খাদ্যে রং বদলের নামে প্রতারণা? আসল সত্য ফাঁস!

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে খাদ্য প্রস্তুতকারক সংস্থাগুলো তাদের উৎপাদনে কৃত্রিম রং ব্যবহারের পরিমাণ কমাচ্ছে। স্কিটলস, হার্শে এবং নেসলের মতো বৃহৎ কোম্পানিগুলো এই পদক্ষেপ নিয়েছে।

তবে খাদ্য ও স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটিকে নিছক প্রচারণার অংশ হিসেবেই দেখা হচ্ছে। তাদের মতে, এর চেয়ে বরং জনস্বাস্থ্য বিষয়ক গুরুতর সমস্যাগুলোর প্রতি মনোযোগ দেওয়া উচিত।

সম্প্রতি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সরকার এই পরিবর্তনের কৃতিত্ব নিচ্ছে এবং একে ‘মেক আমেরিকা হেলদি এগেইন’ বা ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে পুনরায় সুস্থ করে তোলো’ (MAHA) কার্যক্রমের অংশ হিসেবে তুলে ধরছে। তাদের দাবি, এর মাধ্যমে তারা আমেরিকানদের স্বাস্থ্যখাতে বিদ্যমান সংকট মোকাবিলা করতে সক্ষম হবে।

কিন্তু পুষ্টিবিদ এবং জনস্বাস্থ্য গবেষকরা এই দাবির সঙ্গে একমত নন। তাদের মতে, কোম্পানিগুলোর এই পরিবর্তন মূলত গ্রাহকদের মধ্যে স্বাস্থ্যকর খাদ্যের চাহিদা বৃদ্ধি এবং প্রাকৃতিক উপাদানের প্রতি আগ্রহের ফল।

বিশেষজ্ঞদের মতে, কৃত্রিম রং অপসারণের চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো অতিরিক্ত প্রক্রিয়াজাত খাবার (ultra-processed food) কমানো। এই ধরনের খাবারে লবণ, চিনি এবং চর্বির পরিমাণ বেশি থাকে।

যা মানুষের শরীরে বিভিন্ন রোগ, যেমন – স্থূলতা, ক্যান্সার, ডায়াবেটিস এবং হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়। যুক্তরাষ্ট্রে খাদ্য সরবরাহের প্রায় ৭০ শতাংশই এই ধরনের প্রক্রিয়াজাত খাবার।

অধ্যাপক ড. ব্যারি পপকিন মনে করেন, “কৃত্রিম রং অপসারণ নিছক একটি কৌশল। এর মাধ্যমে MAHA কর্তৃপক্ষ তাদের সাফল্যের গল্প শোনাতে পারবে, কিন্তু স্বাস্থ্যগত দিক থেকে এর তেমন কোনো প্রভাব নেই।”

স্বাস্থ্য বিষয়ক কর্মীরা অবশ্য স্বীকার করেন যে, খাদ্য বিষয়ক আলোচনাকে জনসম্মুখে আনতে এবং খাদ্য ব্যবস্থার ওপর বৃহৎ কোম্পানিগুলোর প্রভাব সম্পর্কে সচেতনতা তৈরিতে রবার্ট এফ. কেনেডি জুনিয়রের (স্বাস্থ্য ও মানব পরিষেবা বিভাগের সেক্রেটারি) MAHA আন্দোলনের একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।

কিন্তু গবেষকদের মতে, সিনথেটিক রংয়ের (synthetic dyes) উপর মনোযোগ দেওয়ার ফলে সস্তা, সহজলভ্য এবং ক্ষতিকর খাবারের বিস্তার সম্পর্কিত বৃহত্তর সমস্যাটি উপেক্ষিত হচ্ছে।

ড. পপকিন আরও বলেন, “আইসক্রিম এখনো আইসক্রিমই আছে, সোডা সোডাই। কৃত্রিম রং না থাকলেও এর তেমন কোনো পরিবর্তন হবে না।”

এদিকে, স্বাস্থ্য ও মানব পরিষেবা বিভাগের একজন মুখপাত্র জানিয়েছেন, কেনেডি এমন একটি পরিস্থিতি পরিবর্তনে কাজ করছেন যা দেশব্যাপী দীর্ঘস্থায়ী রোগের বিস্তার ঘটিয়েছে এবং ফেডারেল স্বাস্থ্য প্রোগ্রামগুলোতে স্বচ্ছতা ফিরিয়ে আনছেন।

তবে গবেষকদের মতে, আমেরিকানদের খাদ্যাভ্যাসে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আনতে হলে অতি-প্রক্রিয়াজাত খাবারের উপর কঠোর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করতে হবে।

উদাহরণস্বরূপ, খাদ্য প্যাকেজের সামনের দিকে সতর্কতামূলক লেবেল ব্যবহার করা এবং শিশুদের জন্য অস্বাস্থ্যকর খাবারের বিপণন সীমিত করার মতো পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে।

অন্যদিকে, এই পরিবর্তনের মাঝে ট্রাম্প প্রশাসনের নেওয়া কিছু পদক্ষেপ সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। স্বাস্থ্যসেবা এবং খাদ্য সহায়তা কর্মসূচিতে সরকারের অর্থ হ্রাস করা হয়েছে।

এর ফলে অনেক পরিবার তাদের স্বাস্থ্য বীমা এবং খাদ্য সহায়তা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। সমালোচকদের মতে, সরকার একদিকে স্বাস্থ্যকর খাদ্য নিয়ে কথা বলছে, আবার অন্যদিকে স্বাস্থ্য বিষয়ক বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা কমিয়ে দিচ্ছে।

ন্যাশনাল ইনস্টিটিউটস অফ হেলথের (National Institutes of Health) শীর্ষস্থানীয় একজন পুষ্টি গবেষক, যিনি অতি-প্রক্রিয়াজাত খাবার নিয়ে গবেষণা করছিলেন, কেনেডির নীতির কারণে পদত্যাগ করেছেন।

হার্ভার্ড স্কুল অফ পাবলিক হেলথের অধ্যাপক ড. জেরল্ড ম্যান্ডে মনে করেন, কৃত্রিম রং অপসারণ একটি ভালো পদক্ষেপ হতে পারে, তবে এটি তখনই গুরুত্বপূর্ণ হবে যদি কেনেডি অতি-প্রক্রিয়াজাত খাবারের বিরুদ্ধে বৃহত্তর পদক্ষেপ নিতে প্রস্তুত থাকেন।

যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, আগামী আগস্ট মাসে MAHA কমিশন শিশুদের মধ্যে দীর্ঘস্থায়ী স্থূলতা (chronic obesity) বিষয়ক একটি কৌশল প্রকাশ করবে। সেই প্রতিবেদনে অতি-প্রক্রিয়াজাত খাবার সীমিত করার জন্য কোনো সুপারিশ থাকে কিনা, সেদিকেই এখন সবার নজর।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *