আশ্চর্য আবিষ্কার! একই স্থানে ২ ধরনের প্রাচীন মানব প্রজাতি!

প্রাচীন মানব প্রজাতিদের বিবর্তন বিষয়ক গবেষণায় নতুন দিগন্ত উন্মোচন হয়েছে।

ইথিওপিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে পাওয়া জীবাশ্ম বিশ্লেষণ করে বিজ্ঞানীরা জানতে পেরেছেন, আজ থেকে প্রায় ২৬ থেকে ২৮ লক্ষ বছর আগে, একই স্থানে দুটি ভিন্ন ধরনের হোমিনিন প্রজাতি (আদি মানব প্রজাতি) বাস করত।

এদের মধ্যে একটি প্রজাতি হয়তো আগে অজানা ছিল।

সম্প্রতি ‘নেচার’ জার্নালে প্রকাশিত এই গবেষণা মানব বিবর্তনের জটিলতা আরও স্পষ্ট করেছে।

আফ্রিকার আফার অঞ্চলে (Afar region) পাওয়া এই জীবাশ্মগুলি বিশ্লেষণ করেছেন বিজ্ঞানীরা।

২০১৮ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে পাওয়া ১০টি দাঁত ‘অস্ট্রালোপিথেকাস’ (Australopithecus) গোত্রের, যা আদি মানব প্রজাতির একটি পরিচিত রূপ।

অন্যদিকে, ২০১৫ সালে আবিষ্কৃত তিনটি দাঁত ‘হোমো’ (Homo) গোত্রের, যাদের মধ্যে আধুনিক মানব প্রজাতি ‘হোমো সেপিয়েন্স’ও অন্তর্ভুক্ত।

এই আবিষ্কারের ফলে বিজ্ঞানীরা মানব বিবর্তন সম্পর্কে নতুন ধারণা পাচ্ছেন।

এতদিন পর্যন্ত, জীবাশ্মের রেকর্ড অনুযায়ী, মনে করা হতো ‘অস্ট্রালোপিথেকাস’-এর পরেই ‘হোমো’ প্রজাতির উদ্ভব হয়েছে।

কিন্তু নতুন এই আবিষ্কার প্রমাণ করে, এই দুটি প্রজাতি একই সময়ে পৃথিবীতে বসবাস করত।

আমাদের অনেকের মনেই মানব বিবর্তনের যে ধারণা রয়েছে, যেখানে বানর থেকে নিয়ানডার্থাল এবং তারপর আধুনিক মানুষের উদ্ভব হয়েছে, এই গবেষণা সেই ধারণা ভুল প্রমাণ করে।

কায়ে রিড

বিবর্তন আসলে সরলরৈখিক নয়, বরং একটি বহু শাখা যুক্ত বৃক্ষের মতো।

এখানে দুটি হোমিনিন প্রজাতি একসঙ্গে ছিল।

কিছু প্রজাতি হয়তো বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল, আবার কিছু প্রজাতি হয়তো টিকে ছিল।

আফ্রিকার এই অঞ্চলে প্রত্নতাত্ত্বিক খনন দীর্ঘদিন ধরে চলছে।

এই অঞ্চলে পাওয়া গেছে প্রাচীন পাথরের হাতিয়ার, যা মানব বিবর্তনের গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ।

এখানকার টেকটোনিক প্লেটগুলির সক্রিয়তার কারণে মাটির গভীরে থাকা পুরনো স্তরের কণাগুলি (sediment) প্রায়ই ভূপৃষ্ঠে উঠে আসে, যা মানব বিবর্তনের প্রায় ৫০ লক্ষ বছরের ইতিহাস জানতে সাহায্য করে।

বিজ্ঞানীরা মনে করেন, এই অঞ্চলে পাওয়া জীবাশ্মগুলি বিশ্লেষণের মাধ্যমে মানব বিবর্তন সম্পর্কে আরও অনেক অজানা তথ্য জানা যেতে পারে।

আমরা এখন পর্যন্ত আদি ‘হোমো’-দের দাঁত ও চোয়ালের গঠন সম্পর্কে জানি।

তবে আরও বেশি জীবাশ্ম খুঁজে না পাওয়া পর্যন্ত ‘অস্ট্রালোপিথেকাস’ এবং ‘হোমো’-দের মধ্যে পার্থক্যগুলো স্পষ্টভাবে বোঝা যাবে না।

এই আবিষ্কারের ফলে, বিজ্ঞানীরা ধারণা করছেন, ‘অস্ট্রালোপিথেকাস’ প্রজাতিটি হয়তো ‘লুসি’র (Lucy) সমসাময়িক ছিল।

‘লুসি’ ছিল ‘অস্ট্রালোপিথেকাস অ্যাফারেনসিস’ (Australopithecus afarensis) প্রজাতির একটি পরিচিত সদস্য, যা প্রায় ৩.২ মিলিয়ন বছর আগে পৃথিবীতে হেঁটেছিল।

নতুন গবেষণায় পাওয়া দাঁতগুলো ‘অস্ট্রালোপিথেকাস অ্যাফারেনসিস’-এর দাঁতের সাথে কিছু মিল দেখালেও, তাদের মধ্যে ভিন্নতা রয়েছে।

তাই বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, এই দাঁতগুলো হয়তো ‘অস্ট্রালোপিথেকাস’-এর একটি নতুন প্রজাতির, যারা ‘হোমো’ প্রজাতির সঙ্গে একই সময়ে বসবাস করত।

এই আবিষ্কার মানব বিবর্তন নিয়ে আমাদের ধারণাকে আরও সমৃদ্ধ করবে এবং আমাদের পূর্বপুরুষদের সম্পর্কে নতুন তথ্য দেবে, এমনটাই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *