ফেব্রুয়ারির পর ট্রাম্প-জেলেনস্কির সম্পর্কে বড় পরিবর্তন! আলোচনা ভেস্তে যাওয়ার কারণ?

যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির মধ্যে সম্পর্কটি বেশ কয়েক মাস ধরে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে তাদের সম্পর্ক কেমন, তা নিয়ে কৌতূহল রয়েছে আন্তর্জাতিক মহলে।

সম্প্রতি, ট্রাম্পের সঙ্গে জেলেনস্কির একটি বৈঠকের পর সম্পর্কের উন্নতি হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

ফেব্রুয়ারি মাসে ওভাল অফিসে জেলেনস্কির সঙ্গে ট্রাম্পের একটি বৈঠক হয়েছিল। সেই সময় দুই নেতার মধ্যে মতবিরোধ দেখা দেয়।

ট্রাম্প নাকি জেলেনস্কিকে সরাসরি বলেছিলেন, “তোমার তো কোনো কার্ড নেই।” এমনকী, বৈঠকের পর জেলেনস্কিকে হোয়াইট হাউজ ত্যাগ করতেও বলা হয়েছিল।

ট্রাম্প নাকি বলেছিলেন, “শান্তি আলোচনার জন্য প্রস্তুত হলে, তবেই সে (জেলেনস্কি) আবার আসতে পারবে।”

কিন্তু মাস ছয়েক পর, পরিস্থিতি অনেকটাই বদলেছে।

আগামী সোমবার জেলেনস্কি আবার হোয়াইট হাউজে আসছেন।

ধারণা করা হচ্ছে, ট্রাম্পের সঙ্গে আলাস্কায় রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের যে বৈঠক হয়েছে, সেই বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হবে। এছাড়া, ইউক্রেনে শান্তি ফিরিয়ে আনার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন প্রেসিডেন্টের পরিকল্পনা সম্পর্কেও আলোচনা হতে পারে।

আলাস্কার বৈঠকে ট্রাম্প এবং পুতিনের মধ্যে প্রায় তিন ঘণ্টা ধরে আলোচনা হয়।

তবে, এই বৈঠকের বিষয়বস্তু নিয়ে ইউক্রেন এবং ইউরোপীয় কর্মকর্তাদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে।

ট্রাম্প শুরুতে বলেছিলেন, তিনি দ্রুত যুদ্ধবিরতি চান।

তবে পরে তিনি জানান, রাশিয়ার বোমা হামলা বন্ধের শর্ত ছাড়াই একটি পূর্ণাঙ্গ শান্তি চুক্তি করতে চান।

ইউরোপীয় নেতারা এবং জেলেনস্কি, উভয়েই এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করেছেন।

তাদের মতে, যতক্ষণ পর্যন্ত ইউক্রেন আক্রমণের শিকার হচ্ছে, ততক্ষণ পর্যন্ত আলোচনার কোনো সুযোগ নেই।

ট্রাম্প নাকি পুতিনের এই প্রস্তাবের প্রতিও আগ্রহ দেখিয়েছেন যে, যুদ্ধ বন্ধের শর্ত হিসেবে ইউক্রেনকে কিছু ভূখণ্ড ছাড়তে হতে পারে।

তিনি নাকি ইউরোপীয় কর্মকর্তাদের সঙ্গে ফোনালাপে বলেছেন, পুতিন এখনো ডনবাস অঞ্চলের পুরোটা চাইছেন।

এর মাধ্যমে ট্রাম্প বোঝাতে চেয়েছেন, জেলেনস্কি যদি এই অঞ্চলটি ছেড়ে দিতে রাজি হন, তাহলে দ্রুত যুদ্ধ শেষ করা যেতে পারে।

যুদ্ধ শেষ হলে ইউক্রেনকে নিরাপত্তা দিতে যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রহের কথা শোনা গেলেও, ট্রাম্প ঠিক কী ধরনের সহায়তা দিতে চান, তা এখনো স্পষ্ট নয়।

ফেব্রুয়ারির তিক্ত অভিজ্ঞতার পর ট্রাম্প এবং জেলেনস্কির সম্পর্ক অনেকদূর এগিয়েছে।

ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ এবং ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কেইর স্টারমারসহ ইউরোপীয় নেতারা জেলেনস্কিকে ট্রাম্পের সঙ্গে কিভাবে আলোচনা করতে হবে, সে বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছেন।

তারা কম আক্রমণাত্মক এবং যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রদর্শনের কথা বলেছিলেন।

জেলেনস্কি নিজেও ওয়াশিংটনে আসার আমন্ত্রণ জানানোয় কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন।

তিনি এক্সে (সাবেক টুইটার) লিখেছেন, “সোমবার আমি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে ওয়াশিংটন ডিসিতে মিলিত হব এবং যুদ্ধ বন্ধের বিস্তারিত বিষয় নিয়ে আলোচনা করব।

আমন্ত্রণের জন্য আমি কৃতজ্ঞ।”

হোয়াইট হাউজের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ইউরোপীয় নেতাদেরও জেলেনস্কির সঙ্গে বৈঠকে যোগ দেওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

ফিনল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট আলেকজান্ডার স্টাব এবং ন্যাটোর মহাসচিব মার্ক রুটেও এই বৈঠকে অংশ নিতে পারেন।

আলাস্কায় পুতিনের সঙ্গে বৈঠকের কয়েক দিন পরেই ওভাল অফিসে জেলেনস্কিকে আমন্ত্রণ জানানোটা তাৎপর্যপূর্ণ।

আলাস্কার বৈঠকে পুতিনকে যেভাবে স্বাগত জানানো হয়েছিল, তাতে বোঝা যায়, রাশিয়াকে কূটনৈতিকভাবে একঘরে করার যে চেষ্টা এতদিন ধরে চলছিল, ট্রাম্প যেন সেই অবস্থান থেকে সরে আসছেন।

ফেব্রুয়ারির সেই বৈঠকের পর ট্রাম্প এবং জেলেনস্কি আরও দুবার মুখোমুখি হয়েছেন।

এপ্রিল মাসে, পোপ ফ্রান্সিসের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার আগে ভ্যাটিকানে তাদের মধ্যে সংক্ষিপ্ত সাক্ষাৎ হয়।

এরপর, জুনে নেদারল্যান্ডসে ন্যাটোর সম্মেলনেও তারা মিলিত হন।

ট্রাম্প নিজেও স্বীকার করেছেন, জেলেনস্কির সঙ্গে তার সম্পর্ক এখন অনেক ভালো।

তিনি বলেন, “আমরা কঠিন সময় কাটিয়েছি… তিনি (জেলেনস্কি) খুবই ভালো মানুষ।”

আলাপকালে ট্রাম্প জানান, তিনি দ্রুত এই যুদ্ধ শেষ করতে চান।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *