যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেনের জন্য পাঠানো অস্ত্র কি ফিরিয়ে আনছে যুক্তরাষ্ট্র? তোলপাড়!

যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র নীতিতে পরিবর্তন: ইউক্রেনকে সরবরাহ করার জন্য তৈরি হওয়া সামরিক সরঞ্জাম এখন কি যুক্তরাষ্ট্রের গুদামে ফিরিয়ে নেওয়া হবে?

পেন্টাগন একটি নতুন নীতির খসড়া তৈরি করেছে, যেখানে ইউক্রেনকে দেওয়ার জন্য তৈরি করা কিছু সামরিক সরঞ্জাম এখন যুক্তরাষ্ট্রের গুদামে ফিরিয়ে নেওয়ার সুযোগ রয়েছে। বিষয়টি নিয়ে এরই মধ্যে আলোচনা শুরু হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, এর ফলে ইউক্রেনকে সামরিক সহায়তা দেওয়ার ক্ষেত্রে বড় ধরনের পরিবর্তন আসতে পারে। খবরটি দিয়েছে সিএনএন।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা বিভাগের নীতিনির্ধারক এক কর্মকর্তার দেওয়া গোপনীয় একটি স্মারকলিপিতে এই পরিবর্তনের কথা বলা হয়েছে। এর ফলে ইউক্রেন যুদ্ধের জন্য নির্ধারিত কয়েক বিলিয়ন ডলার মূল্যের অস্ত্রশস্ত্র এখন যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক ভাণ্ডারকে সমৃদ্ধ করতে কাজে লাগতে পারে। তবে এমন সিদ্ধান্তের কারণে ইউক্রেনকে অস্ত্র সরবরাহের বিষয়টি আরও অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই মুহূর্তে যদি যুক্তরাষ্ট্রের এমন পদক্ষেপ নেওয়ার সম্ভবনা তৈরি হয়, তবে তা ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড় নিতে পারে। কারণ, ইউক্রেনকে অস্ত্র সরবরাহ নিয়ে এরই মধ্যে পেন্টাগনের মধ্যে গভীর উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে ক্ষেপণাস্ত্র, বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এবং গোলন্দাজ অস্ত্রের মতো প্রয়োজনীয় সামরিক সরঞ্জামের সরবরাহ কমে যাওয়ায় এই উদ্বেগ বাড়ছে।

গত মাসে, প্রতিরক্ষা সচিব একটি বড় অস্ত্র প্যাকেজ ইউক্রেনে পাঠানোর প্রক্রিয়া স্থগিত করেছিলেন। সেই সময় প্রতিরক্ষা বিভাগের নীতি বিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি এলব্রিজ কলবির লেখা একটি স্মারকলিপির ভিত্তিতেই এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এলব্রিজ কলবি ইউক্রেনকে অস্ত্র সরবরাহের বিষয়ে সন্দিহান ছিলেন। যদিও পরে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইউক্রেনকে অস্ত্র সরবরাহ অব্যাহত রাখার নির্দেশ দেন। একইসঙ্গে, তিনি ন্যাটোর সঙ্গে একটি চুক্তি করেন, যার মাধ্যমে ইউরোপীয় মিত্রদের অর্থে ইউক্রেনকে আরও কয়েক বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র দেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়।

তবে কলবির স্মারকলিপি এখনো কার্যকর রয়েছে। এর নতুন একটি ধারায় বলা হয়েছে, কংগ্রেসের তহবিল থেকে ইউক্রেনের জন্য তৈরি করা অস্ত্রশস্ত্র পেন্টাগন চাইলে নিজেদের সামরিক ভাণ্ডারে ফেরত নিতে পারবে। যদিও জানা গেছে, এখনো পর্যন্ত কোনো অস্ত্র ফেরত নেওয়া হয়নি। তবে এমনটা হলে ইউক্রেন কয়েক বিলিয়ন ডলার মূল্যের সামরিক সরঞ্জাম থেকে বঞ্চিত হতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রের ইউক্রেন নিরাপত্তা সহায়তা উদ্যোগের (Ukraine Security Assistance Initiative – USAI) আওতায় ২০১৬ সালে এই কর্মসূচি শুরু হয়। সাধারণত এই প্রকল্পের মাধ্যমে ইউক্রেনকে নিয়মিত অস্ত্র সরবরাহ করা হতো। সম্প্রতি, যুক্তরাষ্ট্রের সিনেট প্রতিরক্ষা বিভাগের বার্ষিক বাজেট আইন, ন্যাশনাল ডিফেন্স অথরাইজেশন অ্যাক্টের অংশ হিসেবে ইউএসএআই-এর জন্য আরও ৮০০ মিলিয়ন ডলার বরাদ্দ করেছে। তবে নতুন নীতির কারণে এই অর্থ দিয়ে কেনা অস্ত্রগুলো ইউক্রেনকে দেওয়া হবে কিনা, তা এখনো স্পষ্ট নয়।

আগের প্রশাসনগুলোর অধীনে, শীর্ষ পেন্টাগন কর্মকর্তারা মনে করতেন, ইউএসএআই-এর মাধ্যমে উৎপাদিত অস্ত্রগুলো যুক্তরাষ্ট্রের গুদামে ফেরত পাঠানো হলে তা ‘ইমপাউন্ডমেন্ট কন্ট্রোল অ্যাক্ট’ লঙ্ঘন করবে। এই আইন কংগ্রেসের ক্ষমতাকে আরও শক্তিশালী করে এবং কংগ্রেস কর্তৃক অনুমোদিত কোনো তহবিল বিলম্বিত বা আটকে দেওয়ার বিষয়ে প্রেসিডেন্টকে আইনপ্রণেতাদের অবহিত করতে হয়।

অন্যদিকে, সিনেটে নতুন এই নীতির বিরোধিতা করা হচ্ছে। ২০২৬ সালের জন্য প্রস্তাবিত ন্যাশনাল ডিফেন্স অথরাইজেশন অ্যাক্টে আইনপ্রণেতারা একটি ধারা যুক্ত করেছেন। যেখানে বলা হয়েছে, যদি কোনো অস্ত্র ইউক্রেনে পাঠানো না হয়ে থাকে এবং ইউএসএআই প্রশিক্ষণ, সরঞ্জাম ও পরামর্শমূলক কার্যক্রমে ব্যবহারের প্রয়োজন না হয়, তবেই কেবল সেগুলো পেন্টাগন ফিরিয়ে নিতে পারবে। এছাড়াও, অস্ত্রগুলো ফেরত নেওয়ার আগে প্রতিরক্ষা সচিবকে কংগ্রেসকে অবহিত করতে হবে।

নতুন এই নীতি এমন এক সময়ে আসছে, যখন ট্রাম্প প্রশাসন ইউক্রেনকে অস্ত্র, সরঞ্জাম এবং প্রশিক্ষণ দেওয়ার ক্ষেত্রে ইউরোপ ও ন্যাটোর ওপর বেশি নির্ভর করতে চাইছে। এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি তার ভাণ্ডার থেকে ইউক্রেনকে অস্ত্র পাঠানোর জন্য প্রায় ৪ বিলিয়ন ডলারের তহবিল অনুমোদন করেছে।

তবে, পেন্টাগন এবং ন্যাটোর মধ্যে একটি নতুন ব্যবস্থা তৈরির কাজ চলছে, যার মাধ্যমে ইউরোপীয় মিত্ররা যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে অস্ত্র কিনতে পারবে এবং পরে সেগুলো ইউক্রেনকে সরবরাহ করতে পারবে। এই লক্ষ্যে ন্যাটোর একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট তৈরির পরিকল্পনা করা হচ্ছে। যেখানে মিত্র দেশগুলো ইউক্রেনকে অস্ত্র কেনার জন্য অর্থ জমা করতে পারবে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, ন্যাটোর এই অ্যাকাউন্টে ইউক্রেনের জন্য অস্ত্র কেনার উদ্দেশ্যে প্রায় ১০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। এই নীতির কারণে যদিও ইউরোপ বর্তমানে ইউক্রেনকে অস্ত্র দেওয়ার ক্ষেত্রে পিছু হটবে না, তবে তারা যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে আরও বেশি সহায়তার প্রত্যাশা করছে।

যুক্তরাষ্ট্রের এই নতুন নীতি ইউক্রেনকে সামরিক সহায়তার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনতে পারে। এই পরিস্থিতিতে রাশিয়ার সঙ্গে তাদের সম্পর্ক এবং আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে এর প্রভাব কেমন হবে, তা এখন দেখার বিষয়।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *