ট্রাম্পের নয়া চালে টালমাটাল বাজার, ফুঁসছে কি ওয়াল স্ট্রিট?

# ট্রাম্পের শুল্ক নীতি: ওয়াল স্ট্রিটের প্রতিক্রিয়া এবং বাংলাদেশের উপর সম্ভাব্য প্রভাব

যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্ক নীতি নিয়ে বিশ্বজুড়ে চলছে আলোচনা। সম্প্রতি তিনি বিভিন্ন পণ্যের ওপর শুল্ক বৃদ্ধি করেছেন, যা প্রথমে বাজারকে বেশ অস্থির করে তুলেছিল। তবে, পরবর্তীতে বাজারের আচরণে স্থিতিশীলতা দেখা যাচ্ছে। বিশ্লেষকদের মতে, এর কারণ হলো কিছু বিশেষ ছাড় (carve-outs) এবং প্রযুক্তিখাতের ভালো ফল।

শুরুর দিকে, ওয়াল স্ট্রিটের ব্যবসায়ীরা ট্রাম্পের শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্তকে ‘ট্রাম্প অলওয়েজ চিকেনস আউট’ বা ‘টাকো’ (TACO) নামে অভিহিত করতেন। অর্থাৎ, ট্রাম্প শুল্ক আরোপ করলেও বাজারের খারাপ অবস্থার কারণে দ্রুত সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেন। কিন্তু এবার দৃশ্যপট কিছুটা ভিন্ন। ট্রাম্প যেন বাজারের এই ধারণাকে চ্যালেঞ্জ করছেন। নতুন করে শুল্ক আরোপ করা হলেও, বাজার সেটিকে অনেকটা গ্রহণ করে নিয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এপ্রিল মাসে যখন শুল্কের কারণে বাজার টালমাটাল হয়েছিল, সেই পরিস্থিতি এখন আর নেই। শেয়ার বাজার এখনো ঊর্ধ্বমুখী রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, প্রযুক্তি কোম্পানি অ্যাপল (Apple) ভারতের কিছু পণ্য এবং সেমিকন্ডাকটরের (semiconductor) উপর শুল্ক ছাড় পেয়েছে। এছাড়া, এনভিডিয়া (Nvidia) এবং মেটা (Meta)-র মতো বড় প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর ভালো আয়ের কারণেও বাজারের ওপর শুল্কের প্রভাব কম দেখা যাচ্ছে।

তবে, বাজার স্থিতিশীল থাকলেও, এর দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব এখনো স্পষ্ট নয়। কিছু অর্থনীতিবিদ মনে করেন, শুল্কের কারণে অর্থনৈতিক মন্দা (stagflation) দেখা দিতে পারে। অর্থাৎ, একদিকে যেমন অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কমবে, তেমনি মূল্যস্ফীতিও বাড়তে পারে। বিনিয়োগকারীরা মনে করছেন, পরিস্থিতি খারাপ হলে ট্রাম্প হয়তো তাঁর নীতি পরিবর্তন করতে পারেন। এটিকে তারা ‘ট্রাম্প পুট’ (Trump put) হিসেবে দেখছেন। অর্থাৎ, বাজার ক্ষতিগ্রস্ত হলে ট্রাম্প ব্যবস্থা নেবেন।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিনিয়োগকারীদের এখনই সতর্ক থাকতে হবে। কারণ, শেয়ার বাজারের উত্থান-পতন এবং অর্থনীতির মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। শুল্কের কারণে ব্যবসা পরিকল্পনা করা কঠিন হয়ে পড়ছে। আসন্ন মাসগুলোতে মূল্যস্ফীতি এবং শ্রমবাজারের তথ্য বিশ্লেষণ করে বোঝা যাবে, শুল্কের আসল প্রভাব কী হতে চলেছে।

যদিও এই শুল্ক নীতির সরাসরি প্রভাব বাংলাদেশের উপর এখনো দৃশ্যমান নয়, তবে বিশ্ব বাণিজ্য এবং অর্থনীতির পরিবর্তনের কারণে এর কিছু পরোক্ষ প্রভাব পড়তে পারে। বিশেষ করে, বাংলাদেশের রপ্তানি বাণিজ্য, সরবরাহ ব্যবস্থা এবং বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হারে এর প্রভাব পড়তে পারে। তাই, বাংলাদেশের অর্থনীতিবিদরা বিশ্ব অর্থনীতির এই পরিবর্তনের দিকে গভীর মনোযোগ রাখছেন।

আন্তর্জাতিক আর্থিক বিষয়ক বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, বাজার এখনো একটি গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণে রয়েছে। এখন দেখার বিষয়, ফেডারেল রিজার্ভের (Federal Reserve) সেপ্টেম্বর মাসের নীতি নির্ধারণী বৈঠকে শুল্কের কারণে মূল্যবৃদ্ধির কোনো ইঙ্গিত পাওয়া যায় কিনা।

তথ্য সূত্র: CNN

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *