আফ্রিকার বিশাল তৃণভূমিগুলোতে যাদের অবাধ বিচরণ, সেই জিরাফ প্রজাতি নিয়ে সম্প্রতি এক গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা সামনে এসেছে। আগে মনে করা হতো, আফ্রিকার সব জিরাফ একই প্রজাতির।
কিন্তু নতুন বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণে দেখা গেছে, এদের আসলে চারটি ভিন্ন প্রজাতি রয়েছে। এই আবিষ্কার সংরক্ষণ বিজ্ঞানীদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এর মাধ্যমে প্রতিটি প্রজাতির জন্য আলাদাভাবে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া যাবে।
সম্প্রতি ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অফ নেচার (আইইউসিএন)-এর একটি টাস্ক ফোর্স এই গবেষণাটি সম্পন্ন করেছে। তাদের মতে, জিরাফের এই চারটি প্রজাতি হলো—নর্দার্ন জিরাফ, রেটিকুলেটেড জিরাফ, মাসাই জিরাফ এবং সাউদার্ন জিরাফ।
গবেষণার প্রধান, নামিবিয়ার উইন্ডহুক-এর গবেষক মাইকেল ব্রাউন জানিয়েছেন, গত এক দশকে পাওয়া তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রতিটি প্রজাতির জিরাফের আকার, তাদের বসবাসের স্থান এবং তারা যে ধরনের ঝুঁকির সম্মুখীন হয়, তার ভিন্নতা রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, উত্তর আফ্রিকার জিরাফেরা রাজনৈতিক অস্থিরতা ও চোরা শিকারের শিকার হয়।
অন্যদিকে, কেনিয়া ও তানজানিয়ার মাসাই জিরাফেরা তাদের আবাসস্থল হারাচ্ছে, কারণ তাদের বাসস্থানের তৃণভূমিগুলো গবাদি পশুর চারণভূমি বা চাষের জমিতে পরিণত হচ্ছে।
ডু্ক ইউনিভার্সিটির বাস্তুবিদ স্টুয়ার্ট পিম এই গবেষণাকে সময়োপযোগী এবং সঠিক সিদ্ধান্ত হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, “আগে জিরাফের গায়ের ছাপ দেখে প্রজাতি চিহ্নিত করার চেষ্টা করা হতো।”
কিন্তু নতুন গবেষণায় জিনগত তথ্য এবং মাথার খুলির গঠনসহ বিভিন্ন শারীরিক বৈশিষ্ট্য বিশ্লেষণ করা হয়েছে।
আফ্রিকার জিরাফ নিয়ে গবেষণা করা একটি অলাভজনক সংস্থা, জিরাফ কনজারভেশন ফাউন্ডেশনের স্টেফানি ফেনিসি জানান, গত ২০ বছরে বিজ্ঞানীরা ২,০০০-এর বেশি জিরাফের জিনগত নমুনা সংগ্রহ করেছেন।
আগে একটি জিনোম সিকোয়েন্স করতে কয়েক হাজার ডলার খরচ হতো, কিন্তু প্রযুক্তির উন্নতির ফলে এখন খরচ অনেক কমে এসেছে, যা সংরক্ষণ সংস্থাগুলোর জন্য সুবিধা হয়েছে।
ফাউন্ডেশনের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে সবচেয়ে বিপন্ন প্রজাতি হলো নর্দার্ন জিরাফ। বন্য পরিবেশে এদের সংখ্যা প্রায় ৭,০০০-এর মতো।
স্টেফানি ফেনিসি বলেন, “পৃথিবীর সবচেয়ে হুমকির সম্মুখীন প্রাণীগুলোর মধ্যে জিরাফ অন্যতম।” এছাড়া, সাউদার্ন জিরাফের সংখ্যা প্রায় ৬৯,০০০, রেটিকুলেটেড জিরাফের সংখ্যা ২১,০০০ এবং মাসাই জিরাফের সংখ্যা প্রায় ৪৪,০০০।
ফেনিসি আরও যোগ করেন, “যদি সব জিরাফ একই না হয়, তবে আমাদের তাদের আলাদাভাবে রক্ষা করতে হবে।” বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে এই নতুন গবেষণা নিঃসন্দেহে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস