মানসিক স্বাস্থ্যকে উন্নত করতে থেরাপি নেওয়ার ধারণাটি এখন অনেকের কাছেই পরিচিত। থেরাপি হলো একজন থেরাপিস্ট এবং একজন ব্যক্তির মধ্যে একটি সহযোগিতামূলক প্রক্রিয়া, যেখানে মানসিক স্বাস্থ্যের বিভিন্ন সমস্যাগুলো নিয়ে আলোচনা করা হয়, মানসিক শান্তির উপায় খোঁজা হয় এবং ব্যক্তিগত উন্নতিতে সহায়তা করা হয়।
তবে, থেরাপির সম্পূর্ণ সুবিধা পেতে হলে কিছু বিষয় মনে রাখা প্রয়োজন। এর মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো থেরাপির লক্ষ্য নির্ধারণ করা।
থেরাপির লক্ষ্য নির্ধারণ করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যা এই প্রক্রিয়াটিকে একটি নির্দিষ্ট পথে পরিচালিত করতে সাহায্য করে। সুস্পষ্ট লক্ষ্য থাকলে, আপনি এবং আপনার থেরাপিস্ট উভয়েই বুঝতে পারেন যে আপনারা কীসের উপর কাজ করছেন।
এই লক্ষ্যগুলো আপনার সেশনগুলোকে নির্দিষ্ট সমস্যা ও উদ্দেশ্যগুলোর উপর কেন্দ্রীভূত রাখতে সহায়তা করে। এছাড়াও, সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য থাকলে আপনি থেরাপিতে আরও বেশি সক্রিয় হতে উৎসাহিত হবেন।
কারণ, আপনি যখন একটি নির্দিষ্ট ফলাফলের দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন, তখন আপনার মনে সেই কাজটি সম্পন্ন করার আগ্রহ আরও বাড়বে এবং আপনি সেশনের বাইরেও আপনার লক্ষ্য অর্জনের জন্য পদক্ষেপ নিতে উৎসাহিত হবেন।
লক্ষ্য নির্ধারণ করার ফলে থেরাপিতে আপনার অগ্রগতি পরিমাপ করা সহজ হয়। আপনি কতটুকু উন্নতি করছেন, তা নিয়মিতভাবে নিরীক্ষণ করা যায় এবং প্রয়োজন অনুযায়ী আপনার চিকিৎসার পরিকল্পনা পরিবর্তন করা যায়।
থেরাপির লক্ষ্য তৈরি করার ক্ষেত্রে, আপনার এবং আপনার থেরাপিস্টের মধ্যে একটি ভালো বোঝাপড়া থাকা জরুরি। এখানে আপনার প্রয়োজন, পছন্দ এবং কাঙ্ক্ষিত ফলাফল নিয়ে আলোচনা করে একটি নির্দিষ্ট, অর্জনযোগ্য লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়।
লক্ষ্য নির্ধারণের জন্য একটি কার্যকর কাঠামো হলো ‘স্মার্ট’ (SMART) পদ্ধতি। ‘স্মার্ট’ হলো একটি সংক্ষিপ্ত রূপ, যা নিচে ব্যাখ্যা করা হলো:
- **S (Specific):** আপনার লক্ষ্যটি সুনির্দিষ্ট হতে হবে। উদাহরণস্বরূপ, “আমি আমার উদ্বেগ কম করতে চাই” – এই ধরনের একটি সাধারণ লক্ষ্যের পরিবর্তে, আপনি বলতে পারেন “আমি সামাজিক অনুষ্ঠানে আমার উদ্বেগের লক্ষণগুলো কমাতে চাই।”
- **M (Measurable):** আপনার লক্ষ্য পরিমাপযোগ্য হতে হবে। আপনি আপনার অগ্রগতি কিভাবে পরিমাপ করবেন, তা আগে থেকেই ঠিক করে নিতে হবে। যেমন, “প্রতি সপ্তাহে আমি দুইটি সামাজিক অনুষ্ঠানে অংশ নেব এবং আমার উদ্বেগের মাত্রা কতটুকু কমেছে, তা একটি স্কেলে লিপিবদ্ধ করব।”
- **A (Achievable):** আপনার লক্ষ্যটি অর্জনযোগ্য হতে হবে। এমন একটি লক্ষ্য নির্ধারণ করুন, যা আপনার পক্ষে বাস্তবসম্মত।
- **R (Relevant):** আপনার লক্ষ্য আপনার সামগ্রিক জীবনের সাথে প্রাসঙ্গিক হতে হবে। এটি আপনার মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ হতে হবে।
- **T (Time-bound):** আপনার লক্ষ্যের একটি সময়সীমা নির্ধারণ করতে হবে। কতদিনের মধ্যে আপনি আপনার লক্ষ্য অর্জন করতে চান, তা উল্লেখ করতে হবে। যেমন, “আমি আগামী তিন মাসের মধ্যে আমার উদ্বেগের লক্ষণগুলো উল্লেখযোগ্যভাবে কমাতে চাই।”
থেরাপির কিছু সাধারণ লক্ষ্যের মধ্যে রয়েছে – উদ্বেগ কমানো, আত্ম-সম্মান বৃদ্ধি করা, সম্পর্কের উন্নতি ঘটানো, এবং মানসিক আঘাত থেকে সেরে ওঠা। আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী, আপনি আপনার থেরাপিস্টের সাথে আলোচনা করে ব্যক্তিগতকৃত লক্ষ্য নির্ধারণ করতে পারেন।
মনে রাখবেন, থেরাপির লক্ষ্য নির্ধারণ করা সবার জন্য উপযুক্ত নাও হতে পারে। এটি একটি ব্যক্তিগত প্রক্রিয়া, তাই নিজের প্রয়োজন অনুযায়ী পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।
আপনি যদি লক্ষ্য নির্ধারণ করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ না করেন, তবে থেরাপির অন্যান্য দিকগুলোর উপর মনোযোগ দিতে পারেন। মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতে এবং থেরাপির পূর্ণ সুবিধা পেতে, একজন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া সবসময় জরুরি।
তথ্য সূত্র: Healthline