অ্যাকাই বিপর্যয়ে ট্রাম্পের খাঁড়া! ব্রাজিলের চাষিদের চোখে জল?

শিরোনাম: ট্রাম্পের শুল্কের কারণে ব্রাজিলের ‘সুপারফুড’ আকাই বেরি উৎপাদনে সংকট, উদ্বেগে রপ্তানিকারকরা

যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আমলে ব্রাজিলের পণ্য আমদানির ওপর শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্তে দেশটির আকাই বেরি উৎপাদনকারীরা গভীর উদ্বেগে পড়েছেন। বাজারে এই ফলের চাহিদা কমে যাওয়ায় ক্ষতির মুখে পড়ার আশঙ্কা করছেন তাঁরা। বিশেষ করে, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে আকাইয়ের দাম বেড়ে গেলে এর সরাসরি প্রভাব পড়বে ব্রাজিলের অর্থনীতিতে।

আকাই বেরি, যা ব্রাজিলের একটি জনপ্রিয় ফল, বর্তমানে বিশ্বজুড়ে ‘সুপারফুড’ হিসেবে পরিচিত। এটি মূলত অ্যামাজন অঞ্চলের একটি গুরুত্বপূর্ণ পণ্য। এই ফলের উৎপাদন ও ব্যবসার সঙ্গে জড়িত সেখানকার বহু মানুষ। সেখানকার স্থানীয় বাজারের বিক্রেতা আইলসন ফেরেইরা বলেন, “যুক্তরাষ্ট্রে যদি আকাইয়ের চাহিদা কমে যায়, তবে আমাদের এখানে এই ফলের সরবরাহ বেড়ে যাবে। ফলে দাম কমে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।”

আকাই মূলত স্মুদি ও বাটিতে ব্যবহার করা হয়, যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বেশ জনপ্রিয়। ব্রাজিলের প্যারা রাজ্যের আকাই উৎপাদনকারীরা এরই মধ্যে শুল্কের কারণে ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। সাও পাওলো রাজ্যের ‘আকাই ট্রপিকালিয়া মিক্স’ এর মতো বড় রপ্তানিকারকরাও এর প্রভাব অনুভব করছেন। কোম্পানিটির মালিক রজারিও ডি কারভালহো জানান, গত বছর তাঁরা যুক্তরাষ্ট্রকে প্রায় ২৭০ টন আকাই ক্রিম রপ্তানি করেছিলেন। কিন্তু শুল্কের কারণে, জুলাই মাস পর্যন্ত তাঁরা মাত্র ২৭ টন বিক্রি করতে পেরেছেন। এতে তাঁদের প্রায় ১৫ লাখ ব্রাজিলীয় রিয়ালের (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৩ কোটি টাকা) ক্ষতি হয়েছে।

ট্রাম্প প্রশাসনের এই শুল্ক আরোপের কারণ হিসেবে প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট জাইর বলসোনারোর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগকে দায়ী করা হচ্ছে। বলসোনারো বর্তমানে গৃহবন্দী রয়েছেন, তাঁর বিরুদ্ধে নির্বাচনে কারচুপির মাধ্যমে ক্ষমতা দখলের চেষ্টার অভিযোগ রয়েছে। যদিও ব্রাজিলের পক্ষ থেকে এই শুল্কের বিষয়ে কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

আকাইয়ের উৎপাদনে প্যারা রাজ্যের ভূমিকা সবচেয়ে বেশি, যা দেশটির মোট উৎপাদনের প্রায় ৯০ শতাংশ। এখানকার অনেক সম্প্রদায়ের মানুষ এই ফলের ব্যবসার ওপর নির্ভরশীল। এই অঞ্চলের উৎপাদকরা জানিয়েছেন, আকাই সংগ্রহ করা বেশ কষ্টসাধ্য একটি কাজ। তাঁরা উঁচু গাছে উঠে ঝুঁকি নিয়ে ফল সংগ্রহ করেন। পরিবেশবিদরা মনে করেন, আকাই উৎপাদনকারীরা অবৈধ বন ধ্বংস, খনিজ উত্তোলন ও গবাদি পশু পালন থেকে বনভূমিকে রক্ষা করতে সহায়তা করেন।

১৯৯৯ সালে প্যারা রাজ্য থেকে আকাই রপ্তানি ছিল এক টনেরও কম, যা ২০২৩ সালে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬১ হাজার টনে। এমন পরিস্থিতিতে শুল্ক আরোপের কারণে আকাইয়ের ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। ব্রাজিলের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তারা বিষয়টি নিয়ে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) সঙ্গে আলোচনা করছে।

প্যারা রাজ্যের আকাই সংগ্রহকারী মিকায়েল সিলভা ট্রিদাদে বলেন, “রপ্তানি বাড়লে ফলের দাম বাড়ে, কিন্তু বিক্রি কমে গেলে তা এখানে সস্তা হয়ে যাবে।”

তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *