ফর্মুলার নামে শিশুদের ক্ষতি! আদালতে অভিভাবকদের কড়া পদক্ষেপ

শিরোনাম: ১-৩ বছর বয়সী শিশুদের জন্য ফর্মুলার বাজারজাতকরণ: অভিভাবকদের আইনি পদক্ষেপের পথে

শিশুদের জন্য ফর্মুলা দুধ প্রস্তুতকারক কোম্পানিগুলোর আগ্রাসী বিপণন কৌশল নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে অভিভাবকদের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। বাজারে উপলব্ধ এই ‘টডলার মিল্ক’ বা ১ থেকে ৩ বছর বয়সী শিশুদের জন্য ফর্মুলা দুধ নিয়ে অভিভাবকদের উদ্বেগের কারণ হলো, এর উৎপাদন এবং বাজারজাতকরণে কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই।

সেই কারণে অনেক অভিভাবক তাদের শিশুদের জন্য এই ধরনের ফর্মুলা দুধের ব্যবহার নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন এবং এরই মধ্যে কিছু অভিভাবক এর বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপও নিয়েছেন।

যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসন (এফডিএ)-এর কঠোর নজরদারির অধীনে থাকা শিশুদের ফর্মুলার (infant formula) বিপরীতে, এই ‘টডলার মিল্ক’-এর বাজার এখনো নিয়ন্ত্রণমুক্ত।

চিকিৎসকদের মতে, গরুর দুধ শিশুদের জন্য যথেষ্ট পুষ্টিকর এবং ফর্মুলা দুধের তুলনায় অনেক সস্তা। তা সত্ত্বেও, অনেক মা-বাবা তাদের সন্তানের জন্য এই ব্যয়বহুল পণ্যগুলো কিনছেন, যা তাদের শিশুদের স্বাস্থ্য এবং আর্থিক অবস্থার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, টডলার মিল্ক-এ অতিরিক্ত চিনি মেশানো হয়, যা শিশুদের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। শিশুদের জন্য চিনি গ্রহণের প্রস্তাবিত পরিমাণ শূন্য, তবে গবেষণায় দেখা গেছে, শিশুরা প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৬ চা চামচ চিনি গ্রহণ করে থাকে।

অতিরিক্ত চিনি গ্রহণের কারণে শিশুদের মধ্যে অতিরিক্ত ওজন বৃদ্ধি হতে পারে, যা ভবিষ্যতে স্বাস্থ্য সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।

অভিভাবকদের অভিযোগ, এই ফর্মুলা দুধ প্রস্তুতকারক কোম্পানিগুলো তাদের পণ্যের গুণাগুণ সম্পর্কে ভুল তথ্য দিয়ে বাজারজাত করে। তারা এমন সব উপাদান ব্যবহারের কথা জানায়, যা শিশুদের মস্তিষ্কের বিকাশ এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সহায়ক।

অভিভাবকদের আকৃষ্ট করতে উজ্জ্বল রঙের মোড়ক ব্যবহার করা হয়, যা শিশুদের ফর্মুলার মতোই দেখতে। এর ফলে অনেক সময় মায়েরা তাদের শিশুদের জন্য প্রয়োজনীয় ফর্মুলার পরিবর্তে ভুল করে এই টডলার মিল্ক কিনে ফেলেন।

যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অঞ্চলের অভিভাবকেরা ইতিমধ্যে এই বিষয়ে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন। তারা প্রস্তুতকারক কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে তাদের পণ্যের ভুল বিজ্ঞাপন এবং শিশুদের স্বাস্থ্যের ঝুঁকির অভিযোগ এনেছেন।

মামলাগুলোতে ক্ষতিপূরণ এবং বিজ্ঞাপন পরিবর্তন করার দাবি জানানো হয়েছে।

তবে, প্রস্তুতকারক কোম্পানিগুলো তাদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করেছে। তারা দাবি করছে, তাদের পণ্যগুলো শিশুদের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি সরবরাহ করে এবং তাদের বিপণন প্রক্রিয়া সঠিক।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, টডলার মিল্ক-এর বাজারজাতকরণ নিয়ন্ত্রণে আনা উচিত এবং এর উপাদান ও স্বাস্থ্য ঝুঁকি সম্পর্কে অভিভাবকদের সচেতন করা উচিত। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) নিয়ম অনুযায়ী, শিশুদের ফর্মুলার বাজারজাতকরণে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে, তবে যুক্তরাষ্ট্রে এটি এখনো কার্যকর হয়নি।

যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্য ও মানব পরিষেবা বিভাগ শিশুদের ফর্মুলার নিয়মাবলী পর্যালোচনা শুরু করেছে। বিশেষজ্ঞরা এই বিষয়ে এফডিএ-কে আরও কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

তারা চান, টডলার মিল্ক-এর বিজ্ঞাপন এবং মোড়কীকরণে পরিবর্তন আনা হোক এবং এর উপাদান সম্পর্কে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা হোক।

বাংলাদেশে শিশুদের ফর্মুলা দুধ এবং অন্যান্য খাদ্যপণ্যের বাজার এখনো তেমন নিয়ন্ত্রিত নয়। তাই, অভিভাবকদের সচেতনতা এবং শিশুদের খাদ্য সম্পর্কে সঠিক ধারণা থাকা জরুরি।

শিশুদের জন্য দুধ বা খাদ্য নির্বাচনের ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত এবং পণ্যের উপাদান সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে নেওয়া উচিত।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *