যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন নীতি: বাড়ছে আটকের সংখ্যা, বিমানের গতিবিধিও এখন কঠিন।
যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন বিষয়ক কর্তৃপক্ষের (Immigration and Customs Enforcement – ICE) ফ্লাইটগুলোর সংখ্যা বাড়ছে, তবে তাদের গতিবিধি আগের চেয়ে অনেক বেশি কঠিন হয়ে পড়েছে। মূলত অভিবাসন প্রত্যাশীদের আটকের সংখ্যা বৃদ্ধি এবং তাদের প্রত্যাবর্তনের উদ্দেশ্যে এসব ফ্লাইট ব্যবহৃত হচ্ছে। একইসাথে, ফ্লাইটগুলো নজরদারির বাইরে রাখতে নানা কৌশল অবলম্বন করা হচ্ছে।
সম্প্রতি, মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন-এর একটি অনুসন্ধানে জানা যায়, ICE ফ্লাইটগুলো মূলত আটককৃত অভিবাসন প্রত্যাশীদের বিভিন্ন ডিটেনশন সেন্টারে আনা-নেওয়ার কাজে ব্যবহার করা হয়। ট্রাম্প প্রশাসনের আমলে প্রতি বছর প্রায় ১০ লক্ষ অভিবাসীকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বিতাড়িত করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে, যার ফলস্বরূপ বেড়েছে আটকের সংখ্যা এবং বেড়েছে বিমানের ব্যবহার।
আশ্চর্যজনকভাবে, ফ্লাইট পরিচালনাকারী সংস্থাগুলো তাদের বিমানের নিবন্ধন নম্বর (tail number) লুকানোর জন্য আবেদন করছে। ফ্লাইট ট্র্যাকিং ওয়েবসাইটগুলো থেকে এই নম্বরগুলো সরিয়ে নেওয়ায় বিমানগুলোর গতিবিধি অনুসরণ করা কঠিন হয়ে পড়েছে। ফেডারেল এভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (Federal Aviation Administration – FAA) গত বছর এই সংক্রান্ত নিয়ম শিথিল করার ফলে কোম্পানিগুলো সহজেই তাদের তথ্য গোপন করতে পারছে। এর ফলে, আটককৃতদের পরিবারের সদস্যরা তাদের স্বজনদের অবস্থান জানতে পারছেন না।
মানবাধিকার সংস্থাগুলোর মতে, এটি গভীর উদ্বেগের বিষয়। কারণ, স্বচ্ছতার অভাবে ICE কিভাবে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করছে, তা বোঝা কঠিন হয়ে পড়েছে। মানবাধিকার সংস্থা ‘লা রেসিস্টেন্সিয়া’-র মুখপাত্র গুয়াদালাপে গঞ্জালেজ বলেছেন, “পরিবারগুলো জানতে পারছে না তাদের স্বজনদের কোথায় পাঠানো হচ্ছে, যেন তাদের অদৃশ্য করে দেওয়া হচ্ছে।”
জানা গেছে, এই ফ্লাইটগুলো পরিচালনায় বেসরকারি কোম্পানিগুলোর মধ্যে ‘সিএসআই এভিয়েশন’-এর সঙ্গে সরকারের বড় চুক্তি রয়েছে। কোম্পানিটি বিভিন্ন সাব-কন্ট্রাক্টর নিয়োগ করে ফ্লাইট পরিচালনা করে। তাদের মধ্যে ‘গ্লোবালএক্স’, ‘ইস্টার্ন এয়ার এক্সপ্রেস’ এবং ‘এভেলো এয়ারলাইন্স’-এর মতো সংস্থা অন্যতম। এই কোম্পানিগুলোর সঙ্গে রিপাবলিকান পার্টির প্রভাবশালী ব্যক্তি ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। এমনও অভিযোগ উঠেছে, এইসব ফ্লাইটগুলোতে ব্যবহৃত এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল সাইনও পরিবর্তন করা হচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ, অনেক ফ্লাইটে ট্রাম্পের ব্যক্তিগত বিমানের মতোই ‘টাইসন’ কল সাইন ব্যবহার করা হচ্ছে।
পর্যবেক্ষকদের মতে, এইসব পরিবর্তনের মূল উদ্দেশ্য হলো, অভিবাসন বিষয়ক কার্যক্রমকে যতটা সম্ভব গোপন রাখা। এর ফলে, আটককৃতদের মানবাধিকার লঙ্ঘিত হওয়ার সম্ভবনা বাড়ছে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন