ভয়ংকর! আলাস্কার হিমবাহে ফাটল, জুনোতে বাড়ছে বন্যার তীব্রতা!

**আলাস্কার জুনোতে হিমবাহের কারণে রেকর্ড ভাঙা বন্যার আশঙ্কা, বাসিন্দাদের সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ**

আলাস্কার রাজধানী জুনো শহরে আসন্ন ভয়াবহ বন্যার আশঙ্কায় সেখানকার বাসিন্দাদের দ্রুত সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আবহাওয়াবিদরা জানিয়েছেন, মেনডেনহল হিমবাহ থেকে গলিত জল এবং বৃষ্টির জল একসাথে হয়ে এই বন্যার সৃষ্টি করেছে, যা অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে দিতে পারে।

জুনো শহর থেকে প্রায় ১৯ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত মেনডেনহল হিমবাহ। এই হিমবাহের কাছাকাছি অঞ্চলে বসবাসকারী মানুষের জীবন বর্তমানে চরম ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।

কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, মঙ্গলবার সকাল থেকে বরফের বাঁধ ভেঙে জল বের হতে শুরু করেছে এবং বুধবারের শেষ নাগাদ বন্যা ভয়াবহ রূপ নিতে পারে। স্থানীয় বাসিন্দাদের নিরাপদ আশ্রয়ে যাওয়ার জন্য জরুরি ভিত্তিতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বন্যার কারণে অনেক বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সেখানকার স্থানীয় একটি পরিবার তাদের সন্তানদেরকে বন্যার বিপদ থেকে দূরে সরিয়ে নিরাপদ স্থানে পাঠিয়েছে।

তারা তাদের প্রতিবেশীদেরও দ্রুত এলাকা ত্যাগ করার জন্য উৎসাহিত করছেন।

বিশেষজ্ঞদের মতে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে মেনডেনহালের কাছাকাছি একটি ছোট আকারের হিমবাহ ইতোমধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফলে সেখানে বৃষ্টির জল ও তুষার গলে জমা হওয়ার কারণে একটি বিরাট জলাধার তৈরি হয়েছে।

গ্রীষ্মকালে যখন এই জলাধারের জল ধারণক্ষমতা ছাড়িয়ে যায়, তখন তা মেনডেনহাল হিমবাহের বাঁধ ভেঙে প্রবল বেগে বেরিয়ে আসে এবং মেনডেনহাল নদী হয়ে জুনো শহরের দিকে ধাবিত হয়।

ন্যাশনাল ওয়েদার সার্ভিসের আবহাওয়াবিদ নিকোল ফেরিন এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, “আমাদের হাতে থাকা সব তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে বলতে পারি, এবারকার বন্যা অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে দেবে।”

২০১১ সাল থেকে প্রতি বছরই এই অঞ্চলে বন্যা একটি নিয়মিত ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। গত বছরগুলোতে বন্যায় বহু বাড়িঘর ভেসে গেছে এবং কয়েকশ বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

পরিস্থিতি মোকাবিলায় কর্তৃপক্ষ এবার কয়েকশ বাড়ির সুরক্ষার জন্য অস্থায়ী বাঁধ তৈরি করেছে। এই বাঁধগুলো হেসকো নামের বিশেষ ধরনের বড় বালির বস্তা দিয়ে তৈরি করা হয়েছে, যা প্রায় ৫.৫ মিটার উচ্চতার বন্যা প্রতিরোধের জন্য উপযুক্ত।

তবে স্থানীয় বাসিন্দা স্যাম হ্যাচ আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছেন, যদি পানির উচ্চতা পূর্বাভাসের চেয়ে বেশি হয়, তাহলে এই বাঁধগুলি হয়তো তেমন কার্যকরী হবে না।

তার মতে, বাঁধের পাশ দিয়ে জল প্রবেশ করলে তাদের বাড়ি “গোসলখানার মতো” হয়ে উঠবে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রকৌশল বিভাগ (U.S. Army Corps of Engineers) বর্তমানে এই অঞ্চলের পরিস্থিতি নিয়ে গবেষণা করছে এবং একটি স্থায়ী সমাধান খুঁজে বের করার চেষ্টা করছে।

তাদের এই দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা নিয়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, মেনডেনহাল হিমবাহ যতদিন পর্যন্ত এই অঞ্চলের জলকে আটকে রাখতে পারবে, ততদিন পর্যন্ত বন্যা চলতেই থাকবে।

তাদের ধারণা, আগামী ২৫ থেকে ৬০ বছর পর্যন্ত এই পরিস্থিতি চলতে পারে।

তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *