বর্তমান যুগে বহু কাজ একসঙ্গে করার প্রবণতা বাড়ছে, কিন্তু এর ফলস্বরূপ মনোযোগ কমে যাওয়া এবং মানসিক চাপ বেড়ে যাওয়ার মতো সমস্যাগুলোও বাড়ছে। মনোনিবেশ করার ক্ষমতা আমাদের দৈনন্দিন জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে, বিশেষ করে পড়াশোনা ও কর্মজীবনে সাফল্যের জন্য অত্যন্ত জরুরি।
মনো-টাস্কিং বা একটি সময়ে একটি কাজ করার ধারণাটি এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
বহু কাজ একসঙ্গে করার ধারণাটি নতুন নয়। প্রযুক্তির উন্নতির সাথে সাথে, আমরা এখন একই সময়ে একাধিক কাজ করতে অভ্যস্ত হয়ে গেছি। স্মার্টফোন ব্যবহারের কারণে, একই সঙ্গে টিভি দেখা, বন্ধুদের সাথে কথা বলা অথবা অফিসের কাজ করা আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
কিন্তু এর ফলস্বরূপ, আমাদের মস্তিষ্ক অতিরিক্ত তথ্যের চাপে ক্লান্ত হয়ে পড়ে। পড়াশোনা অথবা অফিসের গুরুত্বপূর্ণ মিটিংয়ে মনোযোগ ধরে রাখা কঠিন হয়ে যায়, যা আমাদের কর্মক্ষমতা কমিয়ে দেয়।
মনো-টাস্কিংয়ের ধারণাটি এক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মনো-টাস্কিং মানে হলো, একটি সময়ে একটি কাজ করা। মনো-টাস্কিংয়ের মাধ্যমে আমরা আমাদের মনোযোগকে একটি নির্দিষ্ট কাজের প্রতি কেন্দ্রীভূত করতে পারি, যা আমাদের কাজের গুণগত মান বাড়াতে সাহায্য করে।
মনো-টাস্কিংয়ের ফলে মানসিক চাপ কমে এবং কাজের প্রতি আগ্রহ বাড়ে।
তাহলে, কিভাবে আমরা মনো-টাস্কিংয়ের অভ্যাস তৈরি করতে পারি?
- ছোট পদক্ষেপ দিয়ে শুরু করুন: প্রথমে ছোট ছোট কাজগুলো একটি সময়ে করার চেষ্টা করুন। যেমন, এক ঘণ্টা বই পড়ুন, অথবা কোনো একটি প্রজেক্ট শেষ করার চেষ্টা করুন, অন্য কোনো কাজ হাতে না নিয়ে।
- অন্যান্য বিষয় থেকে মনোযোগ সরিয়ে আনুন: মোবাইল ফোন, সামাজিক মাধ্যম বা অন্যান্য বিক্ষিপ্ত করার মতো বিষয়গুলো থেকে নিজেকে দূরে রাখুন। কাজ করার সময় শুধু কাজের প্রতি মনোযোগ দিন।
- সময় নির্ধারণ করুন: পমোদোরো টেকনিকের মতো সময় নির্ধারণ করার কৌশল ব্যবহার করতে পারেন। নির্দিষ্ট সময়ের জন্য কাজ করুন এবং মাঝে বিশ্রাম নিন।
- সাধারণ কাজগুলো মনো-টাস্কিংয়ের অনুশীলন হিসেবে ব্যবহার করুন: ঘর পরিষ্কার করা, কাপড় ভাঁজ করা অথবা বাগান করা—এগুলোও মনো-টাস্কিংয়ের ভালো অনুশীলন হতে পারে।
- মনের উপর নিয়ন্ত্রণ আনুন: যখনই অনুভব করবেন আপনার মনোযোগ বিক্ষিপ্ত হচ্ছে, তখনই ধীরে ধীরে আবার কাজের প্রতি মনোযোগ দিন।
মনো-টাস্কিংয়ের অভ্যাস তৈরি করা কঠিন হতে পারে, তবে এটি আমাদের জীবনযাত্রায় ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে পারে। যারা ছাত্রজীবনে ভালো ফল করতে চায় বা কর্মজীবনে উন্নতি করতে আগ্রহী, তাদের জন্য মনো-টাস্কিং একটি গুরুত্বপূর্ণ দক্ষতা।
এটি আমাদের মনোযোগ বাড়ায়, মানসিক চাপ কমায় এবং কাজের গুণগত মান উন্নত করে। তাই, মাল্টিটাস্কিংয়ের পরিবর্তে মনো-টাস্কিংয়ের অভ্যাস গড়ে তোলার চেষ্টা করা উচিত।
তথ্য সূত্র: হেলথলাইন।