আতঙ্ক! যুক্তরাষ্ট্রের জন্য পরমাণু হুমকি, উত্তর কোরিয়ার গোপন ঘাঁটির সন্ধান!

উত্তর কোরিয়ার সীমান্তে একটি গোপন ক্ষেপণাস্ত্র ঘাঁটি, যা যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ‘সম্ভাব্য পারমাণবিক হুমকি’

উত্তর কোরিয়া তার প্রতিবেশী চীনের কাছাকাছি একটি গোপন ক্ষেপণাস্ত্র ঘাঁটি তৈরি করেছে, যা আগে কখনো প্রকাশ্যে আসেনি। নতুন একটি প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে। ওয়াশিংটন ভিত্তিক গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজ (সিএসআইএস) -এর মতে, এই ঘাঁটিতে আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র (আইসিবিএম) এবং তাদের উৎক্ষেপণ যন্ত্র রাখা হয়েছে, যা যুক্তরাষ্ট্র এবং পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর জন্য একটি “সম্ভাব্য পারমাণবিক হুমকি” তৈরি করতে পারে।

চীনের সীমান্ত থেকে মাত্র ২৭ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই সিনপং-ডং ক্ষেপণাস্ত্র ঘাঁটিতে সম্ভবত নয়টি পারমাণবিক সক্ষম ক্ষেপণাস্ত্র এবং তাদের মোবাইল লঞ্চার রয়েছে। সিএসআইএস-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, উত্তর কোরিয়ার এমন ১৫ থেকে ২০টি ক্ষেপণাস্ত্র ঘাঁটি এবং ওয়ারহেড সংরক্ষণের স্থান রয়েছে, যা তারা আগে কখনো প্রকাশ করেনি। স্যাটেলাইট চিত্র বিশ্লেষণ, উত্তর কোরিয়ার শরণার্থী ও কর্মকর্তাদের সাক্ষাৎকার, গোপন দলিল এবং উন্মুক্ত তথ্যের ভিত্তিতে এই প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে।

প্রতিবেদনে সতর্ক করে বলা হয়েছে, “এই ক্ষেপণাস্ত্রগুলো পূর্ব এশিয়া এবং যুক্তরাষ্ট্রের মূল ভূখণ্ডের জন্য একটি সম্ভাব্য পারমাণবিক হুমকি।”

কিম জং উনের নেতৃত্বে উত্তর কোরিয়া গত কয়েক বছরে তাদের অস্ত্র কর্মসূচি জোরদার করেছে। তারা দ্রুত সামরিক বাহিনীকে আধুনিকীকরণ করছে, নতুন অস্ত্র তৈরি করছে এবং আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালাচ্ছে। এই ক্ষেপণাস্ত্রগুলো যুক্তরাষ্ট্রের যে কোনো স্থানে আঘাত হানতে সক্ষম।

জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও উত্তর কোরিয়া তাদের কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে। এমনকি ইউক্রেন যুদ্ধের পর থেকে তারা রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক আরও গভীর করেছে। ধারণা করা হচ্ছে, রাশিয়া উত্তর কোরিয়াকে সামরিক প্রযুক্তি এবং রসদ সরবরাহ করতে পারে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, এই গোপন ঘাঁটি উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক কর্মসূচির অংশ। ঘাঁটিটি একটি সংকীর্ণ উপত্যকায় অবস্থিত, যা প্রায় ২২ বর্গকিলোমিটার এলাকা জুড়ে বিস্তৃত। এটির অবস্থানগত কারণে যুক্তরাষ্ট্র যদি কোনো আঘাত হানে, তবে তার প্রভাব চীনের ওপরও পড়তে পারে।

সিউল-এর ইওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক লেইফ-এরিক ইজলি বলেছেন, “চীনের কাছাকাছি ঘাঁটি তৈরি করার মাধ্যমে উত্তর কোরিয়া সম্ভবত বেইজিংয়ের প্রতিক্রিয়া নিয়ে রাজনৈতিক ঝুঁকি তৈরি করতে চাইছে, যাতে কোনো আক্রমণের ঘটনা ঘটলে চীনকে হস্তক্ষেপ করতে দ্বিধাগ্রস্ত করে তোলা যায়।”

স্যাটেলাইট চিত্র অনুসারে, ২০০৪ সালে এই ঘাঁটির নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছিল এবং ২০১৪ সাল থেকে এটি চালু রয়েছে। ঘাঁটিটি ভালোভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করা হচ্ছে এবং এর উন্নয়ন কাজও অব্যাহত রয়েছে।

সিএসআইএস গবেষকদের ধারণা, ঘাঁটিতে উত্তর কোরিয়ার তৈরি করা পারমাণবিক সক্ষম হ्‍ওয়াসং-১৫ বা হ्‍ওয়াসং-১৮ আইসিবিএম ক্ষেপণাস্ত্র অথবা অন্য কোনো ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র রাখা হয়েছে।

প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, ঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র বহনকারী এবং মোবাইল লঞ্চারও রয়েছে। যুদ্ধের সময় এই লঞ্চারগুলো ঘাঁটি থেকে বেরিয়ে আসবে এবং পূর্ব-নির্ধারিত স্থান থেকে ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ করবে।

প্রতিবেদনে ঘাঁটির প্রবেশপথ, সদর দপ্তর, গুদামঘর, ক্ষেপণাস্ত্র সহায়তা কেন্দ্র এবং ছোট আকারের আবাসিক ভবনগুলোর স্যাটেলাইট চিত্রও যুক্ত করা হয়েছে। কিছু স্থাপনা গাছের আড়ালে ঢেকে দেওয়া হয়েছে, যা স্যাটেলাইট চিত্র থেকে শনাক্ত করা কঠিন।

সিএসআইএস-এর মতে, এই গোপন ঘাঁটি উত্তর কোরিয়ার “ক্ষেপণাস্ত্র বলয়”-এর একটি অংশ, যা দেশটির “সামরিক কৌশল এবং পারমাণবিক প্রতিরোধ ও আঘাত হানার ক্ষমতা” বাড়ানোর অংশ।

ধারণা করা হয়, উত্তর কোরিয়ার কাছে ৪০ থেকে ৫০টি পারমাণবিক ওয়ারহেড রয়েছে এবং সেগুলো বিভিন্ন স্থানে পৌঁছে দেওয়ার মতো প্রযুক্তিও তাদের হাতে আছে। কিম জং উন সম্প্রতি তার দেশের পারমাণবিক কর্মসূচি জোরদার করার ঘোষণা দিয়েছেন এবং দক্ষিণ কোরিয়া আক্রান্ত হলে, তাকে ধ্বংস করার হুমকিও দিয়েছেন।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *