারী বিভিন্ন সংগ্রহশালা এবং জাদুঘরগুলি জনসাধারণের কাছে ইতিহাসের নির্ভরযোগ্য চিত্র তুলে ধরে। কিন্তু এই ধরনের প্রতিষ্ঠানেও রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারের অভিযোগ নতুন নয়।

সম্প্রতি, ওয়াশিংটন ডিসির স্মিথসোনিয়ান ইনস্টিটিউশন আমেরিকান প্রেসিডেন্ট বিষয়ক একটি প্রদর্শনী থেকে ট্রাম্পের দুটি অভিশংসন সম্পর্কিত তথ্য সরিয়ে ফেলেছে। ২০১৯ এবং ২০২১ সালে ট্রাম্পের অভিশংসন হয়।

এই পদক্ষেপের কারণ হিসেবে জানানো হয়েছে, প্রদর্শনীটির বিষয়বস্তু পর্যালোচনা করা হচ্ছে এবং ভবিষ্যতে এতে সকল প্রেসিডেন্টের অভিশংসনের বিষয়গুলি অন্তর্ভুক্ত করা হবে। তবে, কবে নাগাদ এই পরিবর্তন আনা হবে, সে বিষয়ে কোনো নির্দিষ্ট সময়সীমা উল্লেখ করা হয়নি।

ইতিহাসবিদ ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, ক্ষমতাসীন ব্যক্তিরা প্রায়ই ইতিহাসকে নিজেদের মতো করে উপস্থাপন করতে চান। প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক জুলিয়ান ই. জেইজার বলেন, “এই ধরনের পদক্ষেপ কেবল একটি নির্দিষ্ট বয়ান তৈরি করার চেষ্টা নয়, বরং এর মাধ্যমে মানুষ কিভাবে তাদের ইতিহাস সম্পর্কে জানবে, তাকেও প্রভাবিত করার চেষ্টা করা হয়।”

ইতিহাসের এই পরিবর্তনে ক্ষমতা এবং প্রভাব বিস্তারের বিষয়টি নতুন নয়। অতীতেও বিভিন্ন দেশে ক্ষমতাসীন ব্যক্তিরা তাদের শাসনকালের স্মৃতিকে নিজেদের মতো করে উপস্থাপন করেছেন। উদাহরণস্বরূপ, চীনের তিয়েনআনমেন স্কয়ারে গণতন্ত্রপন্থীদের ওপর ১৯৮৯ সালের দমন-পীড়নের ঘটনা দেশটির সরকার কর্তৃক নিষিদ্ধ এবং কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রিত।

সোভিয়েত আমলে জোসেফ স্ট্যালিনের সমালোচকদের শুধু সরকার থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়নি, বরং তাদের ছবি এবং ইতিহাসের বই থেকেও মুছে ফেলা হয়েছিল।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অতীতেও বিভিন্ন মার্কিন প্রেসিডেন্ট তাদের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করতে ইতিহাসকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করেছেন। তবে ট্রাম্পের সময়ে এই প্রবণতা আরও তীব্র হয়েছে।

ইউনিভার্সিটি অফ টরন্টোর অধ্যাপক জেসন স্ট্যানলি এই প্রসঙ্গে বলেন, “ঐতিহাসিক বয়ান নিয়ন্ত্রণে না রাখতে পারলে তারা তাদের রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের জন্য মিথ্যা ইতিহাস তৈরি করবে।”

ইতিহাসকে প্রভাবিত করার এই প্রবণতা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কারণ, এটি আমাদের অতীতকে দেখার এবং বোঝার ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলে।

রিচার্ড নিক্সন রাষ্ট্রপতি জাদুঘরের সাবেক পরিচালক টিমোথি নাফতালি মনে করেন, জাদুঘরের কর্মকর্তাদের একটি “রেড লাইন” (সীমা) থাকা উচিত। তার মতে, ট্রাম্প সম্পর্কিত তথ্য সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্তটি সেই “রেড লাইন” অতিক্রম করেছে।

ইতিহাসবিদ ও গবেষকরা মনে করেন, জাদুঘরের বিষয়বস্তু পরিবর্তনের পেছনে ক্ষমতাসীনদের আগ্রহ তাদের ক্ষমতাকে আরও সুসংহত করার একটি উপায়। তাদের মতে, ক্ষমতাধর ব্যক্তিরা সবসময় চান তাদের ভাবমূর্তি অটুট থাকুক, যা ইতিহাসকে নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে আরও সহজ হয়।

তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *