যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে (Washington D.C.) ফেডারেল এজেন্সির মাধ্যমে গৃহহীনদের আশ্রয়স্থল উচ্ছেদ অভিযান শুরু হয়েছে। সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্দেশে এই অভিযান চালানো হচ্ছে, যা নিয়ে স্থানীয় প্রশাসন এবং মানবাধিকার সংস্থাগুলোর মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।
বৃহস্পতিবার রাতে ওয়াশিংটন সার্কেল এলাকায় অভিযান চালানোর সময় ফেডারেল এজেন্টদের সঙ্গে স্থানীয় পুলিশ, সিক্রেট সার্ভিস, কাস্টমস ও বর্ডার পেট্রোল এবং এফবিআই কর্মকর্তাদের মধ্যে সমন্বয়হীনতা দেখা যায়। খবর সূত্রে জানা যায়, অভিযানে আসা কর্মকর্তাদের মধ্যে অনেকেই সোমবারের সময়সীমা সম্পর্কে অবগত ছিলেন না। স্থানীয় কর্মকর্তারা গৃহহীনদের সোমবার সকাল ১০টা পর্যন্ত এলাকা ছাড়ার সময় দিয়েছিলেন।
জাতীয় গৃহহীনতা আইন কেন্দ্রের প্রচারণা ও যোগাযোগ পরিচালক জেসি রবিনোভিজ সিএনএনকে জানান, আইনজীবীরা ফেডারেল এজেন্টদের সঙ্গে কথা বলেন এবং তাদের সময়সীমার কথা জানান। এরপর এজেন্টরা এলাকা ত্যাগ করেন। রবিনোভিজ বলেন, “যে শহর সম্পর্কে তারা কিছুই জানে না এবং যাদের কোনো পরোয়াও করে না, এমন একটি ফেডারেল সরকার যখন কোনো শহরের নিয়ন্ত্রণ নেয়, তখন ঠিক এমনটাই ঘটে।”
আশ্রয়হীনদের জন্য কাজ করা সংগঠনগুলো এরই মধ্যে আশ্রয়কেন্দ্রের সংখ্যা বাড়ানোর জন্য স্থানীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে। তারা ফেডারেল কর্মকর্তাদের এই পদক্ষেপে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য সম্ভাব্য আইনি পদক্ষেপের প্রস্তুতিও নিচ্ছেন।
ওয়াশিংটন সার্কেলে বসবাসকারী মেঘান আব্রাহাম সাংবাদিকদের বলেন, তাকে সরে যেতে বললে তিনি শান্তিপূর্ণভাবে তার জিনিসপত্র গুছিয়ে নেবেন। তিনি ভীত নন, কারণ তিনি কোনো ভুল করছেন না। তিনি আরও বলেন, “অনেকে আমাদের খারাপ মানুষ বা অপরাধী হিসেবে চিত্রিত করতে চায়। অথবা তারা আমাদের প্রতি দয়া দেখায়, যেন আমরা অসহায়। আমরাও মানুষ। আমরাও কাজ করি এবং ভালো থাকতে চাই। কিন্তু সবকিছু গুছিয়ে অন্য কোথাও চলে যাওয়া—এটা একটা চাপ, যা থাকার কথা নয়, কিন্তু আছে।”
এর আগে, বৃহস্পতিবার সকালে লিংকন মেমোরিয়াল এবং কেনেডি সেন্টারের কাছে একটি আশ্রয়কেন্দ্রে অভিযান চালানো হয়, যে রাস্তা দিয়ে প্রায়ই ট্রাম্পের গাড়িবহর চলাচল করে। গত সপ্তাহে ট্রাম্প সামাজিক মাধ্যমে ওই আশ্রয়কেন্দ্রের ছবি পোস্ট করেছিলেন।
ট্রাম্প সম্প্রতি স্থানীয় পুলিশ বাহিনীকে ফেডারেল করার এবং ন্যাশনাল গার্ড সদস্যদের মোতায়েন করার ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি জোর দিয়ে বলেছেন, গৃহহীনদের “অবিলম্বে” সরে যেতে হবে। একইসঙ্গে তিনি জানান, তাদের থাকার জায়গা দেওয়া হবে, তবে তা “ক্যাপিটালের অনেক দূরে।”
মিরামি’স কিচেন-এর মুখপাত্র কিয়ারস্টিন কুইনসল্যান্ড সিএনএনকে জানান, তারা জানতে পেরেছেন যে শহরের বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্র খালি করার পরিকল্পনা করা হচ্ছে, তবে ফেডারেল সরকার তাদের সঙ্গে কোনো পরিকল্পনা শেয়ার করেনি। কুইনসল্যান্ড বলেন, “এটা সত্যিই নজিরবিহীন।” তিনি আরও যোগ করেন, যারা ইতোমধ্যে পুনর্বাসন কর্মসূচির সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন, তাদের এই অভিযানের কারণে আশ্রয় ও সাহায্য থেকে বঞ্চিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
কুইনসল্যান্ডের মতে, “এই পদক্ষেপের মূল সমস্যা হলো, ডোনাল্ড ট্রাম্পসহ প্রশাসনের কেউ রাস্তায় গৃহহীনদের দেখতে চান না। তারা ভার্জিনিয়া, মেরিল্যান্ড অথবা এমন কোনো অঞ্চলে থাকুক, যেখানে ডোনাল্ড ট্রাম্প যান না—গৃহহীনতা সেখানেও বিদ্যমান।”
তথ্য সূত্র: CNN