টেক্সাসের ভয়াবহ বন্যায় এক মাস, শোক আর সাহায্যের অপেক্ষায়…

টেক্সাসের ভয়াবহ বন্যায় এক মাস, শোক আর আর্থিক দুরবস্থা কাটেনি দুর্গতদের। যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস অঙ্গরাজ্যে গত জুলাই মাসের শুরুতে হওয়া এক ভয়াবহ বন্যা কেড়ে নিয়েছিল অন্তত ১৩৫ জনের প্রাণ।

ভয়াবহ সেই দুর্যোগের এক মাস পরেও সেখানকার মানুষগুলো এখনো কাটিয়ে উঠতে পারেনি সেই শোক, আর আর্থিক সাহায্য চেয়েও তা পায়নি অনেকেই।

বন্যার ভয়াবহতা কতটা তীব্র ছিল, তা এখনো চোখে ভাসে ব্যারি অ্যাডেলম্যানের। তিনি জানান, বন্যার সময় তাদের পরিবারের নয় বছর বয়সী নাতি কোল মর্রিস আতঙ্কে তার দিকে তাকিয়ে জানতে চেয়েছিল, “আমরা কি মরে যাবো?”

অ্যাডেলম্যান তখন তার নাতিকে সাহস জুগিয়েছিলেন, কিন্তু তাদের পরিবারের সদস্যরা সে রাতে মৃত্যুর খুব কাছ থেকে ফিরে এসেছিলেন।

বানের পানি তাদের বাড়ির অ্যাটিকের সিঁড়ি পর্যন্ত ছুঁয়ে গিয়েছিল।

টেক্সাসের এই বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ক্যাম্পিং সাইটগুলো, যেখানে ঘুমন্ত শিশুদের ওপরও আঘাত হেনেছিল এই বন্যা।

ভয়াবহ সেই রাতের স্মৃতি এখনো তাড়া করে ফেরে অ্যাডেলম্যানকে।

তিনি জানান, মানসিক আঘাতের পাশাপাশি তিনি এখন পোস্ট-ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিসঅর্ডারে (পিটিএসডি) ভুগছেন।

পরিবারের সদস্যদের চোখের সামনে তাদের ঘর-বাড়ি, সহায়-সম্পদ তছনছ হয়ে যাওয়াটা তাকে আরও বেশি কষ্ট দেয়।

তার ৯৪ বছর বয়সী বৃদ্ধা মা বেটি ম্যাটেসন-এর বাড়িটিও বন্যায় সম্পূর্ণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর অ্যাডেলম্যান-এর বাড়ির আশেপাশে ৪০টির বেশি গাড়ি পাওয়া গিয়েছিল।

তাদের উঠোনে পাওয়া গিয়েছিল এক ৫ বছর বয়সী শিশুর মরদেহ।

আশেপাশে গাছ ধরে তখনও অনেকে বাঁচার আকুতি জানাচ্ছিল, যাদের স্বজনদেরকে হয়তো পানির স্রোত ভাসিয়ে নিয়ে গেছে।

তাদের অসহায় মুখগুলো তিনি ভুলতে পারেন না।

অ্যাডেলম্যান-এর পরিবারের মতো অনেক পরিবার এখনো সরকারি সাহায্যের অপেক্ষায় দিন গুনছে।

ফেডারেল ইমার্জেন্সি ম্যানেজমেন্ট এজেন্সি (ফেমা)-এর কাছ থেকে তারা কতটুকু সাহায্য পাবে, তা এখনো নিশ্চিত নয়।

টেক্সাস অ্যাপলসিড-এর দুর্যোগ পুনরুদ্ধার ও ন্যায্য আবাসন প্রকল্পের পরিচালক ম্যাডিসন স্লোন জানান, সাধারণত ফেমা ঘর মেরামতের জন্য প্রায় ৮,০০০ ডলার দিয়ে থাকে।

তবে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণের ওপর ভিত্তি করে এই অঙ্ক কম-বেশি হতে পারে।

কিন্তু এই সাহায্য ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য যথেষ্ট নয়।

স্লোন আরও জানান, ফেমা-র সাহায্য পাওয়া বেশ কঠিন এবং অনেক সময় আবেদন বাতিলও হয়ে যায়।

যারা ইতিমধ্যে একটি দুর্যোগের শিকার হয়েছেন, তাদের জন্য এই ধরনের সাহায্য পাওয়াটা অনেক কঠিন।

তিনি বলেন, ‘এই পদ্ধতিটি কোনো নিরাপত্তা জাল হিসাবে কাজ করে না।

এটি মূলত বীমার ঘাটতি পূরণ করতে তৈরি করা হয়েছে।

যাদের পর্যাপ্ত বীমা নেই, তাদের জন্য এখানে তেমন কিছুই নেই, সাহায্য মূলত ব্যক্তিগত অনুদানের ওপর নির্ভরশীল।’

অন্যদিকে, অ্যাডেলম্যান-এর পরিবারের সদস্যরা স্থানীয় এবং দূর-দূরান্তের টেক্সাসের বিভিন্ন সম্প্রদায়ের কাছ থেকে সাহায্য পাচ্ছেন।

তাদের পরিবারের সদস্যরা একটি ‘গোফান্ডমি’ (GoFundMe) ক্যাম্পেইন শুরু করেছেন, যেখানে তারা তাদের পরিবারের ঘর মেরামতের জন্য প্রায় ৬ লক্ষ ডলার (বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৬ কোটি ৬১ লক্ষ টাকা) চেয়েছেন।

ইতিমধ্যে সেই ফান্ডে ৭৫,০০০ ডলারের বেশি (বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৮২ লক্ষ টাকা) জমা হয়েছে।

বন্যার ভয়াবহতা শুধু আর্থিক ক্ষতিতেই সীমাবদ্ধ নেই।

অনেক শিশু এখনো দুঃস্বপ্ন দেখে এবং মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগছে।

কেল্লি র্যাবনের দুই ছেলে, যারা একটি গ্রীষ্মকালীন ক্যাম্পে ছিল, বন্যায় তাদের ভয়াবহ অভিজ্ঞতা হয়েছে।

কেল্লি জানান, তার ছোট ছেলে ব্রক এখন সব সময় উদ্বিগ্ন থাকে।

সে জানায়, “আজ আমার ছেলেরা শারীরিকভাবে নিরাপদ, তবে আমাদের পরিবারের জন্য ঝড় এখনো শেষ হয়নি।”

টেক্সাসের এই বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর জন্য মানসিক স্বাস্থ্য সহায়তা অত্যন্ত জরুরি।

কিন্তু অনেক পরিবার এখনো সেই সহায়তা পায়নি।

সরকারি সাহায্য পেতে দেরি হওয়ায় অনেক পরিবার হতাশ।

টেক্সাসের এই বন্যা বাংলাদেশের মানুষের কাছেও পরিচিত একটি দুর্যোগের চিত্র।

বাংলাদেশেও প্রতি বছর বন্যা হয়, যা কেড়ে নেয় অনেক মানুষের জীবন, কেড়ে নেয় তাদের ঘর-বাড়ি।

সরকারি সহায়তা এবং স্থানীয় সম্প্রদায়ের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় সেখানকার মানুষ ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে।

টেক্সাসের এই দুর্যোগের অভিজ্ঞতা যেন আমাদের সেই কঠিন সময়ে সাহস যোগায়।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *