যুক্তরাষ্ট্রের একটি নামকরা জিমন্যাস্টিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে এক সময়ের কোচের বিরুদ্ধে শিশুদের ওপর যৌন নির্যাতনের অভিযোগের প্রেক্ষিতে তাকে গ্রেপ্তার করেছে ফেডারেল ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন (এফবিআই)। অভিযুক্ত কোচের নাম শান গার্ডনার।
আইওয়া অঙ্গরাজ্যের একটি অভিজাত একাডেমিতে কাজ করার সময় তার বিরুদ্ধে এই গুরুতর অভিযোগ ওঠে। খবরটি জানিয়েছে সংবাদ সংস্থা এসোসিয়েটেড প্রেস।
জানা গেছে, গার্ডনারের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি প্রশিক্ষণার্থী তরুণীদের ওপর যৌন নির্যাতন চালাতেন এবং তাদের আপত্তিকর ছবি তুলতেন। গার্ডনারের বিরুদ্ধে পর্নোগ্রাফি বিষয়ক অভিযোগ আনা হয়েছে।
অভিযোগের বিবরণ অনুযায়ী, গার্ডনার ‘চাউ’স জিমন্যাস্টিকস অ্যান্ড ডান্স ইনস্টিটিউট’-এ কাজ করার সময় তরুণীদের সঙ্গে আপত্তিকর আচরণ করতেন। এখানে উল্লেখ্য যে, এই অ্যাকাডেমিটি যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম সেরা জিমন্যাস্টিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র হিসাবে পরিচিত।
অলিম্পিক পদকজয়ী অনেক তারকা এই কেন্দ্রে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন।
২০১৮ সালে মিসিসিপি থেকে আইওয়াতে এসে গার্ডনার এই প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে যোগ দেন। অল্প সময়ের মধ্যেই তিনি জুনিয়র বিভাগের প্রধান এবং প্রতিশ্রুতিশীল তরুণীদের প্রশিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পান।
কিন্তু কয়েক বছর পরেই তাকে কেন্দ্র থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের জিমন্যাস্টিকস সংস্থা ইউএসএ জিমন্যাস্টিকস (USA Gymnastics)-এর পক্ষ থেকে জানানো হয়, সেফস্পোর্ট নামের একটি সংস্থা গার্ডনারকে জিমন্যাস্টদের সঙ্গে সব ধরনের যোগাযোগ থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দিয়েছে।
সেফস্পোর্ট হলো এমন একটি সংস্থা যারা অলিম্পিক ক্রীড়াগুলোতে যৌন নির্যাতনের অভিযোগগুলো খতিয়ে দেখে।
ঘটনার তদন্তে জানা যায়, গার্ডনারের বিরুদ্ধে কমপক্ষে তিনজন তরুণীকে যৌন নির্যাতনের অভিযোগ রয়েছে। এছাড়াও, অভিযোগ রয়েছে যে তিনি আগের কর্মস্থলে মেয়েদের পোশাক পরিবর্তনের গোপন ছবি তুলেছিলেন।
অভিযোগের ভিত্তিতে ২০২১ সালে গার্ডনারকে বরখাস্ত করা হলেও, তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে বেশ কয়েক বছর লেগে যায়।
জানা গেছে, এই সময়ের মধ্যে তিনি আইওয়ার একটি হাসপাতালে চাকরিও করেন। সম্প্রতি, গার্ডনারের বাড়ি থেকে কিছু ছবি ও ভিডিও উদ্ধার করা হয়েছে, যেখানে তরুণীদের নগ্ন অবস্থায় দেখা গেছে।
ধারণা করা হচ্ছে, ছবিগুলো বাথরুমের গোপন ক্যামেরা ব্যবহার করে তোলা হয়েছিল।
এই ঘটনায় সেফস্পোর্ট-এর ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
সমালোচকদের মতে, এই ধরনের ঘটনার তদন্ত এবং অভিযুক্তদের শাস্তি প্রদানে সংস্থাটি অনেক সময় নেয়। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে দীর্ঘসূত্রিতার কারণে অনেক সময় ভুক্তভোগীরা বিচার থেকে বঞ্চিত হন।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, গার্ডনার তাদের সঙ্গে ‘আপত্তিকর স্পর্শ’ করতেন, কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করতেন এবং তাদের গোপন ছবি তুলতেন।
এক ভুক্তভোগী জানান, গার্ডনার তাকে ‘বাবা’র মতো চোখে দেখতেন। কিন্তু পরে তিনি বুঝতে পারেন, গার্ডনারের আসল উদ্দেশ্য ভিন্ন ছিল।
এই ঘটনার তদন্তে বিলম্বের কারণ হিসেবে সেফস্পোর্ট-এর সীমাবদ্ধতা এবং পুলিশের তদন্তে ধীরগতির কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
সেফস্পোর্ট-এর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তারা ঘটনার তদন্তে সহযোগিতা করে থাকে।
তবে, অনেক সময় তদন্তের তথ্য জানাতে তাদের সীমাবদ্ধতা থাকে।
এই ঘটনার পর যুক্তরাষ্ট্রের জিমন্যাস্টিক জগতে পুনরায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট মহলের দাবি, শিশুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে আরও কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।
তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস