বন্দুক হামলার কারণ হিসেবে মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যাকে দায়ী করা কতটা যুক্তিসঙ্গত? সাম্প্রতিক কিছু ঘটনা নিয়ে বিশেষজ্ঞদের মতামত।
সাম্প্রতিক সময়ে, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বন্দুক হামলার ঘটনা বেড়েছে, যা জনমনে গভীর উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। এমন পরিস্থিতিতে হামলাকারীদের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে আলোচনা জোরালো হয়েছে। অনেকেই মনে করেন, মানসিক অসুস্থতাই বুঝি এসব হামলার মূল কারণ। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিষয়টি এত সরল নয়। তাঁদের মতে, মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা একটি কারণ হতে পারে, কিন্তু সেটাই একমাত্র কারণ নয়।
যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসে সম্প্রতি একটি বন্দুক হামলায় তিনজন নিহত হন। হামলাকারীকে পুলিশ আটক করে, যিনি নিজেকে যিশু দাবি করছিলেন। এর কয়েক দিন আগে আটলান্টায়, যুক্তরাষ্ট্রের রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্রের (সিডিসি) ওপর হামলা চালান এক ব্যক্তি, যেখানে একজন পুলিশ সদস্য নিহত হন। হামলাকারী নিজেও পরে আত্মহত্যা করেন। এছাড়া, ম্যানহাটনেও এক ব্যক্তি বহুতল ভবনে হামলা চালিয়ে চারজনকে হত্যা করেন এবং পরে আত্মহত্যা করেন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এসব ঘটনায় হামলাকারীদের মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা থাকতে পারে, তবে সেটিকে হামলার মূল কারণ হিসেবে দেখা ঠিক নয়। তাঁদের মতে, মানসিক অসুস্থতা কোনো মানুষের মধ্যে সহিংস আচরণ তৈরি করে না। এমনকি গুরুতর মানসিক অসুস্থতা, যেমন—গুরুতর বিষণ্ণতা বা সিজোফ্রেনিয়াতেও, অন্যকে আঘাত করার প্রবণতা দেখা যায় না।
বিশেষজ্ঞদের মতে, বন্দুক হামলার পেছনে মানসিক স্বাস্থ্য ছাড়াও আরও অনেকগুলো বিষয় কাজ করে। এর মধ্যে অন্যতম হলো—বন্দুকের সহজলভ্যতা, পারিবারিক সহিংসতা, এবং সামাজিক সম্পর্ক। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, হামলাকারীরা আগে সহিংস ঘটনায় জড়িত ছিল, অথবা তাদের পরিবারে সহিংসতার ইতিহাস রয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর গান ভায়োলেন্স সলিউশনস-এর সিনিয়র উপদেষ্টা লিসা গেলার জানান, “বেশিরভাগ বন্দুক হামলার ঘটনার সঙ্গে পারিবারিক সহিংসতার সম্পর্ক রয়েছে।”
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বন্দুক হামলারোধে মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক সহায়তা বাড়ানো প্রয়োজন। তবে তাঁরা এও মনে করেন, শুধু মানসিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ওপর নির্ভর করে এই ধরনের হামলা সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করা সম্ভব নয়। তাঁদের মতে, বন্দুকের সহজলভ্যতা কমানো গেলে অনেক ক্ষেত্রে এমন ঘটনা প্রতিরোধ করা যেতে পারে।
বন্দুক নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে কিছু দেশে ইতিমধ্যে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। যেমন—অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডে বন্দুক নিয়ন্ত্রণের কঠোর আইন রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রেও কিছু রাজ্যে ‘রেড ফ্ল্যাগ’ আইন চালু আছে। এই আইনে, কোনো ব্যক্তি নিজের বা অন্যের জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে—এমন মনে হলে, আদালত তাঁর কাছ থেকে অস্ত্র কেড়ে নিতে পারে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, তবে বন্দুক হামলার মতো ঘটনার পেছনে এটি একমাত্র কারণ নয়। তাই, সমস্যা সমাধানে মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক সহায়তা বাড়ানোর পাশাপাশি, বন্দুকের সহজলভ্যতা কমানো এবং সহিংসতার কারণগুলো চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি।
তথ্য সূত্র: সিএনএন