আসবাব: চমকে দেওয়া উপাদানে ভবিষ্যতের ডিজাইন!

ভবিষ্যতের আসবাবপত্র: পরিবেশ-বান্ধব উপাদানের এক নতুন দিগন্ত।

বিশ্বজুড়ে পরিবেশ সুরক্ষার ভাবনা যত বাড়ছে, ততই বাড়ছে টেকসই উপাদানের ব্যবহার। আসবাবপত্র তৈরিতেও এর ব্যতিক্রম হচ্ছে না।

অন্যদিকে পরিবেশ-বান্ধব উপাদানের ব্যবহার বাড়ছে। সম্প্রতি, মিলান ডিজাইন সপ্তাহে (Milan Design Week) এই পরিবর্তনের স্পষ্ট চিত্র ফুটে উঠেছে।

ঐতিহ্যবাহী কাঠ বা প্লাস্টিকের বদলে এখন আসবাবপত্র তৈরিতে ব্যবহার করা হচ্ছে নানা ধরনের উদ্ভাবনী উপাদান। এর মধ্যে অন্যতম হলো পুনর্ব্যবহৃত সামগ্রী।

পুরনো কাপড়, ডেনিম, এমনকি পুরোনো জুতার sole থেকেও তৈরি হচ্ছে নান্দনিক আসবাব। শুধু তাই নয়, প্লাস্টিক বর্জ্য, সমুদ্রের শ্যাওলা এবং মাশরুমের মাইসেলিয়াম থেকেও তৈরি হচ্ছে চেয়ার ও সোফা।

এই ধরনের ডিজাইনগুলি পরিবেশের উপর মানুষের প্রভাব কমাতে সাহায্য করে।

ম্যাককিনসি অ্যান্ড কোম্পানির মতে, টেকসই উপাদানে তৈরি আসবাব ও গৃহস্থালীর সামগ্রীর বাজার ২০৩০ সাল নাগাদ প্রায় ৪৫ বিলিয়ন ইউরোতে পৌঁছাবে, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ৫ লক্ষ কোটি টাকার বেশি।

নিউ ইয়র্ক ও লস অ্যাঞ্জেলেসে অবস্থিত ডিজাইন ফার্ম ‘পার্টিকেল’ (Particle) তৈরি করেছে “পার্টস অফ এ হোল” নামের একটি সংগ্রহ। পুরনো কাপড় ও ডেনিম থেকে তৈরি করা হয়েছে এই আসবাবপত্রগুলো।

তারা থ্রিডি-প্রিন্টেড মোমবাতিদান এবং পুরোনো জুতার sole থেকে তৈরি রাবারের জিনিসপত্রও তৈরি করেছে। প্রতিষ্ঠানটি তাদের “আই গট ইউর ব্যাক” চেয়ার ও স্টুলের জন্য পরিচিতি লাভ করেছে, যা তৈরি হয়েছে সম্পূর্ণরূপে পুনর্ব্যবহৃত জুতা থেকে।

মিলানে অনুষ্ঠিত উৎসবে ডেভিড বালদা (Davide Balda) নামক একজন মাল্টিডিসিপ্লিনারি ডিজাইনার বেনetton গ্রুপের সাথে মিলে “টেলারে লা মেটেরিয়া” নামে একটি প্রকল্প উপস্থাপন করেন। এই প্রকল্পে, বিক্রি না হওয়া বেনetton-এর পোশাকগুলি থেকে নতুন উপাদান তৈরি করা হয়েছে, যা স্থাপত্য ও ডিজাইনের কাজে ব্যবহার করা হবে।

এমনকি, মাটির সাথে টেক্সটাইল বর্জ্য মিশিয়ে প্রাকৃতিক টাইলস ও প্লাস্টার তৈরির কথাও ভাবা হচ্ছে।

ডাচ ডিজাইন ফার্ম ‘দ্য নিউ র’ (The New Raw) স্থানীয় বর্জ্য থেকে সংগৃহীত পুনর্ব্যবহৃত প্লাস্টিক ব্যবহার করে আউটডোর আসবাব তৈরি করেছে। এই আসবাবগুলো তৈরি করা হচ্ছে থ্রিডি প্রিন্টিং প্রযুক্তির মাধ্যমে।

টেকসই ডিজাইন ধারণার প্রসারের পাশাপাশি, এর নান্দনিক দিকটির উপরও জোর দেওয়া হচ্ছে। ডিজাইনাররা চান, তাঁদের তৈরি করা জিনিসগুলো দেখতেও সুন্দর হোক, যা মানুষের রুচি ও চাহিদার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ হবে।

কিছু ডিজাইন কোম্পানি ইতিমধ্যে উদ্ভিদ-ভিত্তিক উপাদানের সম্ভাবনা নিয়ে কাজ শুরু করেছে। এক্ষেত্রে, শণ (hemp) এবং গাছের আঠা ব্যবহার করে আসবাব তৈরি করা হচ্ছে।

পোলিশ স্টুডিও ‘হুসারস্কা’ (Husarska) এই ধরনের একটি ডাইনিং সেট তৈরি করেছে। শণ গাছ কার্বন ডাই অক্সাইড শোষণ করতে পারে, যা পরিবেশের জন্য খুবই উপকারী।

কর্কের (cork) ব্যবহারেও নতুনত্ব আনা হচ্ছে। রকওয়েল গ্রুপ ‘কাসা কর্ক’ (Casa Cork) নামে একটি প্রদর্শনীতে কর্কের তৈরি বিভিন্ন জিনিস উপস্থাপন করেছে। প্রদর্শনীতে দেখা যায়, কর্ক দিয়ে তৈরি হয়েছে আসবাবপত্র, আলো এবং অভ্যন্তরীণ সজ্জা।

প্রতি বছর প্রায় ১৩ বিলিয়ন কর্ক স্টপার ফেলে দেওয়া হয়, যা পুনর্ব্যবহারের মাধ্যমে পরিবেশ সুরক্ষায় কাজে লাগানো যেতে পারে।

ইতালীয় ডিজাইন প্ল্যাটফর্ম ‘ডিজাইন ওয়ান্টেড’ (DesignWanted) পরিবেশ সুরক্ষার সাতটি প্রধান লক্ষ্যের সাথে সঙ্গতি রেখে বিভিন্ন উদ্ভাবনী উপাদানের ব্যবহার নিয়ে কাজ করছে।

ঝিনুক, ঝড়ে পড়া কাঠ এবং পুনর্ব্যবহৃত নয় এমন কাঁচের মতো বর্জ্য থেকে তৈরি করা হচ্ছে আকর্ষণীয় সব ডিজাইন।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই পরিবর্তন এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। তবে, বড় ব্র্যান্ডগুলোও এখন এই পরিবর্তনে মনোযোগ দিচ্ছে।

তাই, খুব শীঘ্রই টেকসই উপাদানের ব্যবহার আসবাবপত্র শিল্পে আরও বাড়বে বলে আশা করা যায়।

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এই ধরনের পরিবেশ-বান্ধব ডিজাইন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এখানে প্রচুর পরিমাণে বর্জ্য তৈরি হয়, যা ব্যবস্থাপনার অভাবে পরিবেশ দূষণ ঘটায়।

স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত পাট, বাঁশ এবং অন্যান্য প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহার করে টেকসই আসবাব তৈরি করার সুযোগ রয়েছে।

এর মাধ্যমে একদিকে যেমন পরিবেশ রক্ষা করা সম্ভব, তেমনি স্থানীয় কারিগরদের কর্মসংস্থানও তৈরি হবে।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *