মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন কংগ্রেসম্যান তুলসী গাব্বার্ড সম্প্রতি কিছু গোপন নথি প্রকাশ করে দাবি করেছেন যে, ২০১৬ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিজয়কে বানচাল করার জন্য তৎকালীন ওবামা প্রশাসন ষড়যন্ত্র করেছিল। তিনি একে ‘দেশদ্রোহিতামূলক চক্রান্ত’ হিসেবেও অভিহিত করেছেন।
তবে প্রকাশিত নথিগুলো তার এই দাবির সত্যতা প্রমাণ করে না।
গাব্বার্ডের দাবি, গোয়েন্দা সংস্থাগুলো প্রথমে মনে করত, রাশিয়া নির্বাচনের ফলাফলে প্রভাব ফেলতে চায়নি। কিন্তু ট্রাম্প জয়ী হওয়ার পর তাদের মূল্যায়ন পাল্টে যায়।
তিনি আরও বলেন, বিতর্কিত ‘স্টিল ডossier’ (প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে তথ্যসংগ্রহ বিষয়ক নথি)-এর মতো ‘অগ্রহণযোগ্য’ তথ্য ব্যবহার করা হয়েছিল।
তবে, প্রকাশিত নথিগুলো পর্যালোচনা করে দেখা যায়, গাব্বার্ডের এই দাবিগুলো সঠিক নয়। বিভিন্ন তদন্তে জানা গেছে, রাশিয়া যে নির্বাচনে হস্তক্ষেপ করেছিল, সে বিষয়ে সবাই একমত।
এমনকি রিপাবলিকানদের নেতৃত্বাধীন তদন্তেও রাশিয়ার হস্তক্ষেপের বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে। যদিও রাশিয়ার আসল উদ্দেশ্য কী ছিল, তা নিয়ে কিছু ভিন্নমত ছিল।
কারও মতে, ট্রাম্পকে জেতানোই ছিল তাদের লক্ষ্য, আবার কারও মতে, তারা চেয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে।
গাব্বার্ড তার দাবির স্বপক্ষে ২০১৬ সালের কিছু ইমেইল উদ্ধৃত করেছেন। যেখানে বলা হয়েছে, রাশিয়া সরাসরি ভোটের ফলাফলে কারচুপি করতে চায়নি।
তবে ওবামা প্রশাসন কখনও এমন কথা বলেনি যে, রাশিয়ার কর্মীরা ভোট গ্রহণ প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করেছে। তাদের মতে, রুশ এজেন্টরা ডেমোক্রেটদের গুরুত্বপূর্ণ ইমেইল হ্যাক করে উইকিলিকসের মাধ্যমে প্রকাশ করে এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভেদ সৃষ্টির চেষ্টা করে।
এই ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে ২০১৮ সালে দুই ডজনের বেশি রুশ নাগরিকের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়।
গাব্বার্ড আরও দাবি করেন, নির্বাচনের আগে গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর মূল্যায়নে পরিবর্তন আনা হয়েছিল। কিন্তু প্রকাশিত নথিতে দেখা যায়, ২০১৬ সালের আগস্টে ডিপার্টমেন্ট অফ হোমল্যান্ড সিকিউরিটির একজন কর্মকর্তা তৎকালীন ন্যাশনাল ইন্টেলিজেন্সের পরিচালক জেমস ক্ল্যাপারকে জানান, রাশিয়া সরাসরি ভোটের ফলাফল পরিবর্তন করতে চাইছে এমন কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
২০১৭ সালের জানুয়ারিতে ওবামা প্রশাসনও একই কথা জানায়।
অন্যদিকে, ২০১৬ সালের নির্বাচনে রাশিয়ার হস্তক্ষেপের বিষয়ে এখনো বিতর্ক চলছে। যদিও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন সরাসরি বলেছেন, তিনি ট্রাম্পকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে দেখতে চেয়েছিলেন, কারণ ট্রাম্প রাশিয়া-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ককে স্বাভাবিক করতে চেয়েছিলেন।
গাব্বার্ড স্টিল ডossier নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। এই নথিতে ট্রাম্পের সঙ্গে রাশিয়ার যোগসাজশের কিছু অভিযোগ ছিল, যা নির্বাচনে বিরোধীদের পক্ষ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছিল।
যদিও এই ডossier-এর তথ্যের সত্যতা যাচাই করা যায়নি এবং এর ওপর ভিত্তি করে এফবিআই (Federal Bureau of Investigation) তদন্ত শুরু করেনি।
তবে, এফবিআই এবং বিচার বিভাগ এই ডossier ব্যবহার করে ট্রাম্পের একজন সাবেক উপদেষ্টার ওপর নজরদারির অনুমতি চেয়েছিল।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস