জাহাজের গোপন কুঠুরিতে লুকানো জীবন! বিজ্ঞানীরা খুঁজে পেলেন ভয়ঙ্কর তথ্য!

উত্তর আমেরিকার বৃহৎ হ্রদগুলোতে (Great Lakes) চলাচলকারী একটি জাহাজে পাওয়া গেছে এক রহস্যময় “ব্ল্যাক গু” (Black Goo)। সম্প্রতি বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করেছেন, এই আঠালো, আলকাতরার মতো দেখতে বস্তুটি আসলে অসংখ্য অণুজীবের (microorganisms) আবাসস্থল।

এই আবিষ্কার বিজ্ঞানীদের মধ্যে ব্যাপক কৌতূহল সৃষ্টি করেছে এবং তারা এর উৎস ও সম্ভাব্য প্রভাবগুলো জানার চেষ্টা করছেন।

মিনেসোটা-ডুলুথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (University of Minnesota Duluth) গবেষকরা জানিয়েছেন, “ব্লু হেরন” নামের একটি গবেষণা জাহাজের হাল ঘোরানোর দণ্ডের (rudder shaft) কাছ থেকে এই অদ্ভুত পদার্থটি পাওয়া গেছে।

সেপ্টেম্বরে হ্রদে শৈবালের (algae) বৃদ্ধি নিয়ে গবেষণা করার সময় জাহাজের কর্মীরা এর সন্ধান পান।

তারা দেখেন, একটি কালো, আঠালো বস্তু হাল ঘোরানোর দণ্ড থেকে ধীরে ধীরে নির্গত হচ্ছে।

কৌতূহলী হয়ে বিজ্ঞানীরা সেটির নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা চালান।

পরীক্ষায় দেখা যায়, এই “শিপগু-001” নামক বস্তুটি আসলে বিভিন্ন ধরনের অণুজীবের একটি জগৎ।

এর মধ্যে কিছু অণুজীব আগে কখনো দেখা যায়নি।

বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই অপ্রত্যাশিত আবিষ্কার তাদের বিস্মিত করেছে।

কারণ, জাহাজের ওই অংশে সাধারণত কোনো জীবন্ত বস্তুর থাকার কথা নয়।

অক্সিজেন-বিহীন পরিবেশে কীভাবে এই অণুজীবগুলো টিকে আছে, তা এখনো তাদের কাছে একটি রহস্য।

গবেষক দলের প্রধান, কোডি শেইক (Cody Sheik) জানিয়েছেন, তারা এখন এই “গু”-এর উৎস অনুসন্ধান করছেন।

তারা জানতে চান, কীভাবে এটি জাহাজে এলো এবং এটি কি জাহাজের কাঠামোর ক্ষতি (biocorrosion) করছে কিনা।

যদি এই বস্তু জাহাজের ক্ষতি করে, তবে তা জাহাজ নির্মাণ এবং রক্ষণাবেক্ষণে নতুন উদ্বেগের কারণ হতে পারে।

গবেষকরা বলছেন, এই “গু”-এর মধ্যে মিথেন উৎপাদনকারী কিছু অণুজীব পাওয়া গেছে, যা থেকে ভবিষ্যতে জৈব জ্বালানি (biofuel) তৈরির সম্ভাবনা রয়েছে।

এছাড়া, এই “গু”-এর ডিএনএ বিশ্লেষণ করে বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, এর কিছু অণুজীব বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের অনুরূপ পরিবেশেও পাওয়া যায়, যেমন—ভূমধ্যসাগরের আলকাতরাযুক্ত অঞ্চলে এবং কানাডার তেল-দূষিত স্থানে।

বোস্টন বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববিজ্ঞানের অধ্যাপক জেফরি মার্লো (Jeffrey Marlow) বলেছেন, নতুন প্রজাতির অণুজীব আবিষ্কার খুব একটা অস্বাভাবিক নয়, তবে তারা কোথায় পাওয়া যাচ্ছে এবং তাদের জিনগত বৈশিষ্ট্যগুলো কেমন, সেটাই গুরুত্বপূর্ণ।

তিনি আরও জানান, সম্ভবত “মেরিন স্নো” (marine snow)-এর মাধ্যমে এই “গু” হাল ঘোরানোর দণ্ডের কাছে পৌঁছেছিল।

মেরিন স্নো হলো সমুদ্রের তলদেশে জমা হওয়া মৃত জৈব পদার্থের স্তূপ, যেখানে অক্সিজেন-বিহীন স্থান থাকতে পারে।

গবেষকরা এই আবিষ্কারের পেছনের কারণগুলো জানতে জাহাজটির পুরনো ইতিহাস জানার চেষ্টা করছেন।

কারণ, প্রায় তিন দশক আগে এটি একটি মাছ ধরার নৌকা ছিল।

বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, আগের মালিক হয়তো হাল ঘোরানোর দণ্ডে তেল ব্যবহার করেছিলেন, যার ফলে এই অণুজীবগুলো সেখানে দীর্ঘদিন ধরে সুপ্ত অবস্থায় ছিল।

নভেম্বরের ২০২১ সালে জাহাজ পরিদর্শনের সময় এই “গু”-এর অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি।

এই আবিষ্কার বিজ্ঞানীদের মনে নতুন করে কৌতূহল সৃষ্টি করেছে।

তারা বলছেন, অপ্রত্যাশিত স্থানগুলোতেও হয়তো এমন অনেক অণুজীব বাস করে, যা এখনো আমাদের অজানা।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *