পশ্চিমবঙ্গের বাইরে, সুদূর আমেরিকাতেও যে মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে বিয়ের বিষয়টি বেশ গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হয়, তা এখন অনেকেরই জানা। সেখানেও বিয়ের জন্য সঙ্গী খোঁজার ধরনটি বেশ বিচিত্র।
কেউ বেছে নিচ্ছেন আধুনিক ডেটিং অ্যাপস, আবার কেউ ভরসা রাখছেন সনাতন পদ্ধতির ওপর। সম্প্রতি, এই বিষয়টি নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে সংবাদ সংস্থা এসোসিয়েটেড প্রেস (Associated Press)।
তাদের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, কীভাবে আমেরিকান মুসলিমরা বিয়ের জন্য জীবনসঙ্গী খুঁজে নেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নিউইয়র্কের মুসলিম মেয়র প্রার্থী জোহরান মামদানি তার স্ত্রীর সঙ্গে ‘হিঞ্জ’ (Hinge) নামের একটি ডেটিং অ্যাপের মাধ্যমে পরিচিত হয়েছিলেন। বিষয়টি অনেকের কাছেই বেশ অনুপ্রেরণাদায়ক।
কারণ, ডেটিং অ্যাপের মাধ্যমে জীবনসঙ্গী খুঁজে নেওয়ার চল এখন আমেরিকায় বেশ জনপ্রিয়। শুধু তাই নয়, এই বিষয়টিকে কেন্দ্র করে ‘মুসলিম ম্যাচমেকার’ (Muslim Matchmaker) নামে একটি রিয়েলিটি শো’ও তৈরি হয়েছে, যা বর্তমানে ‘হুলু’ (Hulu)-তে প্রচারিত হচ্ছে।
এই শো’য়ের দুই ম্যারেজ মেকার, ইয়াসমিন এলহাদি এবং হোদা আব্রাহিম-এর মতে, মুসলিম আমেরিকানদের প্রেম এবং বিয়ের ক্ষেত্রে কিছু বিশেষ চ্যালেঞ্জ রয়েছে। তবে, তাদের কিছু সাধারণ সমস্যাও রয়েছে, যা সবার ক্ষেত্রেই প্রায় একই রকম।
তারা মনে করেন, এই শো’টি সেই বিষয়গুলোকেই তুলে ধরে।
প্রতিবেদনে আরও জানা যায়, নুরা মাজনাভি নামের একজন লেখিকা ও আইনজীবী তাঁর নিজের বিয়ের অভিজ্ঞতার কথা বলতে গিয়ে জানান, তিনি তাঁর বন্ধু, পরিবার এবং পরিচিতদের মাধ্যমেই জীবনসঙ্গী খুঁজেছেন।
এমনকি, তাঁর মা একটি রেডিও বিজ্ঞাপণ শুনে তাঁকে ‘ম্যাচ ডট কম’ (Match.com)-এ চেষ্টা করতে বলেছিলেন। প্রথমে রাজি না হলেও, পরে তিনি এই ওয়েবসাইটে অ্যাকাউন্ট খোলেন এবং সেখান থেকেই তাঁর স্বামীর সঙ্গে পরিচয় হয়।
তবে, মুসলিমদের মধ্যে জীবনসঙ্গী খোঁজার ক্ষেত্রে একটি সমস্যা হলো, তাঁদের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম। হোদা আব্রাহিমের মতে, “এমন নয় যে, আপনি জিমে গিয়েই আপনার জীবনসঙ্গীকে খুঁজে পাবেন।”
তাই অনেক সময় তাঁদের দীর্ঘ দূরত্বের সম্পর্ক তৈরি করতে হয়।
এই শো’তে, ম্যাচমেকাররা ‘রুলস অফ থ্রি’ (Rules of Three) নামে একটি নিয়ম অনুসরণ করেন। এই নিয়ম অনুযায়ী, তিনটি মিটিং, তিন মাসের মধ্যে সম্পন্ন করতে হয় এবং সঙ্গীর সঙ্গে ৩০০টি সামঞ্জস্যপূর্ণ প্রশ্ন নিয়ে আলোচনা করতে হয়।
এই আলোচনার মাধ্যমে তাঁরা সঙ্গীর রুচি, জীবনযাত্রা এবং ধর্মীয় অনুশাসনের প্রতি শ্রদ্ধাবোধের মতো বিষয়গুলো বিবেচনা করেন। অনেক সময়, তাঁরা ‘হালাল-হারাম অনুপাত’ (halal-haram ratio)-এর মতো বিষয়গুলোও দেখেন, যা ধর্মীয় রীতিনীতি কতটা মানা হচ্ছে, সেটির ওপর নির্ভর করে।
উদাহরণস্বরূপ, কোনো নারী হয়তো নিয়মিত নামাজ পড়েন, কিন্তু তাঁর পোশাক-পরিচ্ছদে রক্ষণশীলতা নেই। সেক্ষেত্রে, তিনি এমন একজন জীবনসঙ্গী চান, যিনি তাঁর বিশ্বাসের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হবেন এবং একইসঙ্গে সমাজের প্রচলিত রীতিনীতিগুলোও মেনে চলবেন।
আবার, কোনো পুরুষ হয়তো এমন একজন সঙ্গিনী চান, যাঁর মধ্যে ইসলামিক গুণাবলী রয়েছে। তবে, হিজাব পরেন কিনা, সে বিষয়ে তাঁর কোনো বিশেষ আগ্রহ নেই।
তবে, অনেক মুসলিম মনে করেন, ডেটিং শব্দটা অমুসলিমদের তৈরি করা। তাই, তাঁরা বিয়ের আগে শারীরিক সম্পর্কের ধারণাকে সমর্থন করেন না।
তাঁদের মতে, ডেটিংয়ের পরিবর্তে, এমন একটি পদ্ধতির অনুসরণ করা উচিত, যেখানে সম্পর্কের পবিত্রতা বজায় থাকে।
তবে, রুক্ষতার এই যুগে, মানুষ ভালোবাসার মানুষটিকে খুঁজে পেতে চায়। তাই, এই ক্ষেত্রে বিভিন্ন সংস্কৃতির মানুষের মধ্যে সম্পর্কের বিষয়টিও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে।
অনেক সময়, সংস্কৃতিগত পার্থক্যের কারণে কিছু সমস্যা দেখা যায়। যেমন, বিয়ের সময় কে কত খরচ করবে, সেই বিষয়ে মতভেদ হতে পারে।
এই বিষয়ে, কাইজার আসলাম নামের একজন মুসলিম ধর্মগুরু বলেন, “ধর্মীয়ভাবে, আমাদের উৎসাহিত করা হয়, বিভিন্ন ভালো ঐতিহ্যগুলোর মধ্যে পারস্পরিক মিথস্ক্রিয়া তৈরি করতে।”
সবশেষে, প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মুসলিম হোক বা না হোক, আধুনিক যুগে ভালোবাসার মানুষ খুঁজে পাওয়াটা বেশ কঠিন।
তথ্য সূত্র: