**কুইন্টাস এয়ারলাইন্সের রেকর্ড জরিমানা: শ্রমিক অধিকারের গুরুত্ব**
অস্ট্রেলিয়ার শীর্ষ বিমান সংস্থা কুইন্টাস এয়ারওয়েজকে শ্রমিক ছাঁটাইয়ের অভিযোগে বিশাল অংকের জরিমানা করেছে দেশটির একটি আদালত। কোভিড-১৯ মহামারীর সময়ে ১,৮০০ জন গ্রাউন্ড স্টাফকে (বিমানবন্দরের গ্রাউন্ড স্টাফ, যারা সাধারণত লাগেজ পরিচালনা, বিমানের রক্ষণাবেক্ষণ এবং অন্যান্য সহায়ক পরিষেবাগুলোর সাথে জড়িত) অবৈধভাবে চাকরিচ্যুত করার দায়ে এই জরিমানা করা হয়েছে।
এই মামলার রায় শ্রমিক অধিকারের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের একটি গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।
আদালত কুইন্টাসকে ৯০ মিলিয়ন অস্ট্রেলীয় ডলার (AUD) জরিমানা করার নির্দেশ দিয়েছে, যা বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৬৪৫ কোটি টাকার সমান (১ অস্ট্রেলীয় ডলার = ৭১.৬১ টাকা, ২৮শে মে ২০২৪)। অস্ট্রেলিয়ার শ্রম আইনের ইতিহাসে কোনো কোম্পানির বিরুদ্ধে এটিই সর্বোচ্চ জরিমানার অঙ্ক।
ফেডারেল কোর্টের বিচারক মাইকেল লি এই রায়ে কুইন্টাসের আন্তরিক অনুশোচনা ও ক্ষতিপূরণের অভাবের সমালোচনা করেন।
বিচারক লি উল্লেখ করেন, কুইন্টাস বোর্ডের সদস্য এবং ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তন আনলেও, তাদের দুঃখপ্রকাশ কর্মীদের ক্ষতির প্রতি নয়, বরং মামলার কারণে কোম্পানির সুনামহানির দিকে বেশি দৃষ্টি নিবদ্ধ ছিল।
তিনি আরও বলেন, এই জরিমানা কোম্পানির জন্য ব্যবসার খরচ হিসেবে গণ্য হওয়ার সুযোগ নেই।
জরিমানার প্রায় ৫ কোটি অস্ট্রেলীয় ডলার পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নকে (Transport Workers’ Union – TWU) পরিশোধ করা হবে, যারা কুইন্টাসের বিরুদ্ধে এই মামলাটি এনেছিল।
২০২০ সালে কুইন্টাসের সিনিয়র ম্যানেজমেন্ট ১,৮২০ জন গ্রাউন্ড স্টাফকে ছাঁটাই করে তাদের কাজ আউটসোর্সিং করার সিদ্ধান্ত নেয়। আদালত এই পদক্ষেপকে কর্মীদের অধিকার খর্ব করার এবং তাদের ট্রেড ইউনিয়ন করার পথে বাধা হিসেবে চিহ্নিত করে।
বিচারক লি কুইন্টাসের পদক্ষেপের সমালোচনা করে বলেন, কোম্পানিটি তাদের কৃতকর্মের জন্য সত্যিই অনুতপ্ত ছিল কিনা, তা নিয়ে তিনি সন্দিহান।
তিনি কোম্পানির সংস্কৃতি, জনসংযোগ এবং মামলার কৌশল নিয়েও প্রশ্ন তোলেন। উদাহরণস্বরূপ, কুইন্টাস ২০২১ সালের আদালতের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল করার ঘোষণা দেয়, রায় পর্যালোচনার জন্য কোনো সময় না দিয়েই।
টিডব্লিউইউ-এর জাতীয় সম্পাদক মাইকেল কেইন এই রায়ের পর বলেন, “সব প্রতিকূলতা সত্ত্বেও, আমরা এমন একটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে লড়েছি যারা নিজেদের নির্দয় প্রমাণ করেছে এবং অবশেষে আমরা জিতেছি।
শ্রম আইন বিশেষজ্ঞ শেই ম্যাকক্রিস্টাল বলেন, “শ্রম আইন লঙ্ঘনের দায়ে এত সংখ্যক কর্মীর বিরুদ্ধে এমন প্রতিকূল পদক্ষেপ নজিরবিহীন। এটি নিয়োগকর্তাদের জন্য একটি বার্তা যে, আইন ভাঙলে শ্রমিক ইউনিয়নগুলো তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারে।
কুইন্টাসের প্রধান নির্বাহী ভানেসা হাডসন এক বিবৃতিতে ক্ষতিগ্রস্ত কর্মীদের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন।
এই গুরুত্বপূর্ণ রায়টি বাংলাদেশের শ্রমিক অধিকারের প্রেক্ষাপটেও তাৎপর্যপূর্ণ। শ্রমিকদের অধিকার সুরক্ষায় এবং অন্যায়ভাবে ছাঁটাইয়ের বিরুদ্ধে আইনি লড়াইয়ের গুরুত্ব এই ঘটনা থেকে স্পষ্ট হয়।
তথ্যসূত্র: সিএনএন