শিরোনাম: জিম ছাড়াই সুস্থ জীবন: দৈনন্দিন জীবনে হাঁটাচলার অভ্যাস গড়ে তুলুন
শারীরিক সক্রিয়তা আমাদের সুস্থ জীবনের জন্য খুবই জরুরি। নিয়মিত ব্যায়াম করলে শরীর ভালো থাকে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে এবং আয়ু বাড়ে। কিন্তু অনেকের পক্ষেই প্রতিদিন জিমে যাওয়া সম্ভব হয় না।
তবে, আপনি যদি চান, তাহলে জিমে না গিয়েও আপনার স্বাস্থ্য ভালো রাখতে পারেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দৈনন্দিন কিছু সহজ অভ্যাসের মাধ্যমে আমরা আমাদের শরীরকে আরও সক্রিয় রাখতে পারি।
যুক্তরাষ্ট্রের রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্র (US Centers for Disease Control and Prevention) এর তথ্যমতে, আমেরিকানরা প্রতিদিন গড়ে ৬ থেকে ৮ ঘণ্টা বসে কাটায়। অতিরিক্ত বসে থাকার কারণে হৃদরোগ, টাইপ ২ ডায়াবেটিস এবং অতিরিক্ত ওজনের মতো সমস্যাগুলো হতে পারে।
তাই, বসে থাকার পরিমাণ কমাতে এবং শরীরের নড়াচড়া বাড়াতে কিছু বিষয় মেনে চলা জরুরি।
বিশেষজ্ঞদের মতে, আমাদের দৈনন্দিন জীবনে ছোট ছোট কিছু পরিবর্তন এনে শারীরিক সক্রিয়তা বাড়ানো সম্ভব। ডানা সান্তাস নামক একজন বিশেষজ্ঞ, যিনি ‘মোবিলিটি মেকার’ নামে পরিচিত, বলেছেন, ব্যায়ামের বাইরের এই নড়াচড়াগুলো আমাদের শরীরের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
- রান্নাঘরে হাঁটাচলা করা।
- ছোটখাটো কাজ করা।
- বসার পরিবর্তে দাঁড়িয়ে থাকা।
- হাতের আঙুল নাড়াচাড়া করা।
এই ছোট ছোট কাজগুলোও আমাদের শরীরের ক্যালোরি পোড়াতে এবং মেটাবলিজমকে উন্নত করতে সাহায্য করে।
আসুন জেনে নেই এমন ১৪টি উপায়, যা আপনাকে জিম ছাড়াই সক্রিয় থাকতে সাহায্য করবে:
- খাবার গরম হওয়ার সময়: খাবার গরম হওয়ার সময় বসে না থেকে কিছু স্কোয়াট বা দেয়ালের সাথে হেলান দিয়ে বসার মতো ব্যায়াম করতে পারেন। অথবা, অফিসের আশেপাশে একটু হেঁটে আসুন।
- দোকানে যাওয়ার সময়: দোকানে যাওয়ার সময় গাড়ি পার্কিং করলে একটু দূরে পার্ক করুন, যাতে হেঁটে দোকানে যেতে পারেন।
- কাছাকাছি গন্তব্যের জন্য: কাছাকাছি কোথাও যাওয়ার জন্য হেঁটে বা সাইকেলে যান। এতে আপনার পায়ে এবং হৃদযন্ত্রে কাজের চাপ বাড়বে।
- লিফটের বদলে সিঁড়ি ব্যবহার করুন: সিঁড়ি ব্যবহার করলে শরীরের গঠন উন্নত হয় এবং কোলেস্টেরলের মাত্রা কমে। সম্ভব হলে, একবারে দুটি সিঁড়ি ডিঙিয়ে উঠুন। প্রতিদিন পাঁচ তলার বেশি সিঁড়ি ব্যবহার করলে মৃত্যুর ঝুঁকি ৭ থেকে ৯ শতাংশ পর্যন্ত কমে যায়।
- ফোনে কথা বলার সময়: ফোনে কথা বলার সময় বসে না থেকে আশেপাশে হাঁটাহাঁটি করুন। হাঁটা ডায়াবেটিস, ক্যান্সার, হৃদরোগ এবং স্মৃতিভ্রংশতার ঝুঁকি কমাতে সহায়ক।
- টিভি দেখার সময়: পছন্দের অনুষ্ঠান দেখতে দেখতে হালকা ওজনের কিছু ব্যায়াম বা দৌড়ানোর চেষ্টা করতে পারেন।
- দাঁড়িয়ে কাজ করার ব্যবস্থা: একটি স্ট্যান্ডিং ডেস্ক ব্যবহার করুন। গবেষণায় দেখা গেছে, যারা বসে কাজ করেন, তাদের তুলনায় যারা দাঁড়িয়ে কাজ করেন, তাদের অকাল মৃত্যুর ঝুঁকি কম থাকে। তবে, দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পরিবর্তে মাঝে মাঝে বিরতি নিন।
- আলোচনা আউটডোরে করুন: সম্ভব হলে অফিসের মিটিংগুলো বাইরে করুন।
- ডেস্কের নিচে ট্রেডমিল ব্যবহার করুন: কাজের সময় ট্রেডমিল বা ওয়াকিং প্যাড ব্যবহার করতে পারেন।
- দাঁত ব্রাশ করার সময়: দাঁত ব্রাশ করার সময় হালকা কিছু ক্যালফ রাইজ (calf raises) করতে পারেন। ব্যালেন্সের সমস্যা থাকলে, প্রথমে দেয়ালে হাত রেখে চেষ্টা করুন।
- বাজার করার সময়: বাজার করার সময় বাজারের ব্যাগ নিজে বহন করুন।
- হাঁটার গতি বাড়ান: যারা নিয়মিত হাঁটেন, তারা হাঁটার গতি বাড়িয়ে দিন। ঘণ্টায় ৬.৪ কিলোমিটার (৪ মাইল) এর বেশি গতিতে হাঁটলে টাইপ ২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমে। হাঁটার সময় মাঝে মাঝে কিছু লান্জ বা বেঞ্চের উপর ওঠা-নামা করতে পারেন।
- ঘরের কাজ দ্রুত করুন: ঘর পরিষ্কার করার সময় দ্রুত কাজ করলে আপনার হাত ও পায়ের পেশিতে চাপ পড়বে, যা হৃদস্পন্দন বাড়াতে সহায়ক।
- প্রতি ঘণ্টায় ৫-১০ মিনিটের জন্য হাঁটুন: প্রতিদিন অন্ততপক্ষে এক ঘণ্টা মাঝারি গতিতে হাঁটা উচিত। গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতিদিন ৬০ থেকে ৭৫ মিনিট মাঝারি-তীব্রতার শারীরিক কার্যকলাপ করলে অতিরিক্ত বসে থাকার কারণে অকাল মৃত্যুর ঝুঁকি কমে যায়।
এসব ছোট ছোট পদক্ষেপ আপনার জীবনযাত্রায় বড় পরিবর্তন আনতে পারে। তাই, আজ থেকেই চেষ্টা করুন এবং সুস্থ জীবন যাপন করুন।
তথ্য সূত্র: সিএনএন