মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে তীব্র গরমের পূর্বাভাস: ভয়ঙ্কর ঝুঁকির মুখে কে?

গরমে হাঁসফাঁস অবস্থা এখন সারা বিশ্বেই। গ্রীষ্মকালে তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় মানুষের স্বাস্থ্যহানি ঘটছে, বাড়ছে হিটস্ট্রোকের ঝুঁকি।

সম্প্রতি, যুক্তরাষ্ট্র থেকে আসা একটি প্রতিবেদন জানাচ্ছে, সেখানেও গরমের তীব্রতা বাড়ছে এবং এর ফলে স্বাস্থ্যখাতে দেখা দিচ্ছে উদ্বেগ। আজকের আলোচনায়, আমরা দেখব কীভাবে যুক্তরাষ্ট্রের আবহাওয়া দপ্তর (National Weather Service – NWS) এবং রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্র (Centers for Disease Control and Prevention – CDC) সেখানকার নাগরিকদের জন্য গরম মোকাবিলায় প্রস্তুতি নিতে সাহায্য করে।

একইসঙ্গে, বাংলাদেশের জন্য এই পরিস্থিতি থেকে কি শেখার আছে, সে সম্পর্কেও আলোকপাত করা হবে।

যুক্তরাষ্ট্রে, এনডব্লিউএস ও সিডিসি যৌথভাবে একটি পূর্বাভাস তৈরি করে, যা গরমের ঝুঁকি সম্পর্কে ধারণা দেয়। এই পূর্বাভাসে তাপমাত্রা কতটা গুরুতর, কত দিন তা স্থায়ী হতে পারে এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের উপর এর সম্ভাব্য প্রভাব কেমন হবে, তা বিবেচনা করা হয়।

অতীতের ডেটা বিশ্লেষণ করে, বিশেষ করে মৃত্যুর পরিসংখ্যানের ওপর ভিত্তি করে এই পূর্বাভাস তৈরি করা হয়। আবহাওয়ার পূর্বাভাসে ‘অনুভূত তাপমাত্রা’ (Feels Like Temperature) নামে একটি বিষয়ও যুক্ত করা হয়। বাতাসের আর্দ্রতা ও অন্যান্য বিষয় বিবেচনায় নিয়ে এটি তৈরি করা হয়, যা মানুষকে বাইরে কেমন অনুভব হবে, সেই ধারণা দেয়।

যুক্তরাষ্ট্রের অনেক শহরেই এই ধরনের সতর্কতা জারি করা হয়। উদাহরণস্বরূপ, গত বছর গ্রীষ্মকালে, গড়ে ৬০ মিলিয়নের বেশি আমেরিকান নাগরিককে গরম সম্পর্কিত সতর্কতা ও নির্দেশিকা মেনে চলতে হয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বর্তমানে তাপপ্রবাহগুলো আরো সাধারণ, তীব্র এবং দীর্ঘস্থায়ী হচ্ছে।

রাতের বেলাতেও তাপমাত্রা দ্রুত কমছে না, যা মানুষের জন্য স্বস্তি নিয়ে আসে না। গরম বাড়ার সাথে সাথে তাপমাত্রার রেকর্ডও ভাঙছে। এই পরিস্থিতিতে, এনডব্লিউএস প্রতিদিন সম্ভাব্য রেকর্ড ভাঙা তাপমাত্রার পূর্বাভাস দিয়ে থাকে।

যুক্তরাষ্ট্রের আবহাওয়াবিদরা আগামী কয়েক সপ্তাহের জন্য বিভিন্ন অঞ্চলের গড় তাপমাত্রা কেমন থাকবে, সে সম্পর্কেও ধারণা দেন। সাধারণত, যে অঞ্চলে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি তাপমাত্রা থাকার সম্ভাবনা থাকে, সেখানকার পূর্বাভাসে গাঢ় রঙ ব্যবহার করা হয়। আর স্বাভাবিক তাপমাত্রা থাকার সম্ভাবনা থাকলে ধূসর রঙ ব্যবহার করা হয়।

যুক্তরাষ্ট্রের এই পরিস্থিতি থেকে বাংলাদেশের জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা নেওয়া যেতে পারে। আমাদের দেশেও গ্রীষ্মকালে তাপমাত্রা বেশ কয়েক দিন ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের (১০৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট) উপরে থাকে, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি করে।

বাংলাদেশে এখনো পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের মতো সমন্বিত পূর্বাভাস ব্যবস্থা সেভাবে গড়ে ওঠেনি। তবে, বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর (Bangladesh Meteorological Department – BMD) নিয়মিতভাবে আবহাওয়ার পূর্বাভাস দিয়ে থাকে। এই পূর্বাভাসগুলোতে গরমের তীব্রতা এবং সম্ভাব্য স্বাস্থ্য ঝুঁকির বিষয়ে আরো বিস্তারিত তথ্য যোগ করা যেতে পারে।

বাংলাদেশে, বিশেষ করে দরিদ্র ও বয়স্ক জনগোষ্ঠীর জন্য গরমের প্রভাব মারাত্মক হতে পারে। তাই, সরকারি ও বেসরকারি উভয় পর্যায়েই সচেতনতা বৃদ্ধি এবং দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। জনগণকে হিটস্ট্রোকের লক্ষণ ও তা প্রতিরোধের উপায় সম্পর্কে জানানো দরকার।

গরমের সময় শ্রমিকদের জন্য কাজের সময়সূচি পরিবর্তন এবং পর্যাপ্ত বিশ্রাম ও পানীয় জলের ব্যবস্থা করা উচিত। জনস্বাস্থ্য কর্মকর্তাদেরও এই বিষয়ে বিশেষভাবে নজর দিতে হবে।

যুক্তরাষ্ট্রের অভিজ্ঞতা থেকে বোঝা যায়, গরমের ঝুঁকি মোকাবিলায় পূর্বাভাস এবং সতর্কতামূলক ব্যবস্থা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশের জন্য একটি শক্তিশালী এবং সমন্বিত পূর্বাভাস ব্যবস্থা তৈরি করা এখন সময়ের দাবি।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *