সুস্থ পায়ের গুরুত্ব: পায়ের যত্ন নিন, সুস্থ থাকুন!
আমাদের শরীরের ভিত্তি হল পা। একটি মজবুত ও সুস্থ পায়ের উপর দাঁড়িয়েই আমরা প্রতিদিনের কাজকর্ম করি। হাঁটাচলা থেকে শুরু করে খেলাধুলা, এমনকি দৈনন্দিন জীবনের সাধারণ কাজগুলিও পায়ের মাধ্যমেই সম্পন্ন হয়।
কিন্তু আমরা ক’জনই বা পায়ের স্বাস্থ্যের প্রতি মনোযোগ দিই? পায়ের সামান্য সমস্যা থেকেই কোমর, হাঁটু এবং গোড়ালিতে ব্যথা হতে পারে। তাই পায়ের যত্ন নেওয়াটা অত্যন্ত জরুরি।
পায়ের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে হলে নিয়মিত কিছু ব্যায়াম করা প্রয়োজন। আমেরিকার একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, ড. এমিলি স্প্লিখাল, পায়ের স্বাস্থ্য ভালো রাখার জন্য কয়েকটি সহজ ব্যায়ামের পরামর্শ দিয়েছেন। এই ব্যায়ামগুলো খুব সহজেই বাড়িতে করা যায় এবং এর জন্য বিশেষ কোনো সরঞ্জামেরও প্রয়োজন হয় না।
প্রথমেই আসা যাক পায়ের কিছু সাধারণ সমস্যায়। অনেক সময় পায়ের পাতা বা গোড়ালিতে ব্যথা হয়, যাকে ডাক্তারি ভাষায় প্ল্যান্টার ফ্যাসাইটিস বা অ্যাকিলিস টেন্ডিনোপ্যাথি বলা হয়। এছাড়া, পায়ের বুড়ো আঙুলে হাড় বেড়ে যাওয়া বা ফোস্কার মতো সমস্যাও দেখা যায়।
এই সমস্যাগুলো থেকে মুক্তি পেতে এবং পাকে সুস্থ রাখতে নিয়মিত ব্যায়াম করা প্রয়োজন।
ডা. স্প্লিখালের পরামর্শ অনুযায়ী, পায়ের স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য কয়েকটি সহজ উপায় রয়েছে।
- টো স্প্রেড টেস্ট (Toe Spread Test): বসে থেকে চেষ্টা করুন পায়ের আঙুলগুলো মাটি থেকে না তুলে ফাঁক করতে পারেন কিনা। যদি আঙুলগুলো বেশি না নড়াচড়া করে, তাহলে বুঝতে হবে আপনার পায়ের নমনীয়তা কম।
- আর্চ কন্ট্রোল অ্যাসেসমেন্ট (Arch Control Assessment): দুই পায়ের পাতার মাঝে সামান্য ফাঁক রেখে সোজা হয়ে দাঁড়ান। এবার চেষ্টা করুন পায়ের পাতা মাটি থেকে না তুলে গোড়ালি উঁচু করতে পারেন কিনা। যদি গোড়ালি উঁচু করতে সমস্যা হয়, তাহলে পায়ের মাংসপেশি দুর্বল হতে পারে।
- কাফ-রাইজ কোয়ালিটি (Calf-raise Quality): এক পায়ের উপর ভর দিয়ে ২০ বার গোড়ালি উঁচু করার চেষ্টা করুন। ব্যালেন্সের জন্য দেয়াল বা চেয়ারের সাহায্য নিতে পারেন। যদি গোড়ালিতে ব্যথা হয় বা ভারসাম্য বজায় রাখতে সমস্যা হয়, তবে বুঝতে হবে আপনার পায়ের পেশি দুর্বল।
এই পরীক্ষাগুলো রোগ নির্ণয়ের জন্য নয়, বরং আপনার পায়ের অবস্থা সম্পর্কে ধারণা পেতে সাহায্য করবে।
ডা. স্প্লিখাল পায়ের শক্তি বাড়াতে তিনটি সহজ ব্যায়ামের পরামর্শ দিয়েছেন, যা প্রতিদিন মাত্র কয়েক মিনিটেই করা সম্ভব:
- ফরোয়ার্ড লিন (Forward Lean): সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে পায়ের আঙুলগুলো প্রসারিত করুন। এরপর সামান্য সামনের দিকে ঝুঁকুন। খেয়াল রাখবেন, আপনার পায়ের আঙুলগুলো যেন মাটি আঁকড়ে ধরে। এটি পায়ের পেশীকে সক্রিয় করে এবং পায়ের ভারসাম্য বাড়াতে সাহায্য করে। এভাবে ৫ বার করুন।
- শর্ট ফুট এক্সারসাইজ (Short Foot Exercise): একটি পায়ের উপর ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে অন্য পায়ের পাতা দিয়ে মাটি চেপে ধরুন। শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক রেখে ৫ বার এই ব্যায়ামটি করুন।
- সিঙ্গেল-লেগ ব্যালেন্স (Single-leg Balance): আগের দুটি ব্যায়াম করার পর এক পায়ে ভর দিয়ে ১০ সেকেন্ডের জন্য দাঁড়ানোর চেষ্টা করুন। এরপর অন্য পায়ে একই কাজ করুন।
ডা. স্প্লিখাল প্রতিদিন এই তিনটি ব্যায়াম করার পরামর্শ দেন: “প্রতিদিন ৫ বার ফরোয়ার্ড লিন, ৫ বার শর্ট ফুট এক্সারসাইজ এবং দুই পায়ের উপর ১০ সেকেন্ডের জন্য ব্যালেন্স তৈরি করা উচিত।”
জুতো বাছাইয়ের ক্ষেত্রেও আমাদের সচেতন হতে হবে। অতিরিক্ত উঁচু হিলের জুতো বা সরু ডিজাইন পায়ের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। এমন জুতো বেছে নেওয়া উচিত যা পায়ের পাতা ভালোভাবে ধরে রাখতে পারে।
পায়ের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে হলে, হালকা ও পায়ের জন্য আরামদায়ক জুতো ব্যবহার করা উচিত।
পায়ের যত্নে আরও কিছু বিষয় মনে রাখতে পারেন। যেমন, প্রতিদিন রাতে ঘুমানোর আগে পায়ের আঙুলের ফাঁকে স্পেসার ব্যবহার করা এবং দিনে দুবার একটি টেক্সচার্ড বলের উপর পা রেখে ম্যাসাজ করা।
ডা. স্প্লিখালের মতে, “আপনার পায়ের স্বাস্থ্য আপনার সামগ্রিক সুস্থতার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নিয়মিত ব্যায়াম, সঠিক জুতো নির্বাচন এবং পায়ের সঠিক যত্ন নিলে আপনি অনেক সমস্যার থেকে মুক্তি পেতে পারেন।”
সুতরাং, পায়ের যত্ন নিন এবং সুস্থ জীবন যাপন করুন!
তথ্য সূত্র: সিএনএন