শেষ দুইজন জীবিত! নেভিজো কোড টকারদের অজানা কথা!

শিরোনাম: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে আদিবাসী বীর: জাপানি সৈন্যদের কাছে ধরা না-দেওয়া এক সাংকেতিক যুদ্ধের গল্প

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হওয়ার আট দশক পরেও, আমেরিকার আদিবাসী নাভাহো জাতির কিছু মানুষের বীরত্বগাথা আজও অজানা অনেকের কাছে। প্রশান্ত মহাসাগরের বুকে চলা ভয়ঙ্কর সেই যুদ্ধে, তাঁদের অদম্য সাহস আর ভাষার ওপর ভিত্তি করে তৈরি হওয়া এক বিশেষ কোড, মিত্রশক্তির জয়কে আরও সহজ করে তুলেছিল।

বর্তমানে এই কোড টকারদের মধ্যে মাত্র দুইজন জীবিত আছেন, পিটার ম্যাকডোনাল্ড এবং থমাস বেগে। তাঁদের চোখে যুদ্ধের স্মৃতি, আর ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য নিজেদের অবদানকে বাঁচিয়ে রাখার আকুলতা আজও একইরকম।

যুদ্ধ যখন শুরু হয়, তখন তরুণ ম্যাকডোনাল্ডের বয়স ছিল মাত্র পনেরো বছর। দেশমাতৃকার প্রতি ভালোবাসায় উদ্বুদ্ধ হয়ে তিনি যোগ দেন মেরিন কোরে।

তাঁর ভাষায়, “আমি চাইনি জাপানিরা এসে অ্যারিজোনার উইন্ডো রকে ঘাঁটি গাড়ুক। আমাদের জমি আমরাই রক্ষা করব।” ম্যাকডোনাল্ডের মতো আরও অনেক নাভাহো তরুণকে একত্র করে, তাঁদের মাতৃভাষা ব্যবহার করে এক বিশেষ সাংকেতিক পদ্ধতি তৈরি করা হয়।

এই কোড এতটাই জটিল ছিল যে, জাপানি সৈন্যরা তা ভেদ করতে পারেনি।

যুদ্ধকালীন সময়ে, নাভাহো কোড টকাররা গুরুত্বপূর্ণ সামরিক বার্তা আদান প্রদানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তাঁদের তৈরি করা সাংকেতিক ভাষার মাধ্যমে, সৈন্যদের অবস্থান, আক্রমণের পরিকল্পনা, এমনকি রসদ সরবরাহের মতো বিষয়গুলোও গোপন রাখা যেত।

উদাহরণস্বরূপ, “যুদ্ধ জাহাজ” বোঝাতে তাঁরা ব্যবহার করতেন “শীতল মাছ” শব্দটি। এভাবে, তাঁদের পাঠানো বার্তাগুলো ছিল শত্রুদের জন্য এক ধাঁধা, যা ভেদ করা প্রায় অসম্ভব ছিল।

যুদ্ধ জয়ের পর, কোড টকারদের অবদানকে প্রথমে গোপন রাখা হয়। তাঁদের এই বীরত্বের কথা প্রকাশ করা হয় ১৯৬৮ সালে।

কিন্তু এর পরেও, তাঁরা সমাজে প্রাপ্য সম্মান থেকে বঞ্চিত হন। ম্যাকডোনাল্ড জানান, “যুদ্ধ থেকে ফেরার পরেও আমরা দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিকের মতোই ব্যবহার পেয়েছি। আমাদের কষ্টের কোনো সীমা ছিল না।”

তাঁদের আত্মত্যাগের স্বীকৃতিস্বরূপ, ১৯৮২ সালে “জাতীয় নাভাহো কোড টকার দিবস” ঘোষণা করা হয়।

বর্তমানে, কোড টকারদের স্মৃতি রক্ষার জন্য একটি জাদুঘর স্থাপনের চেষ্টা চলছে। ম্যাকডোনাল্ড চান, তাঁদের এই বীরত্বগাথা প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে মানুষ জানুক।

তাঁর কথায়, “আমরা চাই, যারা আমেরিকায় ধনী হয়েছে, তারা আমাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করুক।” এছাড়াও, তাঁদের জীবন নিয়ে একটি চলচ্চিত্র নির্মাণেরও ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন তিনি, যাতে তাঁদের আত্মত্যাগ আরও বেশি মানুষের কাছে পৌঁছে যায়।

তবে, এই স্বীকৃতি আদায় করা সবসময় সহজ ছিল না। সম্প্রতি, মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তর (পেন্টাগন) তাদের ওয়েবসাইট থেকে কোড টকারদের সম্পর্কিত কিছু তথ্য সরিয়ে ফেলেছিল, যা নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়।

যদিও পরে তা পুনরুদ্ধার করা হয়, কিন্তু এই ঘটনা তাঁদের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নাভাহো কোড টকারদের অবদান, শুধুমাত্র একটি সামরিক জয় ছিল না, বরং তা ছিল একটি জাতির আত্ম-পরিচয় রক্ষার সংগ্রাম। তাঁদের এই বীরত্বগাথা, ভবিষ্যতের জন্য একটি অমূল্য সম্পদ, যা বাঁচিয়ে রাখাটা অত্যন্ত জরুরি।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *