ভয়ংকর ঘূর্ণিঝড় এরিন: জীবনহানির আশঙ্কা! যুক্তরাষ্ট্রের উপকূল জুড়ে সতর্কতা!

**হারিকেন এরিন: যুক্তরাষ্ট্রের পূর্ব উপকূল এবং বারমুডার জন্য জীবন-হুমকি, জলবায়ু পরিবর্তনের সতর্কবার্তা**

আটলান্টিক মহাসাগরে একটি শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়, যার নাম এরিন, বর্তমানে আঘাত হানতে চলেছে। এর প্রভাবে যুক্তরাষ্ট্রের পূর্ব উপকূল এবং বারমুডায় জীবন-হুমকি সৃষ্টিকারী ঢেউ ও স্রোতের সৃষ্টি হতে পারে।

আবহাওয়াবিদরা জানিয়েছেন, ঘূর্ণিঝড়টি উপকূল থেকে দূরে থাকলেও এর শক্তিশালী বাতাসের কারণে বিশাল ঢেউ তৈরি হবে, যা সমুদ্র উপকূলের কাছাকাছি অঞ্চলে বসবাসকারীদের জন্য বিপদ ডেকে আনবে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, এরিনের প্রভাবে সবচেয়ে বড় উদ্বেগের কারণ হলো তীব্র স্রোত এবং উঁচু ঢেউ। এর আগে, ঘূর্ণিঝড়ের বাইরের দিকের বৃষ্টিপুঞ্জ পুয়ের্তো রিকোতে আঘাত হেনেছিল, যার ফলে সেখানে ব্যাপক বন্যা ও বিদ্যুৎ বিভ্রাট দেখা দেয়।

এছাড়া, বাহামা এবং টার্কস ও কাইকোস দ্বীপপুঞ্জে ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে ভূমিধসের আশঙ্কা করা হচ্ছে। আবহাওয়ার পূর্বাভাস অনুযায়ী, মঙ্গলবার থেকে বুধবারের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের পূর্ব উপকূল এবং বারমুডায় এর প্রভাব আরও বাড়তে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় আবহাওয়া দপ্তর জানিয়েছে, যদিও এরিন উপকূলের কাছাকাছি আসছে না, তবুও সমুদ্রের স্রোত ও বড় ঢেউয়ের কারণে জীবনহানির ঝুঁকি রয়েছে।

বিশেষ করে যারা সমুদ্রের কাছাকাছি বসবাস করেন, তাদের জন্য এটি অত্যন্ত উদ্বেগের বিষয়। স্থানীয় কর্তৃপক্ষ জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে এবং সমুদ্র তীরবর্তী এলাকা থেকে বাসিন্দাদের সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে।

আবহাওয়াবিদরা বলছেন, হারিকেন এরিন উত্তর-উত্তর-পূর্ব দিকে অগ্রসর হওয়ার সময় আরও শক্তিশালী হতে পারে।

এর ফলে উপকূলীয় অঞ্চলে বন্যা দেখা দিতে পারে। এছাড়া, শক্তিশালী বাতাসের কারণে গাছপালা উপড়ে যাওয়ারও আশঙ্কা রয়েছে। উত্তর ক্যারোলিনার ডারহাম কাউন্টিতে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে এবং সেখানকার বাসিন্দাদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে।

এই হারিকেন এরিনের দ্রুত শক্তিশালী হওয়ার পেছনে জলবায়ু পরিবর্তনের একটি বড় ভূমিকা রয়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

তারা বলছেন, উষ্ণ জলবায়ুর কারণে সমুদ্রের তাপমাত্রা বাড়ছে, যা ঘূর্ণিঝড়গুলোকে আরও শক্তিশালী করে তুলছে। এরিন ছিল চলতি আটলান্টিক হারিকেন মৌসুমের প্রথম ঘূর্ণিঝড়।

এর আগে, আন্দ্রেয়া, ব্যারি, চান্তাল এবং ডেক্সটার নামক আরও কয়েকটি ঝড় দেখা গেলেও, সেগুলো এত শক্তিশালী ছিল না।

বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলছেন, আগস্ট মাস হলো ঘূর্ণিঝড়ের মৌসুমের সবচেয়ে ব্যস্ত সময়।

সাধারণত, মধ্য-আগস্ট থেকে মধ্য-অক্টোবর পর্যন্ত সময়ে আটলান্টিক অঞ্চলে ঘূর্ণিঝড়ের প্রকোপ বাড়ে। এ বছরও স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি ঘূর্ণিঝড় হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

এই পরিস্থিতিতে, বাংলাদেশের জন্য বিষয়টি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

ঘূর্ণিঝড় ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বাংলাদেশ একটি ঝুঁকিপূর্ণ দেশ। অতীতে সিডর, আইলার মতো ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড়গুলো আমাদের উপকূলীয় অঞ্চলে ব্যাপক ক্ষতি করেছে।

তাই, এরিন নামক ঘূর্ণিঝড়ের ঘটনা আমাদের জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার গুরুত্ব সম্পর্কে নতুন করে সচেতন করে তোলে।

আমাদের উপকূলীয় অঞ্চলের বাসিন্দাদের জন্য ঘূর্ণিঝড়ের পূর্বাভাস এবং সতর্কবার্তাগুলো সময় মতো পাওয়া এবং সে অনুযায়ী প্রস্তুতি নেওয়া অপরিহার্য।

একইসঙ্গে, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক সহযোগিতা আরও বাড়ানো দরকার, যাতে ভবিষ্যতে এমন প্রাকৃতিক দুর্যোগের প্রভাব কমিয়ে আনা যায়।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *