সপ্তাহের ব্যায়ামের সময়কে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করে ব্যায়াম করার পদ্ধতি এখন বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে, যা ‘স্প্লিট ট্রেনিং’ (Split Training) নামে পরিচিত। এই পদ্ধতিতে, শরীরের বিভিন্ন অংশের পেশী বা নির্দিষ্ট কিছু মুভমেন্ট প্যাটার্নের উপর জোর দিয়ে আলাদা আলাদা দিনে ব্যায়াম করা হয়।
এই ধরনের ব্যায়ামের প্রধান উদ্দেশ্য হল শরীরের শক্তি বৃদ্ধি করা, পেশীর আকার বাড়ানো এবং আঘাতের ঝুঁকি কমানো। আসুন, স্প্লিট ট্রেনিং-এর বিভিন্ন দিক এবং এর উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
স্প্লিট ট্রেনিং-এর মূল সুবিধা হল, এটি পেশীগুলিকে পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেওয়ার সুযোগ দেয়। ব্যায়ামের মধ্যে বিরতি থাকার কারণে পেশীগুলি সেরে ওঠার সময় পায়, যা তাদের শক্তিশালী হতে সাহায্য করে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, একটি পেশী গ্রুপের ব্যায়াম করার পর সেই পেশীটিকে আবার ব্যায়াম করার জন্য অন্তত ৪৮ ঘণ্টা বিশ্রাম দেওয়া উচিত।
সাধারণত, ব্যায়ামের সময়কে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করার কয়েকটি জনপ্রিয় পদ্ধতি রয়েছে:
১. **ফুল-বডি স্প্লিট (Full-body Split):** এই পদ্ধতিতে, সপ্তাহে ২-৩ দিন পুরো শরীরের ব্যায়াম করা হয়। প্রত্যেক সেশনে শরীরের সব পেশীগুলির উপর কাজ করা হয়।
যারা সবেমাত্র ব্যায়াম শুরু করেছেন বা সময় কম পান, তাঁদের জন্য এই পদ্ধতিটি বেশ উপযোগী।
২. **আপার/লোয়ার বডি স্প্লিট (Upper/Lower Body Split):** এই পদ্ধতিতে, শরীরের উপরের অংশ (বুক, পিঠ, হাত) এবং নিচের অংশের (পা) ব্যায়াম আলাদা আলাদা দিনে করা হয়। সাধারণত, একটি আপার বডি ওয়ার্কআউটের পরে একটি লোয়ার বডি ওয়ার্কআউট করা হয়।
এর ফলে পেশীগুলি পর্যাপ্ত বিশ্রাম পায় এবং ব্যায়ামের মানও ভালো থাকে।
৩. **পুষ/পুল/লেগস স্প্লিট (Push/Pull/Legs Split):** এই পদ্ধতিতে, ব্যায়ামগুলিকে মুভমেন্ট প্যাটার্নের উপর ভিত্তি করে ভাগ করা হয়। ‘পুষ’ অংশে বুকের ব্যায়াম, কাঁধের ব্যায়াম এবং ট্রাইসেপসের ব্যায়াম অন্তর্ভুক্ত থাকে।
‘পুল’ অংশে পিঠের ব্যায়াম, বাইসেপসের ব্যায়াম এবং কাঁধের কিছু ব্যায়াম থাকে। আর ‘লেগস’ অংশে পায়ের ব্যায়াম করা হয়।
এই পদ্ধতিটি একটু উন্নত পর্যায়ের ব্যায়ামকারীদের জন্য বেশি উপযোগী।
৪. **ইন্ডিভিজুয়াল বডি পার্টস স্প্লিট (Individual Body Parts Split):** এই পদ্ধতিতে, প্রতিদিন একটি বা দুটি নির্দিষ্ট পেশী গ্রুপের উপর জোর দেওয়া হয়। উদাহরণস্বরূপ, সোমবার বুকের ব্যায়াম, মঙ্গলবার পায়ের ব্যায়াম, বুধবার বিশ্রাম, বৃহস্পতিবার কাঁধের ব্যায়াম—এভাবে একটি পরিকল্পনা করা যেতে পারে।
এই পদ্ধতিটি পেশীর আকার বাড়াতে এবং শরীরের কোনো বিশেষ অংশের দুর্বলতা দূর করতে সহায়ক।
স্প্লিট ট্রেনিংয়ের সময় কিছু বিষয় মনে রাখা দরকার:
* ব্যায়ামের আগে শরীরকে ভালোভাবে গরম করা (warm-up) এবং পরে ঠান্ডা করা (cool-down) জরুরি।
* পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেওয়া এবং সঠিক খাদ্যাভ্যাস অনুসরণ করা প্রয়োজন।
* নিজের শরীরের ক্ষমতা অনুযায়ী ব্যায়ামের পরিকল্পনা করা উচিত।
* নিয়মিত ব্যায়াম করা এবং ধৈর্য ধরে ফলাফল দেখার চেষ্টা করতে হবে।
আপনি যদি ব্যায়াম শুরু করতে চান, তাহলে আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী একটি স্প্লিট ট্রেনিং পদ্ধতি বেছে নিতে পারেন। শুরুতে ফুল-বডি স্প্লিট বা আপার/লোয়ার বডি স্প্লিট চেষ্টা করতে পারেন।
সময়ের সাথে সাথে আপনি আপনার প্রয়োজন ও লক্ষ্যের ভিত্তিতে অন্যান্য পদ্ধতিগুলিও অনুসরণ করতে পারেন। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল, নিয়মিত ব্যায়াম করা এবং স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করা।
তথ্য সূত্র: হেলথলাইন