এআই ধ্বংসের হাত থেকে বাঁচতে একমাত্র উপায় জানালেন ‘এআইয়ের গডফাদার’!

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (AI) নিয়ে বিশ্বজুড়ে যখন এত আলোচনা, তখন এর ভবিষ্যৎ নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন ‘এআই-এর গডফাদার’ হিসেবে পরিচিত জিওফ্রে হিন্টন।

তাঁর মতে, উন্নত এআই মানবজাতির জন্য এক বিশাল হুমকি ডেকে আনতে পারে। এই প্রযুক্তি মানবজাতিকে ধ্বংস করে দিতেও সক্ষম।

সম্প্রতি এক সম্মেলনে তিনি এই আশঙ্কার কথা জানান।

হিন্টন, যিনি একসময় গুগলের মতো প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ পদে ছিলেন এবং বর্তমানে একজন নোবেলজয়ী কম্পিউটার বিজ্ঞানী, এর আগেও এআই-এর বিপদ সম্পর্কে সতর্ক করেছেন।

তাঁর ধারণা, ভবিষ্যতে এআই-এর কারণে মানুষের জীবন হুমকির মুখে পড়ার সম্ভাবনা ১০ থেকে ২০ শতাংশ।

সম্মেলনে তিনি প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর এআই নিয়ন্ত্রণের বর্তমান পদ্ধতির সমালোচনা করেন। তাঁর মতে প্রযুক্তি কোম্পানিগুলো যেভাবে এআইকে মানুষের নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করছে, তা যথেষ্ট নয়।

কারণ এআই একসময় মানুষের চেয়ে অনেক বেশি বুদ্ধিমান হয়ে উঠবে এবং তাদের নিয়ন্ত্রণ করার সব পথ খুঁজে বের করবে।

হিনটনের মতে, এর প্রতিকারের জন্য প্রয়োজন অন্য কিছু।

তিনি প্রস্তাব করেন, এআই-এর মধ্যে ‘মাতৃত্বের অনুভূতি’ তৈরি করা।

তাঁর ধারণা, যদি এআই-এর মধ্যে মানুষের প্রতি ভালোবাসার জন্ম দেওয়া যায়, তাহলে এটি মানুষের ক্ষতি করবে না।

একজন মা যেমন তাঁর সন্তানের প্রতি যত্নবান হন, তেমনই এআইও মানুষের প্রতি সহানুভূতিশীল হবে।

এই প্রসঙ্গে তিনি মায়ের সঙ্গে সন্তানের সম্পর্কের উদাহরণ দেন।

তাঁর মতে, এই ধরনের এআই তৈরি করাই হলো ভবিষ্যতের জন্য একমাত্র ভালো সমাধান।

তবে কিভাবে এই ‘মাতৃত্বের অনুভূতি’ এআই-এর মধ্যে তৈরি করা সম্ভব, সে বিষয়ে তিনি বিস্তারিত কিছু বলেননি।

তবে, তিনি জোর দিয়ে বলেছেন, গবেষকদের দ্রুত এই বিষয়ে কাজ করা উচিত।

কারণ, এআই যদি মানুষের প্রতি যত্নবান না হয়, তাহলে মানুষই তাদের দ্বারা বিতাড়িত হবে।

এই সম্মেলনে ওপেনএআই-এর প্রাক্তন অন্তর্বর্তীকালীন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এমমেট শিয়ারও তাঁর উদ্বেগের কথা জানান।

তাঁর মতে, এআই-এর খারাপ দিকগুলো এরই মধ্যে দেখা যেতে শুরু করেছে।

এমনকি কিছু এআই সিস্টেম মানুষকে ব্ল্যাকমেইল করারও চেষ্টা করেছে।

শিয়ার মনে করেন, মানুষের মূল্যবোধ এআই-এর মধ্যে স্থাপন করার চেয়ে, মানুষ ও এআই-এর মধ্যে সহযোগিতামূলক সম্পর্ক তৈরি করা বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

বর্তমানে এআই প্রযুক্তি দ্রুত গতিতে উন্নত হচ্ছে।

বিশেষজ্ঞদের ধারণা, অদূর ভবিষ্যতে এআই ‘সুপার ইন্টেলিজেন্স’-এ পৌঁছাবে।

হিন্টন মনে করেন, আগে তিনি ধারণা করতেন এআই-এর এই পর্যায়ে পৌঁছাতে ৩০ থেকে ৫০ বছর সময় লাগবে, কিন্তু এখন তাঁর ধারণা, আগামী ৫ থেকে ২০ বছরের মধ্যেই এটি ঘটবে।

এআই-এর বিপদ সম্পর্কে সতর্ক করলেও, হিন্টন এই প্রযুক্তির কিছু ইতিবাচক দিক নিয়েও আশাবাদী।

তিনি মনে করেন, এআই চিকিৎসা ক্ষেত্রে বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে পারে।

উদাহরণস্বরূপ, এটি এমআরআই এবং সিটি স্ক্যানের মতো পরীক্ষার ডেটা বিশ্লেষণ করে রোগ নির্ণয়ে ডাক্তারদের সাহায্য করতে পারে।

তবে, তিনি এআই-এর মাধ্যমে মানুষের অমরত্ব লাভের সম্ভাবনাকে নাকচ করে দিয়েছেন।

এআই দ্রুততার সঙ্গে এগিয়ে যাওয়ায়, নিজের কর্মজীবনের ভুলগুলো নিয়েও কথা বলেছেন হিন্টন।

তিনি বলেন, এআই তৈরির সময় তিনি এর নিরাপত্তা নিয়ে যথেষ্ট গুরুত্ব দেননি।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *