জাপানের অত্যাধুনিক যুদ্ধজাহাজ বিক্রি, গভীর উদ্বেগে চীন!

জাপান থেকে অত্যাধুনিক যুদ্ধজাহাজ কিনছে অস্ট্রেলিয়া, যার সম্ভাব্য প্রভাব নিয়ে আলোচনা চলছে আন্তর্জাতিক মহলে। প্রায় ৬.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বিনিময়ে টোকিও’র কাছ থেকে অত্যাধুনিক ফ্রিগেট (frigates) কেনার এই চুক্তিটি ক্যানবেরাকে (Canberra) প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে নৌ-সামরিক শক্তিতে আরও শক্তিশালী করবে।

একইসঙ্গে, এটি জাপানের জন্য অস্ত্র রপ্তানিকারক হিসেবে নিজেদের অবস্থান আরও সুসংহত করার সুযোগ তৈরি করবে বলে মনে করা হচ্ছে।

জাপানি সংবাদমাধ্যম এনএইচকে’র (NHK) খবর অনুযায়ী, অস্ট্রেলিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তারা জাপানের তৈরি ১১টি মোগামি-শ্রেণির ফ্রিগেট কিনবে।

অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ও রাডার ফাঁকি দিতে সক্ষম এই যুদ্ধজাহাজগুলো চীন বা এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের নৌবহরের চেয়েও কোনো কোনো ক্ষেত্রে উন্নত বলে বিশ্লেষকরা মনে করেন।

অস্ট্রেলিয়ার প্রতিরক্ষা শিল্পমন্ত্রী প্যাট্রিক কনরয় (Pat Conroy) এই চুক্তিকে স্বাগত জানিয়ে বলেছেন, এটি তাদের নৌবাহিনীকে আরও শক্তিশালী করবে এবং মিত্রদের নিরাপত্তা দেবে।

একইসঙ্গে প্রতিপক্ষের জন্য এটি ভীতিও সৃষ্টি করবে।

সামরিক বিশ্লেষকদের মতে, অস্ট্রেলিয়ার এই পদক্ষেপের প্রধান কারণ হলো, চীন প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করছে।

সম্প্রতি একটি চীনা নৌবহর অস্ট্রেলিয়াকে প্রদক্ষিণ করে মহড়া চালিয়েছিল, যা ক্যানবেরার উদ্বেগের কারণ।

অস্ট্রেলিয়া জানিয়েছে, তারা মোগামি শ্রেণির জাহাজগুলোকে আরও উন্নত করবে।

বর্তমানে জাপানের মেরিটাইম সেলফ-ডিফেন্স ফোর্স (Maritime Self-Defense Force)-এর বহরে থাকা সংস্করণটির চেয়ে এগুলো আকারে বড় হবে।

ফলে এতে আরও বেশি অস্ত্রশস্ত্র এবং প্রায় ১৮,০০০ কিলোমিটার পর্যন্ত একটানা পথ পাড়ি দেওয়ার ক্ষমতা থাকবে।

জাপানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী জেন নাকাতানি (Gen Nakatani) বলেছেন, এই চুক্তি জাপানের সঙ্গে বিশেষ কৌশলগত অংশীদার অস্ট্রেলিয়ার নিরাপত্তা সহযোগিতা আরও জোরদার করবে।

নতুন যুদ্ধজাহাজগুলো তৈরি করছে মিৎসুবিশি হেভি ইন্ডাস্ট্রিজ (Mitsubishi Heavy Industries)।

এতে থাকবে ৩২টি এমকে ৪১ (Mk 41) ভার্টিক্যাল লঞ্চ সেল, যা বিমান থেকে নিক্ষেপযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র এবং জাহাজ বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র ছুঁড়তে সক্ষম।

এই সেলগুলো দিয়ে ১২৮টি আকাশ প্রতিরক্ষা ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করা যাবে, যা অস্ট্রেলিয়ার বর্তমান যুদ্ধজাহাজের চেয়ে চারগুণ বেশি।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, লকহিড মার্টিন (Lockheed Martin) নির্মিত এমকে ৪১ লঞ্চ সেলগুলো টমাহক ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র বহনেও সক্ষম।

এই ক্ষেপণাস্ত্রগুলোর এক হাজার মাইলের বেশি দূরে আঘাত হানার ক্ষমতা রয়েছে।

এছাড়াও, সাবমেরিন ধ্বংস করার জন্য ব্যবহৃত লং-রেঞ্জ অ্যান্টি-সাবমেরিন রকেটও এই সেলগুলোতে রাখা যাবে।

মোগামি শ্রেণির ফ্রিগেটগুলোতে মাত্র ৯০ জন নাবিক প্রয়োজন হবে, যেখানে অস্ট্রেলিয়ার বর্তমান এএনজেডএসি (ANZAC) শ্রেণির ফ্রিগেটে ১৭০ জন নাবিক প্রয়োজন হয়।

জনবল সংকট মোকাবিলায় এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

কিং’স কলেজ, লন্ডনের যুদ্ধ ও কৌশল বিষয়ক অধ্যাপক অ্যালেসিও প্যাটালানো (Alessio Patalano) বলেছেন, তুলনামূলকভাবে কম দামে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি এবং কম জনবল নিয়ে কাজ করার সক্ষমতা এই জাহাজগুলোকে খুবই নির্ভরযোগ্য করে তুলেছে।

মার্কিন নৌবাহিনীর সাবেক ক্যাপ্টেন কার্ল শুস্টার (Carl Schuster) মনে করেন, চীনের তৈরি টাইপ ০৫৪বি (Type 054B) ফ্রিগেটের চেয়েও মোগামি উন্নত।

বিশেষ করে, এর মাঝারি থেকে দূরপাল্লার বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা খুবই শক্তিশালী।

বিশ্লেষকরা আরও উল্লেখ করেছেন, জাপানি জাহাজ নির্মাণ শিল্প নির্ভরযোগ্যতার জন্য সুপরিচিত।

তাদের তৈরি জাহাজগুলো সময়মতো এবং নির্ধারিত বাজেটের মধ্যে সরবরাহ করা হয়।

জাপান দীর্ঘদিন ধরে অস্ত্র রপ্তানি বন্ধ রেখেছিল।

তবে সম্প্রতি সেই নীতি শিথিল করা হয়েছে।

এরই ধারাবাহিকতায় ফিলিপাইন্সকে তারা আকাশ নজরদারির জন্য রাডার সরবরাহ করেছে।

এছাড়া, যুক্তরাষ্ট্রকে তারা পেট্রিয়ট ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহ করেছে, যা ইউক্রেনে পাঠানোর জন্য যুক্তরাষ্ট্র ব্যবহার করছিল।

অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে হওয়া এই ফ্রিগেট চুক্তি নিঃসন্দেহে জাপানের প্রতিরক্ষা শিল্পখাতে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।

চুক্তি অনুযায়ী, প্রথম তিনটি যুদ্ধজাহাজ তৈরি হবে জাপানে এবং বাকি আটটি তৈরি করা হবে অস্ট্রেলিয়ায়।

বিশেষজ্ঞদের মতে, এই চুক্তি যুক্তরাষ্ট্র এবং তার মিত্রদের মধ্যে সামরিক সক্ষমতার ক্ষেত্রে নতুন মেরুকরণ সৃষ্টি করতে পারে।

কারণ, যুক্তরাষ্ট্রের নৌবহরে বর্তমানে কোনো ফ্রিগেট নেই।

তথ্য সূত্র: সিএনএন (CNN)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *