আকাশপথে পাঁচ মিনিটের আলাপ, আর তাতেই বাঁধা পড়ল ভালোবাসার বাঁধন। সম্প্রতি এমনই এক ভালোবাসার গল্প শোনা যাচ্ছে, যা অনেকের কাছেই হয়তো অনুপ্রেরণা।
ঘটনাটি ঘটেছে দুই বিমান কর্মীর জীবনে, যাদের পরিচয় হয় আকাশে, আর সেই পরিচয় ধীরে ধীরে গভীর প্রেমে রূপ নেয়।
২০১৭ সালের এক সকালে, ফ্লোরিডা থেকে লন্ডনগামী একটি বিমানে সহকর্মী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন হান্টার স্মিথ-লিহাস এবং জন লিহাস।
তাদের পরিচয়টা খুব বেশি দিনের নয়, কিন্তু বিমানের করিডোরে তাদের চোখাচোখি হওয়া, স্বল্প আলাপচারিতা, যেন এক নতুন দিগন্তের সূচনা করে।
হান্টার তখন স্পিরিট এয়ারলাইন্সে গেট এজেন্ট হিসেবে কাজ করতেন। ছোটবেলা থেকেই তার স্বপ্ন ছিল বিমান সেবিকা হওয়ার।
সেই স্বপ্নকে সত্যি করতে তিনি গেটের কাজকে একটি সিঁড়ি হিসেবে ব্যবহার করেন। অন্যদিকে জন ছিলেন একজন অভিজ্ঞ বিমানকর্মী।
তাদের প্রথম সাক্ষাতে, ডেল্টা এয়ারলাইন্সের একটি পিনের সূত্র ধরে তাদের মধ্যে আলাপ শুরু হয়। সেই আলাপের রেশ ধরেই চলে কথোপকথন, একে অপরের পেশা এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে।
যদিও সেই দিনের আলোচনা ছিল খুবই সংক্ষিপ্ত, কিন্তু তারা কেউই ভাবতে পারেননি এই সামান্য আলাপ এতদূর গড়াবে।
এরপর, অপ্রত্যাশিতভাবে তাদের মধ্যে যোগাযোগ বাড়ে। হান্টার, জনের ফেসবুক প্রোফাইল খুঁজে বন্ধুত্বের আবেদন পাঠান।
জনও দ্বিধা না করে সেই আবেদন গ্রহণ করেন। তারপর শুরু হয় তাদের নিয়মিত বার্তালাপ, যা ধীরে ধীরে গভীর ভালোবাসায় পরিণত হয়।
তাদের জীবনযাত্রার অনেক মিল ছিল, যা তাদের সম্পর্ককে আরও দৃঢ় করে তোলে। এমনকি তাদের পরিবারের সদস্যরাও ছিলেন কাছাকাছি, যা তাদের বন্ধনকে আরও সহজ করে দেয়।
মেসেজের মাধ্যমে কয়েকদিন কথা বলার পর জন, হান্টারকে একটি ডেটিংয়ের জন্য আমন্ত্রণ জানান। সেই আমন্ত্রণ ছিল অপ্রত্যাশিত, কিন্তু হান্টার রাজি হন।
এরপর শুরু হয় তাদের একসঙ্গে পথচলা। বিভিন্ন শহরে তাদের দেখা হত, যা তাদের ভালোবাসার গভীরতা আরও বাড়িয়ে দেয়।
দূরত্ব তাদের ভালোবাসার পথে বাধা হতে পারেনি। বরং, তারা একে অপরের জন্য সময় বের করতেন, যা তাদের সম্পর্ককে আরও মূল্যবান করে তুলেছিল।
তারা একসঙ্গে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে যেতেন, যা তাদের সম্পর্কের বন্ধনকে আরও মজবুত করে তোলে।
হান্টার যখন বিমান সেবিকার চাকরি পান, তখন তারা একসঙ্গে থাকার সিদ্ধান্ত নেন। তারা মিশিগানের ডেট্রয়েট শহরে বসবাস শুরু করেন।
একসঙ্গে নতুন শহরে আসাটা তাদের জন্য ছিল এক নতুন অভিজ্ঞতা। এরপর তাদের জীবনে আসে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত, যখন তারা জানতে পারেন যে, তারা একই ফ্লাইটে কাজ করছেন।
একসঙ্গে কাজ করাটা তাদের কাছে ছিল এক অসাধারণ অনুভূতি।
এরপর আসে বিয়ের প্রস্তাবের পালা। জন, হান্টারকে ভালোবাসার প্রতীক হিসেবে বিয়ের প্রস্তাব দেন।
তাদের পরিবার এবং বন্ধুদের উপস্থিতিতে তারা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। হান্টার তার বিয়ের পর তার নামের সঙ্গে লিহাস যোগ করেন।
বিয়ের পর তারা ইউরোপ ভ্রমণে যান, যা তাদের জীবনের অন্যতম স্মরণীয় অভিজ্ঞতা হয়ে থাকে।
বর্তমানে, হান্টার ও জন একটি বৃহৎ মার্কিন এয়ারলাইন্সে কাজ করছেন। তারা তাদের কাজকে ভালোবাসেন এবং একসঙ্গে আকাশে ওড়ার স্বপ্ন দেখেন।
তাদের এই ভালোবাসার গল্প, আমাদের বুঝিয়ে দেয়, জীবন সবসময় আমাদের জন্য সুন্দর কিছু অপেক্ষা করে রাখে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন