মৃত্যুর কাছাকাছি দেখা: নাস্তিক কিভাবে বদলে গেলেন?

শিরোনাম: নাস্তিক থেকে আধ্যাত্মিকতার পথে: এক কর্মীর মৃত্যু ও উপলব্ধির গল্প

মৃত্যু, যা জীবনের সবচেয়ে বড় সত্য, অনেকের কাছেই এক গভীর রহস্য। এই রহস্যের মুখোমুখি হয়ে কিভাবে একজন মানুষ তার বিশ্বাসের পরিবর্তন ঘটান, সেই গল্প শোনাবো আজ।

স্কট জ্যানসেন নামের এক ব্যক্তি, যিনি দীর্ঘদিন ধরে একজন “হসপিট্যাল সোশ্যাল ওয়ার্কার” হিসেবে কাজ করেছেন, অর্থাৎ তিনি মৃত্যুর কাছাকাছি থাকা রোগীদের দেখাশোনা করতেন। একসময় নাস্তিক জ্যানসেন কিভাবে ধীরে ধীরে আধ্যাত্মিকতার দিকে ঝুঁকেছেন, সেই কাহীনিই আজকের আলোচনার বিষয়।

জ্যানসেনের কাজ ছিল কঠিন—মৃত্যুপথযাত্রীদের সেবা করা। তিনি তাদের যন্ত্রণা লাঘব করতে, তাদের শেষ সময়ে পাশে থাকতে চেষ্টা করতেন।

এই কাজটি করতে গিয়েই তিনি এমন কিছু অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়েছেন, যা তার জীবনদর্শন বদলে দিয়েছে। তিনি দেখেছেন, মৃত্যুর মুহূর্তে মানুষজন এমন কিছু কথা বলছেন বা এমন কিছু দৃশ্য দেখছেন, যা আগে তার কাছে ছিল কল্পনাতীত।

প্রথমে, জ্যানসেনের মনে হতো, এগুলো হয়তো অসুস্থতা বা ওষুধের কারণে হওয়া বিভ্রম। কিন্তু ধীরে ধীরে, রোগীদের সঙ্গে কথা বলতে বলতে, তাদের অভিজ্ঞতাগুলো জানতে পেরে তিনি ভিন্নভাবে ভাবতে শুরু করেন।

একটি ঘটনার কথা বলি। বাডি নামের এক বৃদ্ধের কথা, যিনি তার স্ত্রী মেরিকে হারিয়েছিলেন।

মেরির মৃত্যুর পর বাডি জ্যানসেনকে কিছু ছবি দেখান। ছবিতে দেখা যায়, মেরি, যিনি দীর্ঘদিন ধরে আলঝাইমার্স রোগে ভুগছিলেন, মৃত্যুর আগে বিছানায় উঠে বসেছিলেন এবং যেন কারও সঙ্গে কথা বলছিলেন। জ্যানসেনের কাছে এটি ছিল অবিশ্বাস্য।

এমন আরও অনেক ঘটনা জ্যানসেনকে নাড়া দিয়েছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের একজন সৈনিক ইভানের কথা তিনি উল্লেখ করেছেন।

ইভান যুদ্ধাহত অবস্থায় এক অলৌকিক আলোকময় মানুষের দেখা পান, যিনি তাকে ভালোবাসার কথা বলেছিলেন। আবার, এক ক্যান্সার আক্রান্ত বাবার মৃত্যুর আগে তার ছেলের বয়সী একটি ছেলের সঙ্গে দেখা হওয়ার গল্পও শোনা যায়, যে তাকে আশ্বস্ত করে যে সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে। এই ধরনের অভিজ্ঞতাগুলো জ্যানসেনকে তার পুরোনো ধারণাগুলো নতুন করে ভাবতে বাধ্য করে।

জ্যানসেনের এই পরিবর্তনের পেছনে কাজ করেছে বহু বছরের অভিজ্ঞতা। তিনি রোগীদের কথা শুনেছেন, তাদের অনুভূতিগুলো বোঝার চেষ্টা করেছেন।

তিনি উপলব্ধি করেছেন, মৃত্যুর সময় মানুষজন কেবল শারীরিক যন্ত্রণাই নয়, মানসিক শান্তিরও খোঁজ করেন। তাদের মধ্যে এমন কিছু উপলব্ধির জন্ম হয়, যা জাগতিক যুক্তির ঊর্ধ্বে।

জ্যানসেনের নিজের জীবনেও এমন কিছু ঘটনা ঘটেছে, যা তার বিশ্বাসের ভিত নাড়িয়ে দিয়েছে। ছাত্রজীবনে তিনি এক রাতে অ্যাম্বুলেন্সের শব্দ শুনেছিলেন, যা আসলে তার চাচার মৃত্যুর সময় হয়েছিল।

এই ঘটনা তাকে বুঝিয়েছিল, হয়তো এমন কিছু শক্তি আছে, যা আমরা সাধারণ চোখে দেখি না।

দীর্ঘদিন ধরে মৃত্যুর কাছাকাছি থেকে জ্যানসেন এখন বিশ্বাস করেন, মানুষের চেতনার অবিনশ্বরতা রয়েছে। তিনি মনে করেন, মৃত্যুর পর মানুষ তার উৎস, অর্থাৎ সৃষ্টিকর্তার কাছে ফিরে যায়।

তার এই বিশ্বাস তাকে আরও মানবিক করে তুলেছে। তিনি এখন মানুষের ভালো দিকটা দেখতে পান, তাদের দুর্বলতাগুলো ক্ষমা করতে পারেন।

স্কট জ্যানসেনের এই যাত্রা আমাদের দেখায়, বিশ্বাস একটি চলমান প্রক্রিয়া। জীবনের অভিজ্ঞতা, মানুষের সঙ্গে মিশে আমরা আমাদের ধারণাগুলোকে নতুন করে সাজাই।

মৃত্যু, যা আমাদের জীবনের একটি অনিবার্য অংশ, তা হয়তো আমাদের উপলব্ধির দুয়ার খুলে দেয়, যা আমাদের জীবনকে আরও অর্থবহ করে তোলে।

তথ্য সূত্র: CNN

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *