হিমবাহের জল: জুনোতে আসছে ভয়ঙ্কর বন্যা, শহরজুড়ে আতঙ্ক!

**আলাস্কার জুনোতে হিমবাহের পানি : আসন্ন বন্যায় শঙ্কিত শহরবাসী**

আবহাওয়ার পরিবর্তনের কারণে আলাস্কার জুনো শহরে আবারও বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। মেনডেনহল হিমবাহ থেকে নেমে আসা পানি উপচে পড়ার কারণে সেখানকার বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।

খবর অনুযায়ী, মঙ্গলবার সকালে বরফ বাঁধ ভেঙে পানি বের হতে শুরু করেছে এবং বুধবার এর চরম রূপ ধারণ করার সম্ভাবনা রয়েছে।

জুনো শহরটি আলাস্কার রাজধানী এবং এখানে প্রায় ৩০ হাজার মানুষের বসবাস। পর্যটকদের কাছেও এই শহরটির বিশেষ আকর্ষণ রয়েছে, বিশেষ করে মেনডেনহল হিমবাহের কাছাকাছি হওয়ায় এর পরিচিতি অনেক।

হিমবাহের পাদদেশে অবস্থিত মেনডেনহল লেকের কাছেই শহরটির অনেক বসতি, আর এই লেক থেকে মেনডেনহল নদী হয়েই বন্যার পানি প্রবাহিত হয়।

যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় আবহাওয়া দপ্তর জানিয়েছে, বুধবার সকাল আটটা থেকে দুপুর বারোটার মধ্যে বন্যার পানি সর্বোচ্চ সীমায় পৌঁছাতে পারে।

আবহাওয়াবিদ নিকোল ফেরিন এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “আমাদের কাছে থাকা তথ্য অনুযায়ী, এবার বন্যা নতুন রেকর্ড গড়তে পারে।

২০১১ সাল থেকে এই অঞ্চলে প্রায় প্রতি বছরই বন্যা দেখা যায়। এর আগে কয়েক বছরে বহু বাড়িঘর পানির তোড়ে ভেসে গেছে এবং বহু মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

এমন পরিস্থিতিতে, স্থানীয় প্রশাসন এবার কয়েকশ’ বাড়িঘর রক্ষার জন্য অস্থায়ী বাঁধ তৈরি করেছে।

আসলে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে মেনডেনহল হিমবাহের কাছাকাছি একটি ছোট আকারের হিমবাহ ইতিমধ্যে সরে গেছে।

এর ফলে সেখানে একটি জলাধার তৈরি হয়েছে, যেখানে বৃষ্টির পানি ও তুষার গলে জমা হয়। যখন এই পানির চাপ বাড়ে, তখন তা মেনডেনহল হিমবাহ দ্বারা গঠিত বাঁধের নিচ দিয়ে বা পাশ দিয়ে প্রবাহিত হতে শুরু করে এবং মেনডেনহল লেকে প্রবেশ করে।

এরপর মেনডেনহল নদী দিয়ে তা প্রবাহিত হয়ে আসে, যেমনটা মঙ্গলবার দেখা গেছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, এই অঞ্চলের পরিস্থিতি আগামী ২৫ থেকে ৬০ বছর পর্যন্ত একই রকম থাকতে পারে।

গত বছর, প্রায় ৩০০ বাড়ির ক্ষতি হয়েছিল।

আলাস্কা ইউনিভার্সিটি এবং জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক একটি গবেষণা কেন্দ্র জানিয়েছে, বড় ধরনের বন্যায় প্রায় ১৫ বিলিয়ন গ্যালন (৫৬.৭৮ বিলিয়ন লিটার) পানি নির্গত হতে পারে।

যা প্রায় ২৩,০০০ অলিম্পিক আকারের সুইমিং পুলের সমান। গত বছর মেনডেনহল নদীতে পানির প্রবাহ ছিল নায়াগ্রা জলপ্রপাতের প্রায় অর্ধেক।

স্থানীয় বাসিন্দাদের উদ্বেগের কারণে, এবার শহর কর্তৃপক্ষ রাজ্য, ফেডারেল এবং উপজাতীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে মিলে নদীর তীরে প্রায় ২.৫ মাইল (৪ কিলোমিটার) পর্যন্ত একটি অস্থায়ী বাঁধ তৈরি করেছে।

এই বাঁধ তৈরিতে ১০,০০০ “হিসকো” ব্যারিয়ার ব্যবহার করা হয়েছে, যা মূলত বিশাল আকারের বালির বস্তা। এই ব্যবস্থাটি ১৮ ফুট (৫.৫ মিটার) উচ্চতার বন্যা থেকে ৪৬০টির বেশি সম্পত্তি সম্পূর্ণরূপে রক্ষা করতে পারবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

এই অঞ্চলের পরিস্থিতি নিয়ে দীর্ঘমেয়াদী সমাধানের জন্য মার্কিন সেনাবাহিনীর প্রকৌশল বিভাগ কাজ শুরু করেছে।

তবে, এই প্রক্রিয়ার সময়সীমা নিয়ে কিছু বাসিন্দারা অসন্তুষ্ট।

তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *