যুদ্ধ বন্ধ করতে কি পুতিনের দূত?

রাশিয়ার সঙ্গে চলমান যুদ্ধ এবং এর জের ধরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সম্ভাব্য নিষেধাজ্ঞার উদ্বেগের মধ্যে, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ মস্কোতে পৌঁছেছেন। বুধবার ভোরে তাঁর এই আকস্মিক সফর আন্তর্জাতিক মহলে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

ক্রেমলিনের অনুরোধে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হচ্ছে, যেখানে ট্রাম্প আগামী শুক্রবারের মধ্যে রাশিয়ার সঙ্গে শান্তি আলোচনার অগ্রগতি দেখতে চান।

উইটকফের মস্কো সফরের মূল উদ্দেশ্য হলো, ট্রাম্পের পক্ষ থেকে রাশিয়ার ওপর নতুন করে নিষেধাজ্ঞা আরোপের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করার আগে পরিস্থিতি বিবেচনা করা। জানা গেছে, বিমানবন্দরে উইটকফকে স্বাগত জানান রাশিয়ার বিনিয়োগ দূত কিরিল দিমিত্রিয়েভ।

ধারণা করা হচ্ছে, এই সফরে উইটকফ রাশিয়ার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তার সঙ্গে বৈঠক করবেন, এমনকি প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গেও তাঁর আলোচনার সম্ভাবনা রয়েছে। ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের বিষয়ে পুতিন উইটকফকে কতটা আশ্বস্ত করতে পারেন, সেদিকে এখন সবার নজর।

ট্রাম্প ইতোমধ্যেই ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, রাশিয়ার ওপর নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপের বিষয়ে তিনি আলোচনা শেষের ফলাফলের জন্য অপেক্ষা করছেন। হোয়াইট হাউসে দেওয়া এক বক্তব্যে তিনি বলেন, “আমরা আগামীকাল রাশিয়ার সঙ্গে একটি বৈঠকে বসব। সেখানে কী হয়, তা দেখব। তারপরই আমরা সিদ্ধান্ত নেব।”

আগের বৈঠকের তুলনায় বর্তমান পরিস্থিতি সম্পূর্ণ ভিন্ন। এপ্রিল মাসে পুতিনের সঙ্গে উইটকফের বৈঠকের পর থেকে ট্রাম্পের মধ্যে রাশিয়ার প্রতি অসন্তোষ বেড়েছে। এর কারণ, ইউক্রেনে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য যুক্তরাষ্ট্র-সহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রচেষ্টা সত্ত্বেও রাশিয়া ক্রমাগত ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালিয়ে যাচ্ছে।

বিশেষ করে ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভসহ বিভিন্ন শহরে হামলা বৃদ্ধি পাওয়ায় পরিস্থিতি আরও জটিল হয়েছে।

উইটকফের এই সফরের আগে, ট্রাম্প ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন। জেলেনস্কি জানিয়েছেন, সম্ভাব্য নিষেধাজ্ঞার কারণে রাশিয়ার অর্থনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন আসতে পারে।

এছাড়াও, বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ইউক্রেনে অস্ত্র সরবরাহ বাড়ানোর বিষয়েও আলোচনা হয়েছে।

ট্রাম্প রাশিয়ার প্রতি ক্রমশ ধৈর্য হারাচ্ছেন এবং পুতিনকে তীব্র ভাষায় আক্রমণ করছেন। তিনি রাশিয়ার বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, যার মধ্যে দেশটির অর্থনীতি এবং জ্বালানি পণ্য ক্রেতাদের ওপর নতুন নিষেধাজ্ঞা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

ট্রাম্পের এমন কঠোর অবস্থানের কারণে শুক্রবারের মধ্যে শান্তি চুক্তি সম্পন্ন হওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ বলেই মনে করা হচ্ছে।

তবে, রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা কতটা কার্যকর হবে, তা নিয়েও সন্দেহ প্রকাশ করেছেন ট্রাম্প। তিনি বলেছেন, “তারা নিষেধাজ্ঞা এড়াতে বেশ পারদর্শী। দেখা যাক কী হয়।”

এদিকে, মার্কিন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, রাশিয়ার জ্বালানি তেল কেনা অব্যাহত রাখলে চীন ও ভারতের ওপরও ‘সেকেন্ডারি ট্যারিফ’ আরোপ করার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। যদিও, চীনের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে আলোচনা চলছে, তাই দেশটির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের বিষয়ে ট্রাম্পের অবস্থান এখনো স্পষ্ট নয়।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, উইটকফের এই সফর এবং ট্রাম্পের কঠোর মনোভাব আন্তর্জাতিক সম্পর্ককে আরও একধাপ জটিল করে তুলেছে। এখন দেখার বিষয়, এই আলোচনার মাধ্যমে ইউক্রেন যুদ্ধের ভবিষ্যৎ এবং যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়ার সম্পর্ক কোন দিকে মোড় নেয়।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *