পোল্যান্ডের একটি ছোট্ট পাহাড়ি গ্রাম কোনিয়াকভের মহিলারা তাঁদের নিপুণ হাতের কাজে তৈরি করা ঐতিহ্যবাহী লেস এখন ফ্যাশন দুনিয়ায় নতুন করে সাড়া ফেলেছে। যুগ যুগ ধরে চলে আসা এই সূক্ষ্ম কারুশিল্প বর্তমানে আন্তর্জাতিক ফ্যাশন বিশ্বে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
পোশাক থেকে শুরু করে বিয়ের কনেদের সাজসজ্জা—সবকিছুতেই যেন এই লেসের একচ্ছত্র আধিপত্য।
কোনিয়াকভের প্রায় ৭০০ জন নারী এই লেস তৈরির কাজের সঙ্গে যুক্ত। এখানকার মহিলারা বংশ পরম্পরায় এই কাজ করে আসছেন।
একসময় যা ছিল শুধু পারিবারিক আয় বাড়ানোর উপায়, তা-ই আজ পরিণত হয়েছে এক অসাধারণ শিল্পকর্মে। এখানকার মহিলাদের তৈরি করা এই লেস এখন বিশ্বজুড়ে ফ্যাশন ডিজাইনারদের কাছে অত্যন্ত মূল্যবান।
ছোটবেলায় উইস্লাভা জুরোজেক নামের এক নারী পরিবারের অন্য নারীদের কাছ থেকে এই সূক্ষ্ম কাজ শিখেছিলেন। এখন তাঁর বয়স ৬৯ বছর।
তিনি জানান, “কোনিয়াকভে প্রায় সব নারীই ‘হেক্লা’ তৈরি করেন, যা আমাদের কাছে একটি আবেগ, আমাদের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ।” এখানকার নারীরা তাঁদের কল্পনাবোধ থেকে প্রকৃতির নানা উপাদান—যেমন ফুল, লতা-পাতা—তুলে ধরেন এই লেসের নকশায়।
প্রতিটি ডিজাইন যেন এক একটি স্বতন্ত্র সৃষ্টি, যা ফ্যাশন হাউসগুলোর কাছে খুবই আকর্ষণীয়।
ঐতিহ্যবাহী এই লেস তৈরির কাজটি মূলত শুরু হয়েছিল মহিলাদের মাথার আচ্ছাদন তৈরি করার জন্য। বিয়ের কনেদের জন্য এই লেসের ফিতা দিয়ে মাথার কেশসজ্জা করা হতো।
সময়ের সাথে সাথে এটি টেবিলের সাজসজ্জা, ন্যাপকিন এবং অন্যান্য অলংকারেও ব্যবহৃত হতে শুরু করে।
বর্তমানে এই লেস দিয়ে তৈরি পোশাকের দাম শুনলে চোখ কপালে ওঠার জোগাড়। একটি সাধারণ ব্লাউজের দাম প্রায় ৭৫,০০০ থেকে ১,০০,০০০ টাকার মতো (বাংলাদেশী মুদ্রায়), যেখানে একটি বিয়ের পোশাকের দাম কয়েক লক্ষ টাকা পর্যন্ত হতে পারে।
আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ফ্যাশন হাউস ক্রিশ্চিয়ান ডিওর, ডলচে ও গাব্বানা, এবং কোমি দে গারসোঁ-এর মতো নামকরা ব্র্যান্ডগুলোও কোনিয়াকভের এই লেসের প্রতি আকৃষ্ট হয়েছে।
প্যারিস ফ্যাশন উইকে-ও এই লেসের তৈরি পোশাক প্রদর্শিত হয়েছে। সাদা বা হালকা রঙের লেসের পাশাপাশি, লাল, কালো, সবুজ—এমন উজ্জ্বল রঙের লেস দিয়ে তৈরি অন্তর্বাসও বেশ জনপ্রিয়।
এই শিল্পের প্রসারে কোনিয়াকভ লেস ফাউন্ডেশন-এর প্রেসিডেন্ট লুসিনা লিগোকা-কোহুটের মতে, “এই গ্রামের নারীরা তাঁদের নিজস্ব কল্পনা থেকে নকশা তৈরি করেন, যা ফ্যাশন দুনিয়ায় নতুনত্ব যোগ করে।” এখানকার নারীদের নিরলস প্রচেষ্টায় তৈরি হওয়া এই লেস শুধু পোল্যান্ডেই নয়, বরং বিশ্বজুড়ে ফ্যাশনপ্রেমীদের মনে জায়গা করে নিয়েছে।
বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী জামদানি ও নকশিকাঁথার মতো, কোনিয়াকভের এই লেসও প্রমাণ করে, হাতে তৈরি শিল্পকর্মের আবেদন আজও অমলিন।
তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস