যুদ্ধ বন্ধে ট্রাম্প-পুতিনের গোপন বৈঠক! কী হতে চলেছে ইউক্রেনের?

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি’র সাথে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের সাক্ষাৎ হয়েছে, যেখানে আসন্ন যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়া শীর্ষ বৈঠকের দিকে সবার চোখ। বৃহস্পতিবার লন্ডনে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে উভয় নেতা ইউক্রেন যুদ্ধের পরিস্থিতি এবং শান্তি আলোচনার সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করেন।

খবর অনুযায়ী, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের মধ্যে আলাস্কার অ্যাঙ্করেজে শুক্রবার এই শীর্ষ বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।

বৈঠকের আগে, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী স্টারমার সতর্ক করে বলেন, রাশিয়া যদি আলোচনায় রাজি না হয়, তবে তাদের উপর আরও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হতে পারে। তিনি বলেন, “আমরা রাশিয়াকে আরও চাপে ফেলতে প্রস্তুত, বিশেষ করে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে, নিষেধাজ্ঞাসহ অন্যান্য পদক্ষেপের মাধ্যমে।

ইউক্রেন এবং ইউরোপীয় দেশগুলো আশঙ্কা প্রকাশ করেছে যে, যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়া শীর্ষ বৈঠকে তাদের স্বার্থ উপেক্ষিত হতে পারে। তারা মনে করে, আলোচনার ফলস্বরূপ এমন কোনো সিদ্ধান্ত আসতে পারে, যা মস্কোর পক্ষ নেবে এবং ইউক্রেন ও ইউরোপের ভবিষ্যৎ নিরাপত্তা ঝুঁকির মধ্যে ফেলবে।

বিশেষ করে, ইউক্রেনে রাশিয়ার পূর্ণমাত্রায় আগ্রাসনের চতুর্থ বছর চলছে, এমন পরিস্থিতিতে এই বৈঠকটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

তবে, জার্মানির চ্যান্সেলর ফ্রিডরিশ মের্জ এবং ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ সহ কিছু ইউরোপীয় নেতা বুধবারের ভার্চুয়াল বৈঠকে ট্রাম্পের সঙ্গে আলোচনাকে গঠনমূলক হিসেবে উল্লেখ করেছেন। বৈঠকের পর ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেন, শুক্রবারের বৈঠকে পুতিন যদি ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধ করতে রাজি না হন, তবে “গুরুতর পরিণতি” ভোগ করতে হবে রাশিয়াকে।

এদিকে, স্টারমার বুধবারের বৈঠকে বলেন, আলাস্কার শীর্ষ বৈঠক ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের “সম্ভাব্য” পথ হতে পারে। তবে তিনি ইউরোপীয় দেশগুলোর উদ্বেগের কথা উল্লেখ করে বলেন, ট্রাম্প এমন কোনো চুক্তিতে পৌঁছাতে পারেন, যা ইউক্রেনকে রাশিয়ার কাছে ভূখণ্ড ছাড়তে বাধ্য করবে।

তিনি আরও সতর্ক করেন যে, প্রয়োজন হলে পশ্চিমা মিত্রদের রাশিয়াকে চাপ দিতে প্রস্তুত থাকতে হবে।

আলোচনায়, স্টারমার জোর দিয়ে বলেন, ইউক্রেনের “অখণ্ডতা” রক্ষা করতে হবে। “আন্তর্জাতিক সীমান্ত জোর করে পরিবর্তন করা যাবে না।

সীমান্ত, কূটনীতি এবং যুদ্ধবিরতির আলোচনার পাশাপাশি, একটি শক্তিশালী ও বিশ্বাসযোগ্য নিরাপত্তা নিশ্চয়তা থাকতে হবে, যাতে শান্তি টেকসই হয় এবং ইউক্রেন তার আঞ্চলিক অখণ্ডতা রক্ষা করতে পারে।

ফরাসি প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁ জানান, ট্রাম্প নিরাপত্তা গ্যারান্টিতে অংশ নিতে রাজি হয়েছেন।

কিয়েভ দীর্ঘদিন ধরে বলে আসছে, তাদের পশ্চিমা মিত্রদের কাছ থেকে ভবিষ্যতের রুশ হামলার বিরুদ্ধে সুরক্ষা পাওয়ার নিশ্চয়তা পেলে তবেই তারা যুদ্ধ বন্ধের বিষয়ে আলোচনা করতে রাজি হবে।

অন্যদিকে, ইউক্রেনের কতিপয় নাগরিক আসন্ন বৈঠকের ফল নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন।

কিয়েভে বসবাসকারী ওলেক্সান্দ্রা কোজলোভা নামের এক ডিজিটাল সংস্থার কর্মী বলেন, “আমি মনে করি, ইউক্রেনীয়রা ইতিমধ্যে আশা হারিয়ে ফেলেছে।” তিনি আরও যোগ করেন, “আমি মনে করি না এই রাউন্ডটি ফলপ্রসূ হবে।

অনেক বৈঠক ও আলোচনার পরেও সাধারণ মানুষের কোনো পরিবর্তন হয়নি।

যুদ্ধ পরিস্থিতির মধ্যে, বৃহস্পতিবার ভোরে রাশিয়ার হামলায় ইউক্রেনের সুমি অঞ্চলে বেশ কয়েকজন আহত হয়েছে।

স্থানীয় কর্মকর্তাদের মতে, একটি ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ৭ বছর বয়সী এক শিশু এবং ২৭ বছর বয়সী এক ব্যক্তি আহত হয়েছে। এছাড়া, দক্ষিণাঞ্চলীয় খেরসন অঞ্চলে রাশিয়ান গোলার আঘাতে ১৬ বছর বয়সী এক কিশোর আহত হয়েছে।

অন্যদিকে, রাশিয়ার অভ্যন্তরেও হামলার ঘটনা ঘটেছে।

ভোর রাতে ইউক্রেনীয় ড্রোন হামলার শিকার হয়ে ভলগোগ্রাদ অঞ্চলের একটি তেল শোধনাগারে আগুন লেগেছে।

তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *